শনিবার রেলপথমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক যুগান্তরকে জানান, জানুয়ারি থেকে ধাপে ধাপে ইন্দোনেশিয়া ও ভারত থেকে আনা ২৭০টি যাত্রীবাহী কোচ রেলওয়ে বহরে যুক্ত হবে। দীর্ঘ ১০ বছর রেলের কোনো নতুন কোনো কোচ আনা হয়নি। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর রেলের উন্নয়নে ব্যাপক প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নতুন কোচগুলো দেশে আনা হবে। একই সঙ্গে নতুন ইঞ্জিনেরও অর্ডার দেয়া হয়েছে। আগামী ২ বছরের মধ্যে নতুন ১২টি ইঞ্জিন রেলবহরে যুক্ত হবে। পদ্মা সেতু রেলরুটে নতুন ট্রেন চালাতে নতুন আরও ৩৫০টি কোচ ও ২০টি ইঞ্জিন কেনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
রেলপথ মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরামর্শ, মন্ত্রণালয় ও রেলপথ বিভাগের সমন্বয়ে নতুন আনা প্রতিটি যাত্রীবাহী কোচ বিদেশের কারখানা থেকেই লাল-সবুজ রঙ করে আনা হচ্ছে। আর দেশে বর্তমানে চলা প্রতিটি ট্রেনই ক্রমান্বয়ে লাল-সবুজ রঙে সাজানো হবে।
মেয়াদোত্তীর্ণ বগি ও ইঞ্জিন দ্বারা ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখা যাচ্ছে না জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিন-বগি দিয়ে ট্রেন চালাতে গিয়ে প্রায়ই চলন্ত অবস্থায় ইঞ্জিন বন্ধসহ বগি দেবে যাচ্ছে। নতুন ইঞ্জিন ও বগি রেলবহরে যুক্ত হলে জরাজীর্ণ ও মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিন ও বগি পরিবর্তন করা হবে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০০৬ সালে কোরিয়া থেকে আনা নতুন যাত্রীবাহী কোচ দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম লাইনে নতুন ট্রেন ‘সুবর্ণ এক্সপ্রেস’ চালু করা হয়। এরপর দেশে আর কোনো নতুন বগি আনা না হলেও ২০০৯ সাল থেকে ২০১৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত বর্তমান সরকার ২৬টি যাত্রীবাহী ট্রেন চালু করেছে। সব কয়টি ট্রেনই পুরনো, মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিন ও বগি মেরামত করে চালু করা হয়। এক্ষেত্রে রেলওয়ের পাহাড়তলী ও সৈয়দপুর কারখানার সংশ্লিষ্ট শ্রমিকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তবে এসব ট্রেন সন্তোষজনক যাত্রীসেবা দিতে পারছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে দেশে লোকাল, আন্তঃনগর, মেইল ও কনটেইনার মিলে মোট ৩৩৩টি ট্রেন চলাচল করছে। এগুলোতে যাত্রীবাহী কোচ রয়েছে ১ হাজার ৪৮৯টি এবং ইঞ্জিন ২০৫টি।
রেলওয়ে প্রকৌশল ও যান্ত্রিক বিভাগ সূত্র জানায়, মেকানিক্যাল কোড অনুযায়ী একটি কোচের ইকোনমিক লাইফ ৩২-৩৫ বছর, আর একটি ইঞ্জিনের ৩৫-৩৭ বছর। সে হিসেবে দেশে যেসব ইঞ্জিন ও যাত্রীবাহী বগি চলাচল করছে তার প্রায় ৮০ শতাংশই মেয়াদোত্তীর্ণ। কোনো কোনো ইঞ্জিন ও যাত্রীবাহী বগির লাইফ ৭০-৭৫ বছরও হয়ে গেছে। এসব বগি ও ইঞ্জিন জোড়াতালি দিয়ে কোনোমতে চালানো হচ্ছে। সিডিউল বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে ট্রাফিক বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ট্রেন মূলত দু’জোড়া করেই চলে। একটি ট্রেন ২টি রেক ও ২টি ইঞ্জিন সমন্বয়ে চলাচল করার কথা। কিন্তু বগি ও ইঞ্জিনের স্বল্পতায় একটি রেক ও একটি ইঞ্জিন দিয়েই বিভিন্ন রুটে ট্রেন চালানো হচ্ছে। ফলে বিভিন্ন সময় সিডিউল বিপর্যয় হচ্ছে। এমন অবস্থায় পুরনো কিংবা বর্তমানে চলাচলরত কোনো ট্রেন দিয়ে পদ্মা সেতু রেলরুটে ট্রেন চালাতে চাচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। এ লাইনে সম্পূর্ণ নতুন ট্রেন চালানো হবে বলে জানিয়েছে রেল মন্ত্রণালয়। রেলওয়ে সচিব ফিরোজ সালাহ-উদ্দিন বলেন, রেলওয়েতে ইঞ্জিন ও যাত্রীবাহী কোচের স্বল্পতা দীর্ঘদিনের। নতুন ইঞ্জিন ও যাত্রীবাহী বগি না আসায় যেমন নতুন ট্রেন চালানো যাচ্ছে না তেমনি অকেজো ইঞ্জিন ও বগিগুলোও পরিবর্তন করা সম্ভব হচ্ছে না। নতুন বগি সরেজমিনে দেখার জন্য ১৮ নভেম্বর তিনিসহ মন্ত্রণালয়ের ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ইন্দোনেশিয়ায় যায় বলে তিনি জানান। রেলওয়ে মহাপরিচালক মো. আমজাদ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ইন্দোনেশিয়ার ‘পিটি ইনকা’ নামক একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ১৫০টি কোচ কেনা হয়েছে। বাকি ১২০টি কোচ ভারত থেকে কেনা হচ্ছে। তিনি বলেন, নতুন আরও ৩৫০টি যাত্রীবাহী কোচ ও ২০টি ইঞ্জিন কেনা হবে। এসব কোচ ও ইঞ্জিন পদ্মা সেতু রেলরুটে চলবে। রেলওয়ে মহাপরিচালক আরও বলেন, নতুন কেনা বগিগুলো দেশে চলমান বগির চেয়ে আরামদায়ক হবে। সিটগুলোও বেশ প্রশস্থ। চেয়ার কোচ, এসি ও কেবিনের বগিগুলোর জানালার গ্লাস চলমান বগির গ্লাসের প্রায় দ্বিগুণ।