বিটিআরসি ও ফ্রান্সের থ্যালেস এলেনিয়ার মধ্যে চুক্তি সম্পন্ন
মাজাহারুল ইসলাম : মহাকাশে বাংলাদেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’ উৎক্ষেপণের চুক্তি বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এবং ফ্রান্সের মহাকাশ সংস্থা থ্যালেস এলনিয়ার মধ্যে চুক্তি সাক্ষরিত হয়েছে বুধবার। এই চুক্তির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ পৃথিবীর ১৯৫টি দেশের মধ্যে ৫৭টি স্যাটেলাইটের মালিকদেশগুলোর গৌরবময় কাতারে প্রবেশ করলো। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট এখন আর স্বপ্ন নয়, এটি এখন বাস্তবে রূপ নিল। ২০১৭ সালের ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপনের চূড়ান্তের দিকে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। বুধবার রাজধানীর সোনারগাঁ হোটেল বলরুমে আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে বিটিআরসির চেয়ারম্যান ড.শাহজাহান মাহমুদ ও ফ্রান্সের থ্যালেস এলেনিয়া স্পেসের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহি জ্যঁ লইক গ্যাল নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এই চুক্তি সাক্ষর করেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত সোফিয়া ওবার্টও উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, বাংলাদেশকে দাবায়া রাখা যাবে না। আজকে এই চুক্তির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের ৫৭টি স্যাটেলাইট মালিক দেশের ক্লাবে প্রবেশ করলো। বাংলাদেশ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ডিজিটাল বাংলাদেশের পথে এগিয়ে গেল।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে দেশের স্যাটেলাইট চ্যানেল, ইন্টারনেট প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ট্রান্সপন্ডার ভাড়া বাবদ প্রায় ১৪ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়। যা বিদেশীদের আমাদের দিতে হয়। এই স্যাটেলাইট উৎক্ষেপনের পর আমাদের আর কোন খরচ হবে না। বরং ৬-৭ বছরের মধ্যে এই বিনিয়োগের পুরো অর্থ উঠে আসবে। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইমরান আহমেদ। তিনি বলেন, ২০১৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপন করা হবে। এই ইতিহাসের অংশ হতেই আমি এই অনুষ্ঠানে এসেছি।
চুক্তি সাক্ষর অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব ফয়জুর রহমান চৌধুরী। তিনি বলেন, ২০১৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর এই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপন করা হবে। এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য আপনাদের সবার সহযোগিতা চাই।
চুক্তি সাক্ষরের আগে বিটিআরসির চেয়ারম্যান ড.শাহজাহান মাহমুদ শুভেচ্ছা বক্তব্যে বলেন, ‘আজকের দিনে বাংলাদেশ ইতিহাসের নতুন দিগন্তে প্রবেশ করলো। আজকের দিন থেকে বাংলাদেশ পৃথিবীর ১৯৫ টি দেশের মধ্যে স্যাটেলাইটের মালিকদেশগুলোর গৌরবময় কাতারে প্রবেশ করলো। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট এখন আর স্বপ্ন নয়, এটি এখন বাস্তবে রূপ নিল।’
ড. শাহজাহান মাহমুদ আরো বলেন, এই্ স্যাটেলাইট একটি আঞ্চলিক স্যাটেলাইট হিসেবে কাজ করবে। তারপরও সার্কভুক্ত দেশগুলো ছাড়াও ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনও এর আওতায় আসবে। আপনারা দোয়া করবেন, যাতে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের জন্য দু’টি গ্রাউন্ড স্টেশন স্থাপনের জন্য ঢাকা বিভাগের গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর ও রাঙামাটির বেতবুনিয়ায় স্থান নির্ধারণও ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে বলে শুভেচ্ছা বক্তব্যে জানান ড. শাহজাহান মাহমুদ।
ফ্রান্সের থ্যালেস এলেনিয়া স্পেস এর চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহি জ্যঁ লইক গ্যাল শুভেচ্ছা বক্তব্যে বাংলাদেশের সঙ্গে এই চুক্তি সাক্ষরের জন্য নিজেরা গৌরববোধ করছেন বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন,‘ বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের উন্নয়ন সারাবিশ্বে এখন বিস্ময়। বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার পথে আমরা অংশীদার হতে পেরে গৌরববোধ করছি।’
প্রসঙ্গত, গত ২০ অক্টোবর সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রীসভা কমিটি বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট সিস্টেম ক্রয়ের লক্ষ্যে ১ হাজার ৯ শ’ ৫১ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন করেন। ক্রয় কমিটি অনুমোদন দেওয়ার ২০ দিনের মধ্যে এই চুক্তি সাক্ষরিত হল।
জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপনের প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা। সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেওয়া হবে ১ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা। অবশিষ্ট ১ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা বিডার্স ফিন্যান্সিং এর মাধ্যমে সংকুলান করা হবে।
ইতোপূর্বে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রকল্পের আওতায় এ বছরের ১৫ জানুয়ারি রাশিয়ান প্রতিষ্ঠান ইন্টারস্পুটনিক ইন্টারন্যাশনাল এর কাছ থেকে ২১৮.৯৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ১১৯.১ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশ অরবিটাল স্পট লীজ ইন এর ভিত্তিতে ক্রয় করা হয়েছে। এরও আগে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য ২০১২ সালের ২৯ মার্চ বিটিআরসি ও যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশেষজ্ঞ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান স্পেস পার্টনার ইন্টারন্যাশনাল এর মধ্যে পরামর্শ সেবা চুক্তি সাক্ষরিত হয়। সম্পাদনা : ইমরুল শাহেদ