ঢাকার যানজট নিরসনে আন্ডারগ্রাউন্ড রেললাইন নির্মাণে পরিকল্পনা ও অর্থের উৎস নির্ধারণের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে চলতি অর্থবছরের ১১তম একনেক সভা শেষে এক ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। একনেকের আজকের বৈঠকে ৮টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৭টি নতুন ও একটি সংশোধিত প্রকল্প রয়েছে।
রাজধানীবাসীর বিড়ম্বনার আর এক নাম যানজট। নগরায়নের পরিধি বেড়েছে, পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ঢাকামূখী মানুষের ভিড়। ফলাফল, প্রতিদিনই যানজটের তীব্রতায় অসহায় জনজীবন। ঢাকা শহরের এই চেনা রূপ পাল্টে দিতে ফ্লাইওভার, মেট্রো রেল, রাস্তা প্রশস্ত করার মত উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, ঢাকায় মেট্রোরেলের পাশাপাশি পাতালরেল নির্মাণের প্রকল্প তৈরির কাজ শুরু করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিকল্পনা কমিশনকে নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা খুব শিগগিরই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে দিয়ে একটি সমীক্ষা চালাব। সমীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে প্রকল্প তৈরি করা হবে। মন্ত্রী বলেন, ‘পদ্মা সেতু প্রকল্পের মতো এটিও একটি স্বপ্নের প্রকল্প হবে। এতে করে বিদ্যমান যানজট একেবারেই কমে আসবে।
পাতালরেলের কারা অর্থায়ন করবে সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সফররত বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট কাইল পিটারস আমাকে বলেছেন পাতালরেল প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন করবে।
রাজধানীতে মোট ৫টি মেট্রোরেল করার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে বলে জানালেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘রাজধানীতে মোট ৫টি মেট্রোরেল হবে। আরএসটিপি’তে বিষয়টি উত্থাপন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ নিয়ে আজও কথা হয়েছে। একটি হবে আন্ডার রেললাইন, উপরেও রেললাইন হবে।’
দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ইফাদ গ্রুপের তৈরি সর্বাধুনিক প্রযুক্তির এয়ার সাসপেনশন বিলাসবহুল এসি, নন-এসি বাসের বডি তৈরির কাজ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, আমরা গণপরিবহনে কিছু ভালোমানের বাস সংযুক্ত করতে চাই। আমি যখন ভিজিটে বের হই তখন দেখি কি পরিমাণ ফিটনেসবিহীন বাস রাস্তায় চলাচল করছে।
এছাড়া, নিয়মিত একনেকের সভায় উল্লেখযোগ্য প্রকল্পগুলোর মধ্যে ১১’শ ২৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ব্যয়ে পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর পরিচালনায় অবকাঠামো উন্নয়ন ও তিন হাজার ৮শ’ ২৬ কোটি ৯২ লাখ টাকা ব্যয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্প পাস হয়।
পায়রা সমুদ্র বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নে এক হাজার ১শ ২৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
সভায় পায়রা বন্দরসহ ৮টি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। যার মোট টাকার পরিমাণ ছয় হাজার ৩শ ৮৭ কোটি ২২ লাখ টাকা। এরমধ্যে, প্রকল্প সহযোগীরা দেবেন দুই হাজার ১শ ৪৫ কোটি।
প্রকল্পের অংশ হিসেবে পায়রা বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে বন্দরের কার্যক্রম চালু করা ও জাতীয় মহাসড়কের সঙ্গে বন্দরের যোগাযোগ স্থাপন করতে পাঁচ দশমিক ৬০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হবে।
সড়কটি হবে রজপাড়া থেকে পায়রা বন্দর পর্যন্ত। প্রকল্পের সম্পূর্ণ টাকা সরকারি কোষাগার থেকে খরচ করা হবে। আর চলতি বছরের জুলাই থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদী এ প্রকল্পের কার্যক্রম শেষ করবে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ।
অনুমোদিত ৮ টি প্রকল্পের নিজস্ব অর্থায়ন ধরা হয়েছে চার হাজার ২শ’ ২২ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। আর প্রকল্প সহায়তা ধরা হয়েছে দুই হাজার ১শ’ ৪৫ কোটি টাকা।