ব্যাকটেরিয়ামুক্ত পানের সক্ষমতা অর্জন ইউরোপে পান রপ্তানি জুলাইয়ে

বাংলাদেশ থেকে আবারও পান আমদানি শুরু করবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চাষিদের মাধ্যমে বাংলাদেশ ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ‘স্যালমোনেলা’মুক্ত পান রপ্তানির সক্ষমতা অর্জন করায় নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ করে আগামী বছরের জুলাই থেকে আবারও পান নেওয়া শুরু করবে ইউরোপের ২৮টি দেশ। ব্রাসেলসে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসকে এ খবর দিয়েছেন ইউরোপীয় কমিশনের মহাপরিচালক স্টিফেন আন্দ্রে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. শওকত আলী ওয়ারেছী গতকাল বুধবার কালের কণ্ঠকে বলেন, পানে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া স্যালমোনেলার অস্তিত্ব পাওয়ায় গত বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ থেকে পান আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। পরে সেই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ ২০১৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এরই মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের শর্ত অনুযায়ী, কৃষি মন্ত্রণালয় পানচাষি ও রপ্তানিকারকদের নিবন্ধন করে প্রশিক্ষণ দিয়েছে, যারা এখন ইইউয়ের মানদণ্ড মেনে পান উৎপাদন করছে। এ প্রেক্ষিতে ইইউ সিদ্ধান্ত নিয়েছে আগামী বছরের জুলাই থেকে আবারও বাংলাদেশ থেকে পান আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

জার্মানির ব্রাসেলসে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের মিনিস্টার (কমার্স) তপন কান্তি ঘোষকে লেখা এক ই-মেইল বার্তায় ইউরোপীয় কমিশনের মহাপরিচালক স্টিফেন আন্দ্রে বলেছেন, বাংলাদেশ ক্ষতিকর স্যালমোনেলা ব্যাকটেরিয়ামুক্ত পান রপ্তানিতে সক্ষম হলে আগামী জুলাই থেকে ইউরোপ সে পান আমদানি করবে। এ ক্ষেত্রে পানের প্রতিটি চালান বাংলাদেশ পরীক্ষা করে মান সনদ দেবে। ইউরোপে রপ্তানি করা সেসব পান থেকে নমুন সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে দেখবে ইইউ। সে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে বাংলাদেশ থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিয়মিতভাবে পান আমদানি করবে।

স্টিফেন আন্দ্রের ই-মেইল বার্তার পরিপ্রেক্ষিতে তপন কান্তি ঘোষ সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) মহাপরিচালকের কাছে চিঠি লিখেছেন। তিনি বলেন, ইউরোপের শর্ত অনুযায়ী স্যালমোনেলামুক্ত পান উৎপাদনে বাংলাদেশ সক্ষম হলেও নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ পার না হওয়া পর্যন্ত তা রপ্তানি চালু করা যাচ্ছে না। দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে ইইউ আগামী জুলাই মাস থেকে বাংলাদেশের পান আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে পান উৎপাদন ও রপ্তানির ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেওয়া কর্মপরিকল্পনা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না, তা পর্যবেক্ষণে রেখেছে তারা। তাই স্যালমোনেলামুক্ত পান উৎপাদনপ্রক্রিয়া কঠোর নজরদারির মধ্যে রাখা দরকার। এ বিষয়ে ইউরোপীয় কমিশন শিগগিরই ঢাকার কৃষি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি লিখবে বলে জানিয়েছেন তপন কান্তি ঘোষ।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, স্যালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমিত পান খেলে ডায়রিয়া ও বমির আশঙ্কা থাকে। এই ব্যাকটেরিয়ার প্রভাবে গ্যাস্ট্রিক ও আলসারের মতো রোগও হতে পারে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া পানের অর্ধেকই যায় মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। মোট রপ্তানির ৪৫ শতাংশ যায় ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে। বাকি ৫ শতাংশ অন্যান্য দেশে রপ্তানি হয়। ২০১১ সাল থেকে বাংলাদেশি পানের কয়েকটি চালানে স্যালমোনেলা ব্যাকটেরিয়ার অস্তিত্ব পায় যুক্তরাজ্য। ইইউভুক্ত অন্য কয়েকটি দেশেও পানের চালানে এই ব্যাকটেরিয়ার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এরই প্রেক্ষিতেই বাংলাদেশ থেকে পান আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে ইইউ। কিন্তু রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার পরও ইউরোপের দেশগুলোতে অন্তত ৯টি পানের চালান যাওয়ার প্রমাণ পায় ইইউর সংস্থা আরএএসএফএফ। এসব কারণেই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।

পানের জন্য আলাদা কোনো এইচএস কোড নেই। পান রপ্তানি হয় ফুল ও পাতা (কাট ফ্লাওয়ার অ্যান্ড ফলিয়েজ) বিভাগের আওতায়। রপ্তানিকারকরা বলছেন, ফুল ও পাতার আওতায় যত পণ্য রপ্তানি হয় এর ৯০ শতাংশই হচ্ছে পান। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবির) তথ্য অনুযায়ী, ইইউতে রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার পর পান রপ্তানি কমে গেছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ফুল ও পাতার আওতায় পণ্য রপ্তানি হয়েছে তিন কোটি ৯৩ লাখ ডলারের। এর আগে ২০১২-১৩ অর্থবছরে চার কোটি ১৪ লাখ, ২০১১-১২ অর্থবছরে পাঁচ কোটি চার লাখ, ২০১০-১১ অর্থবছরে চার কোটি ২৮ লাখ এবং ২০০৯-১০ অর্থবছরে তিন কোটি ৯৮ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে।