জঙ্গি দমনে ডিবিতে হচ্ছে কাউন্টার টেররিজম বিভাগ

যেসব দেশে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চাইছে সেসব দেশে পুলিশের আলাদা বিশেষায়িত ইউনিট বা গোয়েন্দা সংস্থা রয়েছে। বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ দমনে গোয়েন্দা পুলিশে (ডিবি) বিশেষায়িত চারটি আলাদা বিভাগ চালু হতে যাচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম কাউন্টার টেররিজম বিভাগ। অন্যদিকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) ইতিমধ্যেই গঠন করা হয়েছে স্পেশাল টাস্ক গ্রুপ (এসটিজি)।

সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা জানিয়েছেন, জঙ্গিবাদ দমনের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব কাউন্টার টেররিজম (পিবিসিটি) গঠনের জন্য ছয় বছর আগে একটি প্রস্তাব দেওয়া হলেও তা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। অথচ বিশেষ প্রশিক্ষণ, উন্নত প্রযুক্তি, লোকবল, গবেষণাসহ অনেক কিছুই নেই মাঠপর্যায়ের পুলিশের হাতে। তাই জঙ্গিবিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ মামলাগুলোর তদন্তভার দেওয়া হচ্ছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি)। জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের বেশি হারে গ্রেপ্তারও করছে এ বিভাগ। একজন সহকারী পুলিশ কমিশনারের (এসি) অধীনে মাত্র ১৫ জনের একটি দল চালাচ্ছে ডিবির জঙ্গি প্রতিরোধ টিম। এ টিমের কেউ শুধু জঙ্গি দমন কাজেই মনোনিবেশ করতে পারেন না। পাশাপাশি চুরি-ছিনতাইসহ অন্য অপরাধেরও তদন্ত করতে হচ্ছে তাদের। তাই ব্লগার হত্যাসহ বেশ কিছু মামলার তদন্ত নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন গোয়েন্দারা। এমন পরিস্থিতে জঙ্গি সংগঠনগুলোর গোপন তৎপরতার চেষ্টা এবং জঙ্গিসংশ্লিষ্ট মামলার তদন্তের জন্য ডিবি পুলিশ ‘কাউন্টার টেররিজম বিভাগ’ চালু করতে যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, পিবিসিটি চালু না হওয়ায় পুলিশ তাদের নিজস্ব লোকবল দিয়েই বিশেষভাবে কাজ করার পরিকল্পনা করছে। তাই ডিবি পুলিশে বিশেষায়িত চারটি আলাদা বিভাগ চালু করার প্রস্তাবনা প্রক্রিয়াধীন। এর মধ্যে অন্যতম কাউন্টার টেররিজম বিভাগ। এদিকে প্রায় দুই মাস আগে চালু হওয়া সিআইডির স্পেশাল টাস্ক গ্রুপ (এসটিজি) জঙ্গিসংশ্লিষ্ট মামলাগুলোর তদন্ত করছে।

এ প্রসঙ্গে ডিবি পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জঙ্গি রিলেটেড বেশি মামলা তদন্ত করছি আমরা। আবার অভিযানও চালাচ্ছি। এখানে আমাদের সে রকম স্পেশালিটি নেই। তাই আমাদের সাধ্য অনুযায়ী আমরা একটি সেট-আপ তৈরি করার পরিকল্পনা করছি।’

ডিএমপির এ মুখপাত্র জানান, প্রস্তাবনা অনুযায়ী ডিবিতে বিশেষ বিভাগ পরিচালনার জন্য একজন অতিরিক্ত কমিশনার, একজন যুগ্ম কমিশনার, চারটি বিভাগের জন্য ন্যূনতম চারজন উপকমিশনারসহ (ডিসি) লোকবল বৃদ্ধি করা হতে পারে। তবে আগে উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিম নামের চারটি বিভাগসহ সাধারণ গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগ চালু থাকবে। নতুন বিভাগগুলো হচ্ছে-কাউন্টার টেররিজম বিভাগ, সাইবার ক্রাইম, অর্গানাইজড ক্রাইম ও স্পেশাল অপারেশন বিভাগ।

ডিবি সূত্র জানায়, বিভাগগুলো চালু হলে কাউন্টার টেররিজম বিভাগে শতাধিক লোকবল নিয়োগ করা হবে, যারা জঙ্গি সংগঠনগুলো নিয়ে তদন্ত করার পাশাপাশি পর্যাপ্ত গোয়েন্দাগিরি করার সুযোগ পাবে। বর্তমানে ডিবি দক্ষিণ বিভাগে একজন এসির অধীনে একটি জঙ্গি প্রতিরোধ টিম আছে। এ টিমে ছয়জন পরিদর্শকসহ মোট ১৫ জন রয়েছেন। তাঁরা সব ধরনের মামলাই তদন্ত করেন। সব ধরনের অভিযানেই যান। ডিবির একই বিভাগে রয়েছে একজন অতিরিক্ত উপকমিশনারের (এডিসি) অধীনে রয়েছে বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল। এ দলও জঙ্গিদের বিস্ফোরক নিয়ে তদন্ত করে।

বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দলের প্রধান এডিসি ছানোয়ার হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জঙ্গি তৎপরতা নিয়ে গোয়েন্দা নজরদারি চালাতে হলে বিশেষ টিম লাগে, যারা শুধু এ কাজই করে। জঙ্গিদের ব্যাপারে, সংগঠনের ব্যাপারে যাদের লেখাপড়া আছে। তাদের নাশকতা, কর্মকাণ্ড, অস্ত্র ও বিস্ফোরক বিষয়েও জ্ঞান থাকা দরকার। তবে এখন আমাদের যে লোকবল আছে, তা দিয়ে এ ধরনের কাজ করা সম্ভব নয়।’ এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে ডিবির কাছে জঙ্গিসংশ্লিষ্ট ২৫-৩০টি মামলা তদন্তাধীন। গত পাঁচ বছরে তিন ব্লগার হত্যা ও হত্যাচেষ্টাসহ বেশ কিছু মামলার তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দিয়েছে ডিবি।

এদিকে র‌্যাব সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত ১১ বছরে এক হাজার ১৬৫ জন জঙ্গিনেতা ও সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে সংস্থাটি। এর মধ্যে ৬০৩ জনই জেএমবির সদস্য। সংখ্যার হিসাবে জঙ্গি দমনে সবচেয়ে বড় সাফল্য এ সংস্থার।

অন্যদিকে দেশের ইতিহাসে বড় ধরনের জঙ্গি হামলা রমনা বটমূলের বোমা বিস্ফোরণ এবং ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার দায়েরকৃত মামলার তদন্ত করেছে সিআইডি। পুলিশের এই বিভাগে এখনো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা তদন্তাধীন। পিবিসিটির জন্য অপেক্ষা করে সিআইডিও এসটিজি নামের একটি আলাদা বিভাগ চালু করেছে। ওই বিভাগের প্রধান, বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএস) মির্জা আব্দুল্লাহ হেল বাকী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রায় দুই মাস আগে এসটিজি চালু হয়েছে। এটি নামে কাউন্টার টেররিজম না হলেও মূলত জঙ্গি ও সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো নিয়ে কাজ করছে। এখন সিলেটের ব্লগার অনন্ত বিজয় দাস হত্যা, ঢাকার মাওলানা নূরুল ইসলাম ফারুকী হত্যাসহ অল্প কিছু মামলা এখানে আছে। আমরা ডিবিসহ অন্যান্য সংস্থাকে সহায়তা করছি। জেলা থেকে জঙ্গিসংশ্লিষ্ট কিছু মামলাও আমরা তদন্তের জন্য নেব।’