বিবিআইএন মোটর মৈত্রী র্যালি সমাপ্ত। আগামী বছরের শুরুতেই চালু হচ্ছে যাত্রীবাহী বাস সার্ভিস। তবে চারদেশের মধ্যে নয়। প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ, ভারত ও ভুটানের মধ্যে চলাচল শুরু হবে বাস ও ব্যক্তিগত গাড়ি। বিবিআইএন মোটর ভেহিকেল অ্যাগ্রিমেন্ট (এমভিএ) চুক্তির আওতায় প্রাথমিকভাবে তিন দেশের মধ্যে বাস চলাচল শুরু হচ্ছে। ২০১৬ সালে প্রথমদিকে বাংলাদেশ, ভারত ও ভুটান এই তিন দেশের মধ্যে বাস সার্ভিস চালুর বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে উভয়দেশ। তবে বিবিআইএন চুক্তিতে নেপাল স্বাক্ষর করলেও অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে আপাদত বিবিআইএন রুটে যুক্ত হচ্ছে না। কিন্তু ভবিষ্যতে বিবিআইএন রুটে নেপালকে যুক্ত করতে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়।
জানা গেছে, টানা ১৯ দিনে সাড়ে চার হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপাল (বিবিআইএন) মৈত্রী র্যালি কলকাতায় গিয়ে শেষ হলো। গতকাল সকালে পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার ঐতিহাসিক প্রিন্সেস ঘাটে র্যালির আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা করলেন ভারতের সড়ক যোগাযোগ, মহাসড়ক ও শিপিং মন্ত্রী নিতীন গাটকারি। সফলভাবে এ র্যালি তিনটি দেশ ঘুরে কলকাতায় পৌঁছানোর জন্য রাইডারদের অভিনন্দন জানান তিনি।
এ সময় ভারতের সড়ক যোগাযোগমন্ত্রী বলেন, ভারত সরকার চার দেশের মধ্যে এ সড়ক যোগাযোগ স্থাপনে আন্তরিক। এরই মধ্যে ১ লাখ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এরই মধ্যদিয়ে শেষ হলো পর্বত, পাহাড়, নদীপথ, জঙ্গল আর সমতল পেরিয়ে আসা ১৯টি দিন। এর মধ্যে ২০টি গাড়ি হয়ে উঠেছিল ২০টি পরিবার। সকালের নাস্তা থেকে শুরু করে মাঝ রাতের খাবার পর্যন্ত ছিল একসঙ্গে। সাঙ্গ হলো মিলনমেলা। সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ সূত্র জানায়, এই মৈত্রী র্যালিতে বাংলাদেশ পক্ষ থেকে ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব নিরোধ চন্দ্র ম-লের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। এর মধ্যে ভারতের ৫৮ জন, ভুটান ও নেপালের ৪ প্রতিনিধি দল অংশ নেয়। চার দেশের মোটর শোভাযাত্রায় ২০টি গাড়িতে গত রোববার ঢাকায় পৌঁছায় ৭২ জন প্রতিনিধি। টানা ১৯ দিনে সাড়ে চার হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপাল (বিবিআইএন) মৈত্রী র্যালি কলকাতায় গিয়ে শেষ হলো। এর আগে র্যালিটি ভুটান, ভারত ও বাংলাদেশের বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতের কলকাতা পেঁৗছায়। কলকাতায় আগামী ৩ ও ৪ ডিসেম্বর চারদেশের কর্মকর্তাদের নিয়ে যাত্রীবাহী, পণ্যবাহী ও ব্যক্তিগত যান চলাচলের বিভিন্ন বিষয় চূড়ান্ত করতে একটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে। কর্মশালায় যানবাহন ট্র্যাকিং সিস্টেমসহ অন্যান্য বিষয় চূড়ান্ত করার আলোচনা হবে। তাই ডিসেম্বরের মধ্যে সদস্য দেশগুলোর প্রস্তুতি সম্পন্ন হলে আগামী বছরের শুরতেই যান চলাচল শুরু হবে। তবে প্রাথমিকভাবে তিন দেশের মধ্যে যাত্রীবাহী বাস সার্ভিস শুরু সম্ভাবনা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানায়।
এ ব্যাপারে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এমএএন ছিদ্দিক সংবাদকে বলেন, বিবিআইএন’র মোটর মৈত্রী র্যালি শেষ হয়েছে। এবার যান চলাচলের অন্যান্য বিষয় চূড়ান্ত করা হবে। এ জন্য চার দেশের কর্মকর্তাদের নিয়ে কলকাতায় বৈঠক করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ থেকে ছয়টি রুটে যান চলাচলের বিষয় প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এছাড়া চার দেশের মধ্যে যান চলাচলের বিষয় বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপাল চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। কিন্তু বাংলাদেশ ও ভারত পক্ষ থেকে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু ভুটান ও নেপাল এখনও প্রস্তুতি শেষ করেনি। এর মধ্যে ভুটান ছোট দেশ সেজন্য তাদের বিষয়টি সংসদে অনুমতি প্রয়োজন হয়। আশা করছি ভুটানের বিষয়টি সংসদ অনুমতি পাওয়া যাবে। তবে নেপালের ক্ষেত্রে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার কারণে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে আলোচনার মাধ্যমে এটা সমাধানে চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু যদি নেপালের বিষয়টি দেরি হয় তাহলে বাংলাদেশ, ভারত ও ভুটানের মধ্যে প্রাথমিকভাবে যান চলাচল শুরু প্রক্রিয়ার বিষয়ও আলোচনা চলছে। তবে চার দেশের মধ্যে ব্যক্তিগত, যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল শুরু হবে এটাই আমরা চাই।
জানা গেছে, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বেসরকারি বাস কোম্পানি গ্রিন লাইন পরিবহনকে চার দেশের মধ্যে বাস সার্ভিস পরিচালনা দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে। তবে চার দেশের মধ্যে পণ্যবাহী যান চলাচলের বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত হয়নি। প্রাথমিকভাবে গত ১ নভেম্বর থেকে চার দেশের মধ্যে পণ্যবাহী পরিবহনের ট্রায়াল রান শেষ করা হয়েছে। তাই ট্রায়াল শেষে পণ্যবাহী যানবাহনের জন্য প্রটোকল চুক্তির পর পণ্যবাহী যানবাহন সার্ভিস শুরু বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ সূত্র জানায়।
–