প্রতিবন্ধীদের নিয়ে বর্তমান সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ ও অর্জনইতোমধ্যে সরকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সুরক্ষা নিশ্চিতকল্পে “প্রতিবন্ধী ব্যক্তি অধিকার ও সুরক্ষা আইন-২০১৩” প্রণয়ন করেছে; যার যথাযথ বাস্তব প্রয়োগের মাধ্যমে প্রতিবন্ধীদের চিকিৎসা, শিক্ষা, কর্মসংস্থানসহ সমাজের মূলধারায় তাদের ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সুরক্ষা নিশ্চিত হবে।ঈশ্বর চন্দ্র দাস প্রত্যেক মানুষেরই জন্মগতভাবে আত্মমর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকার আছে। অটিস্টিকসহ সমাজের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরাও এ মর্যাদা ভোগের সমান অধিকার রাখেন। এজন্য আমাদের সংবিধানে সব নাগরিকের সমানাধিকার, মানবসত্তার মর্যাদা, মৌলিক মানবাধিকার ও সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। তাই প্রতিবন্ধীদের অবহেলা নয় বরং বন্ধুত্বপূর্ণ ও আন্তরিকভাবে সহায়ক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তাদের দুঃখকষ্টে সমব্যথী হয়ে উন্নয়নের জন্য এগিয়ে আসতে হবে। সমাজের সবধরনের মানুষের উন্নয়ন ব্যতীত একটি দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাইতো নিজের কেনো দোষ না থাকলেও সীমাবদ্ধতা যাদের নিত্য সঙ্গী সেসব প্রতিবন্ধী মানুষের কল্যাণে সরকারের পাশাপাশি পরিবার, সমাজ তথা উন্নয়ন সহযোগী বেসরকারি সংস্থা ও উদ্যোক্তাদের সম্মিলিত প্রয়াস একান্ত অপরিহার্য। তবেই তারা জাতীয় জীবনে সমাজের মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে দেশের উন্নয়ন অংশীদারিত্বে অংশগ্রহণ করতে পারবে।
আজ সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে দেশে পালিত হতে যাচ্ছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস-২০১৫। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ, ইন্দ্রিয়গত ক্ষতিগ্রস্ততা এবং প্রতিকূলতা বিবেচনায় প্রতিবন্ধিতার ধরনসমূহ অটিজম বা অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার, শারীরিক প্রতিবন্ধিতা, মানসিক অসুস্থতাজনিত প্রতিবন্ধিতা, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধিতা, বাকপ্রতিবন্ধিতা, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধিতা, শ্রবণপ্রতিবন্ধিতা, শ্রবণ-দৃষ্টিপ্রতিবন্ধিতা, সেরিব্রাল পালসি, ডাউন সিনড্রোম, বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধিতা এবং অন্যান্য প্রতিবন্ধিতা। স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে অটিজম কী? অটিজম হচ্ছে শিশুদের মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বিকাশের একপ্রকার প্রতিবন্ধকতা, যা সাধারণত শিশুর জন্মের তিনবছরের মধ্যে প্রকাশ পেয়ে থাকে। অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ, সামাজিক আচরণ, সামাজিক কল্পনা ইত্যাদি ক্ষেত্রসমূহে বেশ সমস্যা লক্ষ করা যায়। সাম্প্রতিককালে বিশেষজ্ঞরা অটিজমকে অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার বলে আখ্যায়িত করেছেন। অটিজমের কারণ এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা সম্ভব না হলেও অনেকে মনে করেন মস্তিষ্কে কিছু কোষের অস্বাভাবিক রাসায়নিক ক্রিয়াকলাপ কিংবা মস্তিষ্ক কোষের অস্বাভাবিক গঠন এর জন্য দায়ী। আবার অনেকে মনে করেন, বংশগত কারণে এরূপ অস্বাভাবিকতার সৃষ্টি হয়ে থাকে। অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার নামক অদৃশ্য প্রতিবন্ধিতা প্রতিরোধের জন্য সামাজিক সচেতনতাসহ সর্বাগ্রে প্রয়োজন একে দ্রুত শনাক্ত করা, আক্রান্ত ব্যক্তি ও শিশুকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী উপযুক্ত নার্সিংয়ের ব্যবস্থা করা এবং সঠিক শিক্ষা কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা। প্রকাশ থাকে যে, অটিজম সম্পর্কে দেশে এক নবদিগন্তের সূচনা হয়েছে মূলত মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কন্যা ও ন্যাশনাল অ্যাডভাইজারি কমিটি, গ্লোবাল অটিজম পাবলিক হেলথ (জিওপিএইচ) বাংলাদেশের চেয়ারপার্সন মিসেস সায়মা হোসেনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ২০১১ সালের জুলাই মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছে “অঁঃরংস ংঢ়বপঃৎঁস উরংড়ৎফবৎং ধহফ উবাবষড়ঢ়সবহঃধষ উরংধনরষরঃরবং রং ইধহমষধফবংয ধহফ ঝড়ঁঃয অংরধ” শীর্ষক আন্তর্জাতিক সেমিনারের মধ্য দিয়ে।
সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে সরকার গঠনের পর ২০০৯-২০১০ অর্থবছর হতেই প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সেবা ও সহায়তার জন্য সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে বর্তমানে ৬৪টি জেলা সদর ও উপজেলায় ১০৩টি স্থানে বিনামূল্যে সেবা দানের লক্ষ্যে প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র চালু করেছেন। আরো কয়েকটি উপজেলায় চালুকরণ প্রক্রিয়াধীন। কমপক্ষে প্রতিটি উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র চালুকরণসহ দেশের প্রতিটি হাসপাতালে ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রে একটি ‘প্রতিবন্ধী সেবা বিভাগ’ চালুকরণ সাপেক্ষে চিকিৎসা সেবা দেয়া যেতে পারে। ইতোমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনকে একটি পূর্ণাঙ্গ অধিদপ্তরে রূপান্তরকরণ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন আছে। এটির দ্রুত বাস্তবায়ন করে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের সেবাদানকারী সব প্রতিষ্ঠানকে এর আওতায় এনে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন করত দেশের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব।
বর্তমানে দেশের ১০৩টি স্থানের ‘প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রের প্রত্যেকটিতে দায়িত্বপালনরত প্রতিবন্ধীবিষয়ক কর্মকর্তা, কনসালট্যান্ট (ফিজিওথেরাপি), ক্লিনিক্যাল ফিজিও থেরাপিস্ট, ক্লিনিক্যাল আকুপেশনাল থেরাপিস্ট, ক্লিনিক্যাল স্পিচ অ্যান্ড লেঙ্গুয়েজ থেরাপিস্ট, থেরাপি সহকারী, টেকনিশিয়ান-১ (অডিও মেট্রিশিয়ান); টেকনিশিয়ান-২ (অপটোমেট্রিশিয়ান), অফিস সহকারী, স্টাফ ও গার্ডের মাধ্যমে বিনামূল্যে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবর্গকে চিকিৎসা ও পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় সমাজের মূলধারায় ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে। প্রতিটি কেন্দ্রে দায়িত্বপালনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিনামূল্যে প্রতিবন্ধিতার ধরন নির্ণয় এবং সমস্যার সমাধানে ফিজিওথেরাপি, অকুপেশনাল থেরাপি, স্পিচ ও ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি, অটিজম কর্নার সেবা, পক্ষাঘাতগ্রস্তদের সেবা, কাউন্সিলিং, স্ট্রোক-প্যারালাইসিস, ফ্রোজেন সোল্ডার, বাত-ব্যথা, স্পান্ডালাইটিস, আর্থ্রাইটিস, স্পোর্টস ও আঘাতজনিত সমস্যা, সহায়ক উপকরণ বিতরণসহ জনসচেতনতা সৃষ্টির কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। প্রয়োজন প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রগুলোতে আরও অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সংযোজন। এতদ্ব্যতীত ২০০৯-২০১০ অর্থবছর হতে বর্তমান সরকারের আমলে চালুকৃত প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রের মাধ্যমে গত পাঁচ বছরে কয়েক লাখ প্রতিবন্ধী এবং প্রতিবন্ধিতার ঝুঁকি থাকা ব্যক্তিরা সেবা নিয়েছেন, যাদের অনেকে স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন। দুর্দশা ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি মিলেছে অনেক পরিবারের। ফলে তারা আজ সমাজের মূলধারার সঙ্গে একীভূত হয়ে কাজ করছে। এজন্য লাখ লাখ প্রতিবন্ধী ও প্রতিবন্ধী পরিবারের অভিভাবকদের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানাই বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সমাজকল্যাণমন্ত্রী, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও সমাজসেবা বিভাগ, জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন এবং প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে।
প্রসঙ্গত, পিরোজপুরের জেলা পরিষদ সংলগ্ন কবি আহসান হাবীব সড়কে অবস্থিত ‘প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র’ থেকে আমার প্রতিবন্ধী শিশুপুত্রের সেবা নিয়েও উপকৃত হচ্ছি; যা স্মরণীয়_ এজন্য যে, আমি পুত্র সন্তানকে নিয়ে এর অগে ঢাকার সাভারে অবস্থিত ‘সিআরপি’ থেকে সেবা নিতাম। জানা যায়_ প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র পিরোজপুরের প্রতিবন্ধীবিষয়ক কর্মকর্তা প্রিয়ংবদা ভট্টাচার্য, কনসালট্যান্ট (ফিজিওথেরাপি) ডা. সংগ্রাম কান্তি কু-ুসহ কেন্দ্রের অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিরলস প্রচেষ্টায় অক্টোবর ২০১৫ পর্যন্ত বিনামূল্যে চৌদ্দ সহস্রাধিক প্রতিবন্ধী সেবাসহ ১৮৩টি হুইল টেয়ার, ৫টি ট্রাইসাইকেল, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য সাদাছড়ি, শ্রবণপ্রতিবন্ধীদের জন্য হিয়ারিং এইড ও স্ক্র্যাচ বিতরণ করা হয়। ইতোমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পৃষ্ঠপোষকতায় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে নিজস্ব অঙ্গনে অটিজম রিসোর্স সেন্টারে নিয়মিত সেবা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এমনকি অটিজম শিশুদের খেলাধুলার জন্য অটিজম রিসোর্স সেন্টারের আঙ্গিনায় সরকারি বরাদ্দে উঠেছে একটি বিনোদন পার্ক। এ প্রসঙ্গে বলা যায়, প্রাথমিক পর্যায়ে কমপক্ষে জেলা সদরের কেন্দ্রগুলোতে পরবর্তীতে উপজেলা সদরে প্রতিবন্ধীদের জন্য বিনোদন পার্ক প্রতিষ্ঠা করা একান্ত অপরিহার্য।
সরকার মূলত সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে অটিজম সচেতনতাবিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি, প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র শীর্ষক কর্মসূচি, ভ্রাম্যমাণ ওয়ান স্টপ থেরাপি সার্ভিস, প্রতিবন্ধিতা শনাক্তকরণ কার্যক্রম, কর্মজীবী প্রতিবন্ধী হোস্টেল; ঋণ ও অনুদান কর্মসূচি; জাতীয় বিশেষ শিক্ষা কেন্দ্র; চিড়িয়াখানা পরিদর্শনের জন্য প্রবেশ ফি সম্পূর্ণ মওকুফ (মৎস্য ও প্রাণী) সম্পদ মন্ত্রণালয়; বিসিএস ক্যাডার সার্ভিস এবং অন্যান্য প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে ১% কোটা সংরক্ষণ; প্রতিভাবান প্রতিবন্ধী শিল্পীদের সমন্বয়ে অর্কেস্ট্রা দলগঠন; প্রতিবন্ধিতা সম্পর্কিত সমন্বিত বিশেষ শিক্ষা নীতিমালা-২০০৯-এর আওতায় সুইড বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন পরিচালিত ৭টি ইনক্লুসিভ স্কুলের মোট ৫১৭ জন শিক্ষক-কর্মচারীর ১০০% বেতনভাতা ফেব্রুয়ারি ২০১০ মাস থেকে সরকারিভাবে পরিশোধ করা হচ্ছে ও প্রতিবন্ধী উন্নয়ন অধিদপ্তর গঠন প্রক্রিয়াধীন; প্রতিবন্ধী কমপ্লেক্স নির্মাণ; প্রতিবন্ধী ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন আছে। উল্লেখ্য, ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীর সংখ্যা ৪ লাখ থেকে ৬ লাখ, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির সংখ্যা ৫০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৬০ হাজারে উন্নীতকরণসহ মাসিক ভাতার পরিমাণ বৃদ্ধির ঘোষণা দেন মাননীয় অর্থমন্ত্রী, যা অপ্রতুল।
সরকারের নানামুখী কর্মসূচির পাশাপাশি উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান জাতীয় প্রতিবন্ধী ফোরাম; সিআরপি; সিডিডি; গণস্বাস্থ্য; এসএসআইডি ইত্যাদি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রতিবন্ধীদের সেবামূলক কার্যক্রম দীর্ঘদিন ধরে চালিয়ে আসছেন, যা অবিস্মরণীয় তাদের কৃতিত্ব ও কোনো অংশে কম নয়। এছাড়া প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার উন্নয়নের ক্ষেত্রে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের স্কাউট জাম্বুরিতে অংশগ্রহণ, টুয়েন্টি টুয়েন্টি ক্লাইভ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আয়োজন, বিভাগীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজনসহ ইত্যাদি কাজেও তাদের উৎসাহিত করেন। ফলশ্রুতিতে প্রতিবন্ধী খেলোয়াড়গণ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ পদকসহ ফুটবল, ক্রিকেট খেলায় চ্যাম্পিয়ন, রানার্স আপ-এর মতো কৃতিত্ব অর্জন করেছেন। এমনকি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী শিল্পীরা ছবি অঙ্কন করেও পুরস্কৃত হয়েছেন। আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটির সঙ্গে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বিসিবি যৌথভাবে শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্রিকেটারদের নিয়ে আয়োজন করেছিল ৫ জাতীয় আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট, যেখানে বাংলাদেশি টাইগাররা সাফল্যের পরিচয় দিয়েছে।
ইতোমধ্যে সরকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সুরক্ষা নিশ্চিতকল্পে “প্রতিবন্ধী ব্যক্তি অধিকার ও সুরক্ষা আইন-২০১৩” প্রণয়ন করেছে; যার যথাযথ বাস্তব প্রয়োগের মাধ্যমে প্রতিবন্ধীদের চিকিৎসা, শিক্ষা, কর্মসংস্থানসহ সমাজের মূলধারায় তাদের ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সুরক্ষা নিশ্চিত হবে।
পরিশেষে বলা যায়, একজন সেরিব্রাল পালসি আক্রান্ত শিশুর অভিভাবক হিসেবে প্রতিবন্ধীবান্ধব সরকারের মননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার আবেদন প্রতিবন্ধীদের জীবনমান উন্নয়নসহ সমাজের মূলধারায় আনার লক্ষ্যে সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনকে প্রতিবন্ধী উন্নয়ন অধিদপ্তরের দ্রুত রূপান্তরকরণ শেষে ইউনিয়ন পর্যন্ত “প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র চালুকরণসহ অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে চিকিৎসা, শিক্ষা, কর্মসংস্থানসহ তাদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিতকরণের বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করা, যাতে পর্যায়ক্রমে দীর্ঘকাল অবহেলিত ও সুবিধাবঞ্চিত অটিস্টিক এবং প্রতিবন্ধীদের আজীবন পরিচর্যার ব্যবস্থা রাষ্ট্র গ্রহণ করতে পারে। কেননা বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার সংক্রান্ত জাতিসংঘ সনদ অনুসমর্থন করেছে। তদুপরি প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে সরকারের নানামুখী কর্মসূচির পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগসহ পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রের সমন্বিত প্রচেষ্টা অনস্বীকার্য।