নির্দিষ্ট সময়ের আগেই টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। গতকাল রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ‘ইয়ুথ ফর এসডিজিস: এসডিজিস ফর ইয়ুথ’ শীর্ষক সংলাপে তিনি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানের আয়োজক সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই)। সজীব ওয়াজেদ জয় দুই শতাধিক তরুণের সামনে বক্তব্য রাখেন এবং নানা প্রশ্নের জবাব দেন।
সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ২০৩০ সাল পর্যন্ত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আশা করছি তরুণদের সঙ্গে নিয়ে নিদিষ্ট সময়ের আগেই টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। আমাদের ওয়াদা ছিল, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে আমরা একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করব। আমরা নিম্ন-মধ্যম আয়ে পৌঁছেছি, তবে সেটা ছয় বছর আগেই।
তিনি আরও বলেন, ‘সবার আগে আমাদের বড় পরিচয় আমরা বাঙালি। সকলকে সঙ্গে নিয়ে তীব্র গতিতে এগিয়ে চলছে দেশ। একটি পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি আমরা। অবশ্যই এটি ইতিবাচক পরিবর্তন। একমাত্র আওয়ামী লীগই পারে, আমরা সেটা করে দেখাতে পেরেছি।’
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে অসাধারণ অগ্রগতি সাধনের স্বীকৃতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘আইসিটি সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ প্রাপ্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই প্রাপ্তি আমাদের আনন্দিত করেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া ছিল আমাদের স্বপ্ন। আমরা চেয়েছি ডিজিটাল পদ্ধতিতে সহজে মানুষের সেবা করতে। প্রত্যন্ত গ্রামেও পৌঁছাতে পেরেছি ডিজিটাল সেবা।
প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা বলেন, ‘দেশকে এগিয়ে নিতে নতুন নতুন স্বপ্ন দেখতে হবে। প্রত্যাশা করছি ভবিষ্যতে বাংলাদেশের কেউ জাতিসংঘের নেতৃত্ব দেবেন। বাঙালি জাতি একসঙ্গে এগোলে কেউ আমাদের দাবিয়ে রাখতে পারবে না।’
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে অনেক শক্তিশালী দেশ আমাদের বিরোধিতা করেছে, তারা আমাদের স্বাধীনতা ঠেকাতে পারেনি। এখনও দেশের বাইরে থেকে অনেকে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। তাদের সঙ্গে ষড়যন্ত্রে অনেক দেশও যুক্ত হয়েছে। তারা বাংলাদেশে খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
তিনি বলেন, ক্ষমতার লোভে একটি দল ষড়যন্ত্রকারী বিদেশিদের সহায়তা করছে। আমরা জানি কেমন করে ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হয়। তরুণদের এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় সচেতন হতে হবে। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
তিনি বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭টি। এর মধ্যে ১২টি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের প্রস্তাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অন্যান্য অনেক উন্নয়নশীল দেশ থেকে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা এগিয়ে আছি। জাতিসংঘ মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। আমরা ক্রিটিকাল লার্নিংয়ের দিকে গুরুত্ব দিয়েছি। আমরা জানি আগামীতে বাংলাদেশকে কোথায় নিয়ে যেতে হবে।
তরুণ উদ্যোক্তাদের সহায়তায় ঋণের ব্যবস্থা আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসএমই ফাউন্ডেশনে দুই হাজার কোটি টাকা রয়েছে। তবে অনেকে জানে না কোথায় ঋণ পাওয়া যাবে, এটা নিজ উদ্যোগে জানতে হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে রামপাল পাওয়ার প্ল্যান্ট নিয়ে তিনি বলেন, সুন্দরবন থেকে রামপাল পাওয়ার প্ল্যান্টের যে দূরত্ব তার চেয়ে কম দূরত্বে আগেই একটি পাওয়ার প্ল্যান্ট রয়েছে। স্টাডি করে দেখা গেছে, এতে সুন্দরবনের ওপর কোনো প্রভাব পড়েনি। গবেষণা করে রামপাল পাওয়ার প্ল্যান্টের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, এতে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।
সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, বিএনপি-জামায়াতের সময়ে পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। এখন বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন্স অব দ্য আর্থসহ একের পর এক আন্তর্জাতিক পুরস্কার পাচ্ছে। যতদিন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকবে ততদিন বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।
অনুষ্ঠানে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করার বিষয়ে নানা পরামর্শ তুলে ধরেন তরুণরা। তারা বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে শিক্ষাকে গুরুত্ব দিতে হবে। এ ছাড়া কর্মসংস্থান সৃষ্টি, ছিন্নমূল মানুষের স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত, ইয়ুথ পার্লামেন্ট গঠন এবং নারীদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে।
অনুষ্ঠানে মোহন রবি দাস, সাদেকা রহমান সেঁজুতি, সাজিয়া রহমান, আমজাদ হোসেনসহ অনেক উদ্যোক্তা তাদের নানা উদ্যোগ এবং স্বপ্নের কথা জানান।