বিশ্বজুড়ে অর্থনীতির টালমাটাল অবস্থার মধ্যেও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জন্য সুখবরই দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বহুজাতিক এ দাতা সংস্থাটি বলছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে চলতি বছর প্রবাসী-আয় বা রেমিট্যান্সে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বলে সংস্থাটির পূর্বাভাসে বলা হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের ‘অভিবাসন ও প্রবাসী-আয়: সাম্প্রতিক অগ্রগতি ও দৃষ্টিভঙ্গি’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এ পূর্বাভাস প্রকাশ করা হয়েছে। চলতি মাসে এ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। তাতে প্রবাসী-আয়ের প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি সবচেয়ে কম খরচে এ অঞ্চলের কোন দেশ থেকে কোন দেশে রেমিট্যান্স পাঠানো যায়, তারও একটি হিসাব তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি কোন দেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপিতে রেমিট্যান্সের কত অবদান, সেই চিত্রও তুলে ধরা হয় প্রতিবেদনটিতে।
বিশ্বব্যাংক বলছে, বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোতে চলতি বছর রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি কমে নেমে আসবে ২ শতাংশে। ২০১৪ সালে যেখানে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি কমলেও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে এ প্রবৃদ্ধি বাড়বে। বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০১৪ সালে দক্ষিণ এশিয়ায় যেখানে সাড়ে ৪ শতাংশ রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি হয়েছে, সেখানে চলতি বছর তা আরও ১ দশমিক ২ শতাংশ বাড়বে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের বৃহত্তম রেমিট্যান্স গ্রহীতা দেশ ভারত। আর দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে এ দেশটি বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। ২০১৫ সালে ভারতে রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি আড়াই শতাংশ বাড়বে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। ২০১৪ সালে যেখানে প্রবৃদ্ধি শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছিল। বিশ্বব্যাংক বলছে, সম্প্রতি ভারতে রুপির দরপতন ঘটায় বিনিয়োগভিত্তিক রেমিট্যান্স প্রবাহ অনেক বেড়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাবনাময় অর্থনীতি ও উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর অর্থনীতিকে চাঙা করতে দেওয়া বিভিন্ন আর্থিক প্রণোদনার ফলে ভারতে রেমিট্যান্সের ভালো প্রবৃদ্ধি ঘটবে বলে আশা করছে বিশ্বব্যাংক।
ভারতীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের (রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া) তথ্য উল্লেখ করে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটির (ভারত) রেমিট্যান্সের ৭০ শতাংশই আসে উত্তর আমেরিকা ও উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো থেকে। এর মধ্যে ৩৫ শতাংশ উত্তর আমেরিকা আর বাকি ৩৫ শতাংশ উপসাগরীয় অঞ্চল থেকে আসে।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে রেমিট্যান্স প্রবাহে নাটকীয় পরিবর্তন ঘটেছে নেপালে। সাম্প্রতিক সময়ে ভয়াবহ ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত হওয়ার পর থেকে পর্বতঘেরা দেশটিতে রেমিট্যান্স প্রবাহে নাটকীয় উন্নতি ঘটেছে। ২০১৫ সালে দেশটিতে রেমিট্যান্স প্রবাহ প্রায় ১৮ শতাংশ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রিজার্ভে রেমিট্যান্সের অবদান: বিশ্বব্যাংক বলছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে রেমিট্যান্সের ভালো প্রবৃদ্ধি দেশগুলোর উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। যেমন নেপালের বৈদেশিক মুদ্রার যে মজুত তার ৯৫ শতাংশই রেমিট্যান্স-নির্ভর। আর দেশটির প্রবাসী-আয় বা রেমিট্যান্স মোট জিডিপির প্রায় ৩০ শতাংশের সমান।
শ্রীলঙ্কার প্রবাসী-আয় দেশটির জিডিপির ৯ দশমিক ৪ শতাংশের সমান। আর নেপালের বৈদেশিক মুদ্রার মজুতের ৮৬ শতাংশ রেমিট্যান্স-নির্ভর।
বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের ৮ দশমিক ৬ শতাংশের সমান হচ্ছে রেমিট্যান্স। আবার বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার যে মজুত তার ৬৭ শতাংশই গড়ে উঠেছে রেমিট্যান্সের ওপর ভর করে।
রেমিট্যান্স পাঠানোর খরচ: দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম খরচে রেমিট্যান্স পাঠানো যায় সৌদি আরব থেকে পাকিস্তানে। এরপর সিঙ্গাপুর থেকে বাংলাদেশে এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে পাকিস্তানে। এই তিনটি গন্তব্যে প্রতি ২০০ ডলার রেমিট্যান্স পাঠাতে গড়ে খরচ হয় ৩ শতাংশের কম। অর্থাৎ প্রতি ২০০ ডলার বা ১৬ হাজার টাকা (প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য ৮০ টাকা) রেমিট্যান্স পাঠাতে খরচ হয় ৬ ডলার বা ৪৮০ টাকা।
বিশ্বব্যাংকের হিসাবমতে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সিঙ্গাপুর থেকে পাকিস্তানে, সুইজারল্যান্ড থেকে শ্রীলঙ্কা ও জাপান থেকে ভারতে রেমিট্যান্স পাঠাতে সবচেয়ে বেশি খরচ হয়। এই তিনটি গন্তব্যে রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রতি ২০০ ডলারে ১০ শতাংশের বেশি খরচ হয়। অর্থাৎ প্রতি ২০০ ডলার রেমিট্যান্স পাঠাতে হলে তার বিপরীতে ২০ ডলার খরচ হয়ে যায়