খাদ্য উৎপাদনে সাফল্য

দেশের কৃষিজমি ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেলেও ধানসহ খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ চমক সৃষ্টি করেছে। এক সময় মান্ধাতার আমলের পদ্ধতিতে এ দেশে চাষাবাদ হতো। সে পশ্চাৎপদতা কাটিয়ে কৃষিতে আধুনিকায়নের ছোঁয়া লেগেছে প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে। বাংলাদেশের কৃষকরা এখন ব্যবহার করছে কলের লাঙ্গল এবং ট্রাক্টর। ধান মাড়াইয়েও ব্যবহৃত হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তি। উন্নতমানের বীজ, সার এবং সেচ বাংলাদেশের কৃষির অনুষঙ্গে পরিণত হয়েছে। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের জনসংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। বাড়তি জনসংখ্যার প্রয়োজনে এ সময়ে বাসস্থান, স্কুল-কলেজ, হাটবাজার, কলকারখানা এবং অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণে চাষাবাদের জমি ১৮ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। তবে এ সময়ে শুধু চালের উৎপাদন বেড়েছে ৩ দশমিক ১৬ গুণ। একই সময়ে গমের উৎপাদন বেড়েছে ১২ দশমিক ২৫ গুণ। ভুট্টা উৎপাদন ৭৫৭ গুণ। আলুর উৎপাদন বেড়েছে ১০ পয়েন্ট ১১ গুণ। একদিকে জনসংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে যাওয়া, অন্যদিকে জনপ্রতি খাদ্যগ্রহণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলেও হেক্টরপ্রতি ধানের উৎপাদন তিনগুণের বেশি বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো ধান রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে। ধান উৎপাদনে দেশের পরিশ্রমী কৃষকদের কৃতিত্ব যেমন অনস্বীকার্য তেমনি ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধিক ফলনশীল বিভিন্ন জাতের ধানও অবদান রাখছে। বর্তমানে দেশের মোট ৭৫ ভাগ জমিতে ব্রি-ধানের চাষ হয় এবং এ থেকে দেশের মোট ধান উৎপাদনের শতকরা ৮৫ ভাগ আসে। ১৯৭০-৭১ সালে দেশে মোট উৎপাদিত ধানের পরিমাণ ছিল এক কোটি ১০ লাখ টন। চলতি বছর উৎপাদন প্রায় চার কোটি টনে গিয়ে পৌঁছবে বলে আশা করছেন কৃষিবিদরা। ধান উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় খাদ্য আমদানি ক্রমান্বয়ে কমছে ও দেশের বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে। বাংলাদেশ এখন ধান উৎপাদনে পৃথিবীতে চতুর্থ। হেক্টরপ্রতি ধান উৎপাদনে বৈশ্বিক গড়কে পেছনে ফেলতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। গত ৪৪ বছরে বাংলাদেশে খাদ্য উৎপাদন বিশেষত ধান উৎপাদন বৃদ্ধিতে ঈর্ষণীয় সাফল্য এলেও আত্নসন্তুষ্টিতে ভোগার সুযোগ নেই। কারণ জনসংখ্যা যে হারে বাড়ছে তাতে একপর্যায়ে হয়তো উৎপাদন বাড়িয়েও চাহিদা পূরণ করা কঠিন হবে। সময় থাকতে সে ব্যাপারেও সতর্ক হতে হবে।