বিমান বাহিনীতে ‘কে-এইট ডব্লিউ’ প্রশিক্ষণ বিমান অন্তর্ভুক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তীর আগেই এ বাহিনীকে প্রযুক্তিগত ও কৌশলগতভাবে সুদৃঢ়, শJet-Trainer-K-8W_EDক্তিশালী ও কার্যকর করে গড়ে তোলা হবে।
বিমান বাহিনীর বহরে শিগগিরই নতুন এমআই-১৭১ হেলিকপ্টার, পিটি-৬ বিমান, এলইটি-৪১০ বিমান, এডব্লিউ-ওয়ান থার্টিনাইন (অড-১৩৯) হেলিকপ্টার এবং ইয়াক-১৩০ বিমান যুক্ত হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
বুধবার সকালে কুর্মিটোলায় বিমান বাহিনীর ঘাঁটি বঙ্গবন্ধুতে এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার দৃঢ় বিশ্বাস, উন্নত প্রযুক্তির সরঞ্জামাদি, স্থাপনা এবং এর আধুনিক ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর দক্ষতা ও অপারেশনাল কার্যক্ষমতা আরো বাড়িয়ে দেবে।
সম্পদের সীমাবদ্ধতা থাকার পরও সরকার সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নে কাজ করে যাচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্পদের সীমাবদ্ধতার মধ্যে যতটুকু সহায়তা দেওয়া সম্ভব, আমার সরকার এ ব্যাপারে কোনো কার্পণ্য করেনি, ভবিষ্যতেও করবে না।
বৈমানিকদের উড্ডয়ন ভাতা বৃদ্ধি এবং জীবনবীমার পরিমাণ ‘যথোপযুক্ত’ করা হবে এবং বিমান বাহিনীর সদস্যরা শিগগিরই এর সুফল পাবেন বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু ঘাঁটিতে পৌঁছালে বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল মোহাম্মদ ইনামুল বারী এবং ঘাঁটির অধিনায়ক এয়ার কমোডর এম ওবায়দুল রহমান তাকে স্বাগত জানান।
বিমান বাহিনীর একটি চৌকষ দল শুরুতেই প্রধানমন্ত্রীকে সশস্ত্র সালাম জানায়। এরপর কুচকাওয়াজ অধিনায়ক উইং কমান্ডার মো. শরিফ মোস্তফার হাতে কে-এইট ডব্লিউ প্রশিক্ষণ বিমানের ‘অন্তভুক্তির আদেশনামা’ তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।
সমুদ্র বিজয়কে সুসংহত করার কার্যক্রমে এবং সম্ভাব্য সম্পদের নজরদারির জন্য বিমান বাহিনীর ভূমিকার কথাও প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন।
বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান ও সামরিক কৌশলগত দিক এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের পরিধি ও সম্ভাবনার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বিমান বাহিনীকে আধুনিক, শক্তিশালী ও পেশাদার হিসাবে গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন প্রধানমন্ত্রী।
এর অংশ হিসাবে ১৯৭৩ সালে মিগ-২১ যুদ্ধবিমানসহ পরিবহন বিমান, হেলিকপ্টার, আকাশ প্রতিরক্ষা র্যাডার সংযোজন এবং ২০০০ সালে চতুর্থ প্রজন্মের মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান, সি-১৩০ পরিবহন বিমান সংযোজনের কথাও তিনি মনে করিয়ে দেন।
দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে সামরিক ও বেসামরিক স্থাপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কক্সবাজারে একটি পূর্ণাঙ্গ বিমান ঘাঁটি স্থাপনের কথাও প্রধানমন্ত্রী বলেন।
চীনের তৈরি কে-এইট ডব্লিউ প্রশিক্ষণ বিমান বিমানবাহিনীতে এল-৩৯ বিমানের প্রতিস্থাপক হিসাবে কাজ করবে।
এই বিমান ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৮০০ কিলোমিটার বেগে উড়তে পারে, একনাগারে আকাশে থাকতে পারে চার ঘণ্টা । কে-এইট ডব্লিউ ভূমি থেকে ৩৯ হাজার ফুটেরও বেশি উচ্চতায় উড়তে পারে।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বলেন, বাংলাদেশে এই প্রথম কোনো জেট ট্রেইনার বিমান ১৪০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে চীন থেকে মিয়ানমার হয়ে বাংলাদেশে এসেছে। মাত্র ১০ ঘণ্টার স্বল্প-মেয়াদী প্রশিক্ষণ নিয়ে আমাদের বৈমানিকরা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে এ কাজাটি সম্পন্ন করেছেন।
এই বিমানের অন্তর্ভুক্তি বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণে বাংলাদেশের সক্ষমতাকে বিশ্বমানে নিয়ে যাবে এবং প্রশিক্ষণকে আরো নিরাপদ ও দ্রুততর করবে বলেও প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন।
বিমান বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার বিশ্বাস, নতুন বিমানের জন্য আপনারা নিজেদের যোগ্য বৈমানিক হিসেবে গড়ে তুলবেন। শুধু দেশের মাটিতেই নয়, বিদেশের মাটিতেও আমাদের প্রশিক্ষক বৈমানিকরা প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে তাদের উচ্চতর উড্ডয়ন দক্ষতার স্বাক্ষর রাখবেন।
জনগণের কষ্টার্জিত অর্থের বিনিময়ে কেনা এই কে-এইট ডব্লিউ বিমানের উড্ডয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণে যতœবান হওয়ার কথাও বলেন সরকার প্রধান।
তিনি বলেন, পেশাগত দক্ষতা ও সততার কোনো বিকল্প নেই। তেমনি শৃঙ্খলা ও দেশপ্রেমের কোনো বিকল্প নেই।
কুচকাওয়াজের পর নতুন এই প্রশিক্ষণ বিমানের ফ্লাইপাস্ট অনুষ্ঠিত হয়।
মন্ত্রিসভার সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, নৌবাহিনী প্রধান, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।