প্রথম শ্রেণীতে ভর্তিতে ৪০ ভাগ ‘এলাকা কোটা’

‘যে এলাকায় শিশুর বসবাস, সেই এলাকার স্কুলে ভর্তি’ নিশ্চিত করতে ৪০ শতাংশ ‘এলাকা কোটা’ সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর ফলে শিশুদের আর দূরবর্তী স্থানে গিয়ে স্কুল করতে হবে না। আসছে জানুয়ারির নতুন শিক্ষাবর্ষ থেকেই প্রথম শ্রেণীতে শিক্ষার্থী ভর্তিতে ‘এলাকাভিত্তিক কোটা’ পদ্ধতি অনুসরণ করবে দেশের সব সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়। গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে ‘সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভর্তি নীতিমালা চূড়ান্ত’ বিষয়ে এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এর আগে প্রধানমন্ত্র্পী শেখ হাসিনা
জাতীয় শিশু দিবসের অনুষ্ঠানে একটি এলাকা বা মহল্লার শিশুদের ওই এলাকার স্কুলগুলোতেই ভর্তিতে অগ্রাধিকার দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিশুরা যে এলাকায় বসবাস করে সেখানকার স্কুলগুলোতে ভর্তির সুযোগ পাওয়া তাদের অধিকার। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে তদারকি ও সমন্বয়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী তার অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। এর পরই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় শিক্ষা ও প্রাথমিক এবং গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষার্থী ভর্তিতে ‘এলাকা কোটা’ চালুর সুপারিশ করেছিল ‘মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর’ (মাউশি)। এরপর গতকালের সভায় এ বিষয়টি চূড়ান্ত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
সভাশেষে মাউশির মহাপরিচালক প্রফেসর ফাহিমা খাতুন সমকালকে এ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোকে আগামী শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তিতে ৪০ শতাংশ ‘এলাকা কোটা’ অনুসরণ করতে হবে। এক্ষেত্রে বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোকে এ প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করা যায় কি-না, তা নিয়ে আজ বুধবার মন্ত্রণালয়ে সভার আহ্বান করা হয়েছে। সেখানে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে।
এর আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (মাধ্যমিক) রুহী রহমান সাংবাদিকদের জানান, শিশু অধিকার নিশ্চিত করতে স্কুলে ভর্তিতে ৪০ শতাংশ ‘এলাকা কোটা’ কার্যকরের পক্ষে মন্ত্রণালয় একমত হয়েছে। তিনি বলেন, মাউশির সুপারিশ অনুযায়ী কোনো এলাকার স্কুলে সে এলাকারই ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে আগে ভর্তি করতে হবে। বাকি আসনে এলাকার বাইরের শিক্ষার্থীদের ভর্তি করা হবে।
গত ৭ অক্টোবর ‘ইমপ্রুভিং স্কুল অ্যান্ড কলেজ পারফরম্যান্স’ শিরোনামে মাউশিকে একটি চিঠি দিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক পত্রের বরাত দিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. মুহিবুর রহমান স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে ‘যেই এলাকার শিশু সেই এলাকায় কীভাবে ভর্তি’ করা যায় সে-সংক্রান্ত বিষয়ে মাউশির কাছে মতামত চাওয়া হয়েছিল। মাউশির কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, ভর্তি নীতিমালায় নতুন এ বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার পাশাপাশি শিগগিরই এ-সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করা যেতে পারে।
গতকালের সভায় এ ছাড়া সরকারি স্কুলে ভর্তি নীতিমালায় প্রথম শ্রেণীতে ভর্তিতে শিশুর বয়স ছয় (প্লাস) করা, আর অনলাইনে শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম রাজধানীর ৩৫টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মতো এবার সারাদেশের জেলা শহরের সরকারি স্কুলগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
মাউশি মহাপরিচালক প্রফেসর ফাহিমা খাতুন জানান, এবার জেলা শহরের সরকারি স্কুলগুলোকেও অনলাইনে আবেদন করে শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে হবে। বর্তমানে অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়ায় ঢাকা মহানগরসহ অন্য মহানগরের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে কেবল শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হচ্ছে। সভায় মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ছাড়াও রাজধানীর সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।