দরিদ্র মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় ‘স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি’ নামে নতুন একটি প্রকল্প (পাইলট) শুরু করতে যাচ্ছে সরকার। এ প্রকল্পের আওতায় দরিদ্র মানুষেরা জেলা ও উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে ৫০টি রোগের চিকিৎসা বিনামূল্যে পাবেন। এই চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহের জন্য পরিবার প্রতি বছরে ১ হাজার প্রিমিয়াম হিসাবে প্রদান করবে সরকার। আর প্রতি পরিবার বছরে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত চিকিৎসা সুবিধা লাভ করবে। এই কর্মসূচীর অধীনে নির্দিষ্ট সূচক ব্যবহার করে পাইলট এলাকায় দরিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী প্রায় ১ লাখ পরিবার চিহিৃত করা হয়েছে এবং এসব পরিবারকে একটি হেলথ কার্ড প্রদান করা হবে। ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে। প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছে গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি। গতকাল সচিবালয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের উপস্থিতিতে গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সঙ্গে এ সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষর হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষে স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আসাদুল ইসলাম ও গ্রীন ডেল্টা ইন্সুরেন্স কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা চৌধুরী চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য সচিব সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. দীন মো. নুরুল হক প্রমুখ। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি, জটিল ও ব্যয়বহুল রোগের প্রাদুর্ভাব, নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি ইত্যাদি নানা কারণে চিকিৎসা সেবার খরচ বেড়েছে। এতে নিম্নবিত্ত পরিবারের মানুষদের আর্থিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষার নতুন এ উদ্যোগ। এ ছাড়া সর্বজনীন চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার জন্য ‘হেলথ কেয়ার ফাইনান্সিং স্ট্রাটেজি ২০১২-২০৩২’-এ দরিদ্রসীমার নিচে বাসরত জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সুরক্ষার প্রতিশ্রæতিও রয়েছে সরকারের। অনুষ্ঠানে আরো জানানো হয়, প্রাথমিকভাবে এ প্রকল্পটি টাঙ্গাইল জেলার তিনটি উপজেলায় (কালিহাতী, মধুপুর, ঘাটাইল) পাইলট কার্যক্রম শুরু করবে। পরবর্তী সময়ে পাইলট কার্যক্রম থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে কাজের পরিধি বাড়াবে সরকার। পাইলট প্রকল্প চলাকালে এই প্রিমিয়ামের অর্থসহ প্রকল্পের যাবতীয় ব্যয় স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি উন্নয়ন সেক্টরের উন্নয়ন কর্মসূচী হতে সংস্থান করা হবে। পরবর্তীতে সরকারী বরাদ্দ এবং স্বচ্ছল পরিবারের নিকট থেকে প্রিমিয়াম সংগ্রহের মাধ্যমে কর্মসূচীটির অর্থায়ন করা হবে। চিকিৎসা ব্যয়, দরিদ্র নির্বাচন, স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজন ইত্যাদি বিষয়ে কয়েকটি গবেষণা পরিচালনা করে পাইলটের রূপরেখা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিদ্যমান রোগের ধরণ বিশ্লেষণ করে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে চিকিৎসাযোগ্য ৫০টি রোগ চিকিৎসার একটি প্যাকেজ তৈরী করা হয়েছে। প্রত্যেকটি রোগ চিকিৎসার ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে এই চিকিৎসার জন্য বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় ‘ ট্রিটমেন্ট প্রটোকল’ তৈরী করা হয়েছে। হাসপাতালগুলো চিকিৎসা প্রদানের জন্য চিকিৎসা প্রতি এই নির্ধারিত হারে অর্থ লাভ করবে। এই কর্মসূচী পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় ম্যানুয়ালসমূহ প্রস্তুত করা হয়েছে। এই কর্মসূচী বাস্তবায়ন সার্বিকভাবে তত্ত¡াবধানের জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি আন্ত:মন্ত্রণালয় স্টিয়ারিং এবং সচিবের নেতৃত্বে একটি ওয়ার্কিং কমিটি গঠিত হয়েছে। কর্মসূচী বাস্তবায়ন সার্বিকভাবে তত্ত¡াবধানের জন্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটে একটি সেল (এসএসকে সেল) গঠন করা হয়েছে। এস এস কে সেলকে সহায়তার জন্য এবং মাঠ পর্যায়ে এই কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সী নির্বাচন করা হয়েছে। এই এজেন্সীর মূল কাজ হলো চিহিৃত দরিদ্র পরিবারগুলোকে নিবন্ধন, এসএস কার্ড ইস্যু করা, কার্ডধারী রোগীদের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে সাহায্য করা এবং চিকিৎসা পরবর্তী হাসপাতালের অর্থ পরিশোধে সহায়তা করা। ম্যানেজমেন্ট এজেন্সী হিসাবে নির্বাচিত গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীর সঙ্গে রোববার এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। পাইলট প্রকল্পের সফলতা কামনা করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, সারাদেশে সরকারী হাসপাতালগুলোতে বিনামূল্যে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে যাচ্ছে সরকার। স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন ঘটিয়ে দেশে-বিদেশে বেশ সুনাম কুড়িয়েছে বাংলাদেশ। জনবলবৃদ্ধিসহ স্বাস্থ্য সেক্টরের অবকাঠামোর সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন কর্মকাÐ অব্যাহত রয়েছে। বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করে দেশের দরিদ্র মানুষের প্রদানে সর্বদা তৎপর রয়েছে সরকার। তারই ধারাবাহিকতায় দরিদ্র মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় ‘স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি’ নামে নতুন একটি প্রকল্প (পাইলট) যাছাই করতে যাচ্ছে সরকার। নানা প্রতিকূল অবস্থা অতিক্রম করে মধ্যম আয়ের দেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়নের এই গতি থামিয়ে রাখা যাবে না বলে উল্লেখ করেন।