বিদ্যুতের আলো ‘ছিটমহলে’

‘৬৮ বছর পর আমরা অবরুদ্ধ জীবন থেকে মুক্তি পেয়েছি। এই প্রথম উন্নত জীবনযাপনের প্রধান সহায়ক বিদ্যুৎ পেলাম। এখন আমাদের ছেলেমেয়েরা বিদ্যুতের আলোয় পড়াশোনা করতে পারবে। টিভি-ইন্টারনেট চালাতে পারবে। অল্প খরচে ধান চাষ করতে সেচ দেওয়া যাবে।’ কথাগুলো বলছিলেন লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বিলুপ্ত ১১২ নম্বর বাঁশকাটা ছিটমহলের বাসিন্দা সৈয়দ আলী। শুধু তিনিই নন, বিলুপ্ত ছিটমহলগুলোর সব বাসিন্দার চোখেমুখেই আজ দিনবদলের স্বপ্ন। বিদ্যুৎই নয়, ধীরে ধীরে সব সুযোগ-সুবিধা পাবেন_ এ আশায় বুক বেঁধেছেন তারা।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড লালমনিরহাটের বিলুপ্ত ৫৯টি ছিটমহলের অধিবাসীদের প্রত্যেক পরিবারে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান কার্যক্রম শুরু করেছে। গতকাল মঙ্গলবার বাঁশকাটা ছিটমহলে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের রংপুর অঞ্চলের বিতরণ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী শেখ মোহাম্মদ আলাউদ্দিন সঞ্চালন লাইনের সংযোগ কার্যক্রম চালু করেন। নবনির্মিত বাঁশকাটা অস্থায়ী কমিউনিটি ক্লিনিক প্রাঙ্গণে ২৫০ মেগাওয়াট ধারণক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ সংযোগের পরীক্ষামূলক সঞ্চালন কার্যক্রম উদ্বোধনের মাধ্যমে ৫৯টি সাবেক ছিটমহলে বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ শুরু হলো। এর ফলেই বিদ্যুৎ পেঁৗছে গেছে সৈয়দ আলীসহ অনেকের বাড়িতে। এদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল বৃহস্পতিবার কুড়িগ্রামের বিলুপ্ত দাসিয়ারছড়া ছিটমহল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ছিটমহলগুলোয় বিদ্যুৎ সংযোগ কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন। প্রধানমন্ত্রীর এই সফর নিয়ে ছিটমহলবাসীর মধ্যে ব্যাপক উৎসাহের সৃষ্টি হয়েছে।

গতকাল পাটগ্রামের বাঁশকাটা ছিটমহলে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করার সময় উপস্থিত ছিলেন রংপুর বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের পরিচালন ও সংরক্ষণ সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শাহাদাৎ হোসেন সরকার, লালমনিরহাটের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী হাসনাত জামান, পাটগ্রাম আদর্শ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ শাহ নূর-উন-নবী আল কামাল আযাদ, ছিটমহলবাসীর দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলনের নেতা আজিজুল ইসলাম, শাহ আবদুল হামিদ আফতাবীসহ স্থানীয় নেতারা।

বাঁশকাটার বাসিন্দা হামিদুল ইসলাম, আমিনুল ইসলাম ও মফিজুল ইসলাম বলেন, তারা বিদ্যুতের সংযোগ পেয়ে আনন্দে আত্মহারা। এখন থেকে আর কোনো সমস্যা নেই মন্তব্য করে তারা বলেন, আগে মোবাইল চার্জ দিতে গেলে অনেক কষ্ট করতে হতো। এখন আর সে সমস্যাও থাকল না।
প্রকৌশলী শেখ মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, লালমনিরহাটের সদর, হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম উপজেলার অভ্যন্তরে ৫৯টি ছিটমহলের ১০৫ কিলোমিটার এলাকায় বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন স্থাপনে দুই হাজার খুঁটি প্রয়োজন। এরই মধ্যে এক হাজার খুঁটি স্থাপনের বরাদ্দ পাওয়া গেছে। কাজও শুরু হয়ে গেছে। আগামী জানুয়ারির মধ্যেই ৫৯টি ছিটমহলের প্রত্যেক পরিবারে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করা হবে।