সেমিনারে ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী দুই বছরে গ্যাস সরবরাহ বাড়বে

আগামীতে গ্যাসের সরবরাহ বাড়বে বলে ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করলেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুত্, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী। তিনি বলেন, দেশে চাহিদার তুলনায় গ্যাসের ঘাটতি রয়েছে। এ জন্য আগামী দিনগুলোতে শিল্পোদ্যোক্তাদের গ্যাসের অভাবে নানা প্রতিবন্ধকতায় পড়তে হতে পারে। তবে সরকার বেশ কিছু পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে আগামী দুই বছরের মাথায় গ্যাস সরবরাহ বাড়বে।

গতকাল সোমবার রাজধানীর গুলশানে লেকশোর হোটেলে ‘জ্বালানি দক্ষতা এবং বস্ত্র : অর্থনীতির চালিকাশক্তি’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে বস্ত্র খাতের মালিক সংগঠন বিটিএমএ। সেখানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একাধিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে দুই বছরের মধ্যে গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধির তথ্য জানিয়ে শিল্পোদ্যোক্তাদের আশ্বস্ত করেন ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ম তামিম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান এ আর খান।

ড. ম তামিম বলেন, বর্তমানে গ্যাস সরবরাহে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বিদ্যুত্ থাকলেও অনিশ্চয়তা দূর হয়নি। সরকার ক্যাপটিভে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করবে বলে সতর্ক করেছে। এ রকম পরিস্থিতিতে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতে তিনি সাশ্রয়ী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এ ছাড়া জ্বালানি ব্যবহার দক্ষতা বৃদ্ধি করা, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, অভ্যন্তরীণ জ্বালানি সম্পদ উন্নয়ন এবং আমদানির মাধ্যমে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পরামর্শ দেন। দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতে বাজারভিত্তিক জ্বালানি মূল্য নির্ধারণের গুরুত্ব দিয়ে ড. ম তামিম আরো বলেন, সরকারের জ্বালানি ব্যবসা থেকে চলে যাওয়া উচিত।

সেমিনারে ব্যবসায়ীরা জানান, বস্ত্র খাতের কারখানাগুলোর জ্বালানি ব্যবহার দক্ষতা ক্ষেত্রবিশেষে প্রায় ৮০ শতাংশ। আর তাই খাতের উত্পাদনশীলতা ও ব্যবহার দক্ষতাকে গুরুত্ব দিয়ে জ্বালানি মূল্য নির্ধারণের পরামর্শ দেন তাঁরা। আর গ্যাস বিপণন নীতিমালা নিয়েও বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরেন তাঁরা।

বিইআরসির চেয়ারম্যান এ আর খান বলেন, ‘আইন অনুযায়ী বিইআরসি ভোক্তা স্বার্থেই কাজ করে। যদিও ভোক্তা ও সরকার দুপক্ষই বিইআরসিকে নিয়ে খুশি নয়। মূল্য নির্ধারণ নিয়ে রোষানলে পড়তে হয়। উত্পাদন খরচ কমানো ও দক্ষতার ঘাটতি না থাকায় মূল্যবৃদ্ধি দুরূহ হয়ে পড়ে। শিল্প মালিকরা মূল্যবৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে বললেও আমরা দেখেছি পোশাক খাতের মোট উত্পাদন খরচে বিদ্যুত্ বিল ১ শতাংশের বেশি নয়। আবার বস্ত্র খাতে উত্পাদন খরচে গ্যাস বাবদ ব্যয় ক্ষেত্রবিশেষে ১ শতাংশের কিছু বেশি। আমরা স্বচ্ছভাবেই মূল্য সমন্বয় করে থাকি।’ বিটিএমএর সাবেক সভাপতি জাহাঙ্গীর আলামিন বলেন, বস্ত্র খাতের উত্পাদনে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির যে হিসাব করা হচ্ছে, সেখানে কোনো ভুল থাকতে পারে।

বিদ্যুত্, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, ‘দেশে চাহিদার তুলনায় গ্যাসের ঘাটতি রয়েছে। তার পরও অর্থনীতিকে চলমান রেখেই আমাদের সব কিছু করতে হবে। ভবিষ্যত্ চাহিদা মেটানো এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আপনাদের আশ্বস্ত করার জন্য বলতে চাই, সরকারের বেশ কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মহেশখালীর এলএনজি। এটিসহ সব পরিকল্পনা আগামী তিন থেকে চার বছরে বাস্তবায়ন হবে। আশা করছি আগামী দুই বছরের মধ্যে গ্যাস সরবরাহ বাড়বে।’

ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, ‘ক্যাপটিভে মূল্যবৃদ্ধির ফলে বস্ত্র খাতের সমস্যা হচ্ছে বলে আপনারা মত দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে আপনাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে। বিকল্প ব্যবস্থাও ভাবতে হবে।’

এফবিসিসিআই সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, ‘টেক্সটাইল মিলে আট থেকে ১০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ প্রয়োজন হয়। এর জন্য ডিজেল আমদানি করতে হলে আমরা মরে যাব।’