পায়রা বন্দর উন্নয়নে ১১শ’ কোটি টাকার প্রকল্প

পটুয়াখালীর পায়রা সমুদ্রবন্দরের বহির্নোঙরে জাহাজ থেকে বাণিজ্যিকভাবে পণ্য খালাস কার্যক্রম চলতি বছরে শুরু করতে চায় সরকার। আগামী ডিসেম্বর থেকে গভীর সমুদ্রে বড় আকারের জাহাজ থেকে ছোট জাহাজে লাইটারিং করার প্রস্তুতির কাজ এরই মধ্যে প্রায় শেষ করেছে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জন্য প্রয়োজনীয় সিমেন্ট, ক্লিঙ্কারসহ অন্যান্য পণ্য এ বন্দর ব্যবহার করে খালাসের জন্য এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

একই সঙ্গে আগামী তিন বছরের মধ্যে এ বন্দর চালু করতে অবকাঠামো নির্মাণে এক হাজার ১০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। আগামী বৃহস্পতিবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নের এ প্রকল্প অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে।
বর্তমানে পায়রা সমুদ্রবন্দরের জন্য ১৬ একর জায়গায় সীমিত আকারে ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে সেখানে টার্মিনাল, পন্টুন, নিরাপত্তা ভবন এবং অভ্যন্তরীণ রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। প্রাথমিক এ অবকাঠামো ব্যবহার করে বহির্নোঙরে পণ্য খালাস করে দক্ষিণাঞ্চলে পাঠানো শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৩ সালের ১৯ নভেম্বর পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় রামনাবাদ চ্যানেলের পশ্চিম তীরে দেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দর হিসেবে পায়রা বন্দরের উদ্বোধন করেন। এর আগে সংসদে ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর পায়রা বন্দর আইন পাস হওয়ার পর পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয়।
অন্যদিকে, প্রস্তাবিত পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর সরকারের ফাস্ট ট্রাকভুক্ত একটি মেগা প্রকল্প। তবে এখন পর্যন্ত এ জন্য প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করা হয়নি। বিশাল ব্যয়ের এ প্রকল্পের অর্থায়নও ঠিক হয়নি। অনেক দেশ ও কোম্পানি আগ্রহ দেখালেও কোনোটি চূড়ান্ত হয়নি।
এ পরিস্থিতিতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের আগে পায়রা বন্দরের কাজ শেষ করতে উদ্যোগ নিয়েছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। এ বন্দর পুরোদমে চালু হলে গভীর সমুদ্রবন্দরের জন্য বিনিয়োগ পাওয়া সহজ বলে বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা।
পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের (পাবক) সদস্য (অর্থ ও প্রশাসন) এম রফিউন হাসাইন সমকালকে বলেন, পূর্ণাঙ্গ গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে ব্যাপক বিনিয়োগ এবং অবকাঠামো নির্মাণ প্রয়োজন। সেটি হঠাৎ করে সম্ভব হবে না। তাই এর প্রস্তুতি হিসেবে বন্দর নির্মাণের কাজ করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে বহির্নোঙরে ডিসেম্বরে পণ্য খালাস করার জন্য অবকাঠামো উন্নয়ন করা হয়েছে। তিনি জানান, চট্টগ্রাম বন্দরের আদলে কুতুবদিয়ায় যেভাবে পণ্য খালাস হচ্ছে, ঠিক একইভাবে দক্ষিণাঞ্চলের জন্য প্রয়োজনীয় সিমেন্ট, ক্লিঙ্কারসহ অন্যান্য পণ্য খালাসের সুবিধা এ বন্দরে তৈরি করা হচ্ছে। তিনি
বলেন, এ ধরনের কার্যক্রম শুরু
হলে ভবিষ্যতে বিদেশি বিনিয়োগ পাওয়া যাবে।
একনেকে উপস্থাপনের অপেক্ষায় থাকা এ প্রকল্পের আওতায় পূর্ণাঙ্গ বন্দর হিসেবে কার্যক্রম শুরুর জন্য অবকাঠামো বা সুবিধাদি উন্নয়ন করা হবে। তিন বছর মেয়াদি এ প্রকল্পের আওতায় ছয় হাজার ৬৯ একর জমি অধিগ্রহণ, ওয়্যারহাউস নির্মাণ, রামনাবাদ ও কালীগঞ্জ নৌপথ ড্রেজিং, প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ, হাইস্পিড বোট, পাইলট বোট, টাগ বোট, বয়া লেয়িং ভ্যাসেল, সার্ভে ভ্যাসেল, সার্ভিস পন্টুন সংগ্রহ এবং সেতু নির্মাণ করা হবে।
জানা গেছে, পায়রা বন্দর দিয়ে ট্রাক, লরি এবং অন্যান্য যানবাহনের মাধ্যমে রফতানি ও আমদানি করা পণ্য পরিবহনের জন্য পর্যাপ্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই। এ প্রকল্পের আওতায় চার লেনের সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার মহাসড়ক নির্মাণ করা হবে। রাস্তাটি কুয়াকাটার জাতীয় মহাসড়ক থেকে শুরু করে পায়রা বন্দরে শেষ হবে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেশের ৯৫ শতাংশ পণ্য আনা-নেওয়া হয়। এ বন্দরের আশপাশে আবাসিক ও শিল্প স্থাপনা গড়ে ওঠায় ভবিষ্যতে উন্নয়নের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা নেই। অন্যদিকে, পশুর নদে পলি পড়ার কারণে মংলা বন্দরে জাহাজ চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। এ দুই বন্দর দিয়ে দেশের প্রায় সিংহভাগ পণ্য আমদানি-রফতানি করা হয়। এমন পরিস্থিতিতে পায়রা বন্দর নির্মাণ করা হলে অন্য দুই বন্দরে পণ্য পরিবহনের বাড়তি চাপ কমবে।
পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য আরাস্তু খান মনে করেন, পায়রায় প্রতীক্ষিত গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের আগে এ বন্দর চালু হলে তা দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম প্রধান (উন্নয়ন) এনায়েত হোসেন সমকালকে বলেন, ২০১৮ সালের মধ্যে বন্দর হিসেবে এটির কার্যক্রম শুরু করতে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছে। এর আওতায় জমি
অধিগ্রহণসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম শেষ হলে দেশে বিদেশি বিনিয়োগের নতুন ক্ষেত্র তৈরি হবে।