এক ছাদের নিচে সব রোগের চিকিৎসা

ঢাকায় স্থাপিত হচ্ছে ৭০০ শয্যার মাল্টি ডিসিপ্লিনারি সুপার স্পেশালিটি হসপিটাল। শাহবাগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উত্তর পাশে ১২ বিঘা জমির ওপর নির্মিত হচ্ছে এই বিশেষায়িত হাসপাতাল। ১৩ তলাবিশিষ্ট দেশের প্রথম সেন্টার বেইজড এই হাসপাতালে সব ধরনের চিকিৎসাসেবা মিলবে।

অত্যাধুনিক চিকিৎসা সুবিধাসংবলিত হাসপাতালটি নির্মাণে সময় লাগবে প্রায় চার বছর। মোট ব্যয় হবে এক হাজার ৩০৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে সহজ শর্তে এক হাজার কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে কোরিয়া সরকার। গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সরকারের ইকোনমিক রিলেশন ডিপার্টমেন্টের (ইআরডি) পরিচালনায় ঋণের প্রক্রিয়াসংক্রান্ত চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, বিশেষায়িত এই হাসপাতালে পৃথক ছয়টি সেন্টার থাকবে। কার্ডিওভাসকুলার সেন্টারে মিলবে হৃদরোগ সম্পর্কিত সব চিকিৎসা। গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি অ্যান্ড হেপাটোবিলিয়ারি সেন্টারে লিভার ট্রান্সপ্লান্টসহ সব ধরনের লিভার রোগের উন্নত চিকিৎসা দেওয়া হবে। উইমেন অ্যান্ড চিলড্রেন সেন্টারে থাকবে মা ও শিশুর সব রোগের চিকিৎসার ব্যবস্থা। নেফ্রোলজি অ্যান্ড ইউরোলজি সেন্টারে কিডনি ও মূত্রসংক্রান্ত চিকিৎসার পাশাপাশি কিডনি সংযোজন হবে। আরো থাকবে রেডিওলোজি অ্যান্ড ইমেজিং সেন্টার, ২৪ ঘণ্টা অ্যাকসিডেন্ট অ্যান্ড ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল সেন্টার প্রভৃতি। এ ছাড়া ল্যাবরেটরি সায়েন্স, প্যাথলজি, নার্সিংসহ বিভিন্ন বিভাগ থাকবে। অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার (ওটি) থাকবে ১৬টি। আধুনিক যন্ত্রপাতিসহ একটি পূর্ণাঙ্গ গবেষণাকেন্দ্রও থাকবে হাসপাতালটিতে।

বাংলাদেশি চিকিৎসকরাই এ হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দেবেন। বেশির ভাগ শিক্ষক ও চিকিৎসক হবেন বিএসএমএমইউর। তবে ৪০০ নার্সসহ প্রায় ৯০০ লোক নতুন করে নিয়োগ হবে। কোরিয়ান বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। দেশেও কিছু প্রশিক্ষণ হবে।

জানা গেছে, হাসপাতালটি নির্মাণে কোরিয়া সরকারের ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফান্ড (ইডিসিএফ) এক হাজার কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে। এই ঋণের সুদের হার মাত্র দশমিক ০১৫ শতাংশ, যা ১৫ বছরে সহজ শর্তে পরিশোধের সুযোগ থাকছে। বিলটি একনেক সভায় পাস হলেই পুরোদমে হাসপাতালটির নির্মাণকাজ শুরু হবে।

জানা গেছে, পুরো প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তৈরি করা প্রজেক্ট প্রোফাইলও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে জমা হয়েছে। এখন কনসালট্যান্ট নিয়োগের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে। এর জন্য ছয়টি ফার্ম দরখাস্ত করেছে। যাচাই-বাছাই শেষে শিগগিরই কনসালট্যান্ট নিয়োগ করা হবে। পুরো কাজের দেখভাল করবে কোরিয়া সরকার, যা শেষ হতে সময় লাগবে সাড়ে তিন থেকে চার বছর। এরপর কোরিয়া সরকার বাংলাদেশ সরকারের কাছে হাসপাতালটি হস্তান্তর করবে।

বিএসএমএমইউর সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান ও প্রস্তাবিত হাসপাতালটির প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ডা. জুলফিকার রহমান খান জানান, দেশে এটাই প্রথম সেন্টার বেইজড স্বয়ংসম্পূর্ণ হাসপাতাল হতে যাচ্ছে। এখানে রোগী ভর্তি হলে তাকে অন্য কোনো হাসপাতালে ছোটাছুটি করতে হবে না। হাসপাতালের ভেতর পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ সব চিকিৎসা হবে। থাকবে সব ধরনের কেবিন, জেনারেল বেড ও ভিআইপি স্যুট। আর হাসপাতালটি পরিচালিত হবে বিএসএমএমইউর নীতিমালায়, যাতে ধনী-গরিবসহ সব ধরনের রোগী বিশেষায়িত সেবা পেতে পারেন।