এবার সরকারের রেকর্ড পরিমাণ খাদ্য মজুদ গড়ে উঠেছে। চাল ও গম মিলিয়ে এই মজুদের পরিমাণ অক্টোবর মাসের শেষে ১৬ লাখ ৪১ হাজার মেট্রিক টন ছাড়িয়েছিল। বর্তমানে মজুদ রয়েছে ১৬ লাখ ৯ হাজার ৬৩৮ মেট্রিক টন, যা খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ে সরকারকে আরও স্বস্তিজনক অবস্থায় নিয়ে এসেছে। এ বিষয়ে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা দেশের ১৬ কোটি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাই। এ লক্ষ্যে খাদ্য মজুদের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। এটি সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নেরও একটি প্রতিফলন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সব মিলিয়ে বর্তমানে খাদ্য মজুদের পরিমাণ ১৬ লাখ ৯ হাজার ৬৩৮ মেট্রিক টন। এরমধ্যে গুদামে চাল রয়েছে ১২ লাখ ৬৭ হাজার ৬২৫ মেট্রিক টন। আর গম মজুদের পরিমাণ ৩ লাখ ৪২ হাজার ১৩ মেট্রিক টন। খাদ্য মজুদের এই পরিমাণ বাংলাদেশের ইতিহাসে নতুন রেকর্ড। এর আগে সর্বোচ্চ মজুদ ছিল ১৫ লাখ ৮২ হাজার মেট্রিক টন। প্রতিটি গুদাম প্রায় পূর্ণ। গত বছরের তুলনায় এখন মজুদ তিন লাখ টনেরও বেশি। ২০১৩ সালের এই মজুদ ছিল তখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রেকর্ড। এই রেকর্ড ভেঙ্গে মজুদে এবার নতুন রেকর্ড তৈরি হয়েছে। এ প্রসঙ্গে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, দেশে খাদ্য পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে মজুদ বাড়ানো হয়েছে। এবার বোরো সংগ্রহ অভিযানের লক্ষ্যমাত্র শতভাগ পূরণের লক্ষ্যে দুই দফা সময় বাড়ানো হয়েছে।
এবার বোরে মৌসুমে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে খাদ্য সংগ্রহ করা হয়েছে প্রায় ১১ লাখ মেট্রিক টন। এরমধ্যে সিদ্ধ চাল সংগ্রহ করা হয়েছে ৯ লাখ ৩৭ হাজার ৯৮৭ মেট্রিক টন। আর আতপ চাল সংগ্রহ করা হয় ১ লাখ ৪৯ হাজার ৫৬১ মেট্রিক টন।
বিগত ১ মে থেকে শুরু হয় বোরো সংগ্রহ অভিযান। এবার সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয় মোট ১১ লাখ মেট্রিক টন। এরমধ্যে সিদ্ধ চাল সাড়ে ৯ লাখ মেট্রিক টন এবং আতপ চাল দেড় লাখ মেট্রিক টন। প্রতি কেজি সিদ্ধ চালের সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৩২ টাকা এবং প্রতি কেজি আতপ চালের সংগ্রহ মূল্য ৩১ টাকা করে। এ কার্যক্রম চলে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত। ১ মে থেকে সংগ্রহ অভিযান শুরু করে প্রথম পর্যায়ে সংগ্রহ অভিযানের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয় ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। কিন্তু লক্ষ্যমাত্র পূরণ না হওয়ায় এই মেয়াদ আরও এক মাস বাড়িয়ে ৩০ সেপ্টম্বর করা হয়। পরে আরও ৭ দিন বাড়ানো হয়। তাই প্রকৃতপক্ষে সংগ্রহ অভিযান চলে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত।
সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে মোট খাদ্য মজুদের ধারণক্ষমতা রয়েছে ২০ লাখ মেট্রিক টন। এছাড়া আরও কিছু গুদাম নির্মাণ করা হচ্ছে। এগুলোর নির্মাণকাজ সমাপ্ত হলে ধারণক্ষমতা আরও এক লাখ মেট্রিক টন বাড়বে। সেক্ষেত্রে দেশে খাদ্যশস্য ধারণক্ষমতা বেড়ে দাঁড়াবে ২১ লাখ মেট্রিক টনে। সরকারী হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে সরু চালের বাজার মূল্য কেজিপ্রতি ৪২ থেকে ৪৮ টাকা, মাঝারি চাল কেজিপ্রতি ৩৩ থেকে ৩৬ টাকা এবং মোটা চাল ৩২ থেকে ৩৩ টাকা। বর্তমানে চালের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে।
রেকর্ড পরিমাণ মজুদের পর দেশের চালের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। চাল ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটও রয়েছে নীরব। সরকারের হাতে মজুদ কমে গেলে এরা বাজারকে অস্থিতিশীল করে তোলে। কিন্তু সরকারের হাতে মজুদ বেড়ে যাওয়ায় এরা কোন কারসাজি করার সুযোগ পাচ্ছে না বলে জানিয়েছে খুচরা বিক্রেতারা। খুচরা বিক্রেতাদের বক্তব্য, বাজার স্থিতিশীল থাকলে ক্রেতা-বিক্রেতা সকলের জন্য মঙ্গল।
সূত্র জানায়, আজ ১২ নবেম্বর বৃহস্পতিবার খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সভায় খোলা বাজারে বিক্রি করা (ওএমএস) চাল ও আটার মূল্য নির্ধারণী বৈঠক হবে। সাধারণ মানুষের মধ্যে আরেকটু আয়ত্তে আনার লক্ষ্যে খোলা বাজারে বিক্রি করা (ওএমএস) চাল ও আটার মূল্য পুনর্নির্ধারণ করা হতে পারে। বর্তমানে ওএমএসে প্রতি কেজি চালের দাম ২৪ টাকা ও আটা ২২ টাকা