বাংলাদেশ সম্পর্কে বিশ্বব্যাংক প্রধানের মূল্যায়ন

উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধির পথে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া এখন আর লুকোচুরির কোনো বিষয়। ইতোমধ্যে বিষয়টি বহির্বিশ্বের শীর্ষ নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয়েছে। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন পর্যায়ে তা আলোচনায় স্থানও পাচ্ছে। বাংলাদেশের এই এগিয়ে যাওয়ার পেছনে নারীর উজ্জ্বল ভূমিকাও স্বীকৃতি পেতে শুরু করেছে এবং তা অন্য দেশগুলোর সামনে উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারছে। ৯ অক্টোবর ২০১৫ তারিখ পেরুর রাজধানী লিমায় বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তৃতায় বিশ্বব্যাংক প্রধান কর্মক্ষেত্রে নারীদের উজ্জ্বল উপস্থিতি যে কোনো দেশের প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধিতে সবচেয়ে কার্যকর পদক্ষেপের অন্যতম বলে উল্লেখ করেন এবং এ ক্ষেত্রে আরো কয়েকটি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের ভূমিকাকে উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপন করেন। এর আগে অন্য কোনো দেশ সম্পর্কে এত উচ্ছ্বসিত প্রশংসা বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তৃতায় বিশ্বব্যাংক বা আইএমএফের কোনো প্রধান করেননি। ১০ অক্টোবর ২০১৫ তারিখে একটি অনলাইন দৈনিকে সংবাদটি প্রকাশিত হয়েছে।
লিমা কনভেনশন সেন্টারে বিশ্বব্যাংকের ১৮৮টি সদস্য দেশের অর্থমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর, উচ্চপর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাসহ প্রায় দশ হাজার প্রতিনিধির উপস্থিতিতে বিশ্বব্যাংক প্রধানের এ ধরনের ইতিবাচক মন্তব্য বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এতে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ সম্পর্কে অন্যদের আগ্রহ আরো বৃদ্ধি পাবে এটি নিঃসন্দেহে বলা যায়। বাংলাদেশের রফতানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পে প্রায় ৪০ লাখের মতো শ্রমিকের ৮০ শতাংশের বেশি নারী। উল্লেখ করা প্রয়োজন, বিগত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে তৈরি পোশাক শিল্প খাত ২৭ বিলিয়ন ডলারের রফতানি আয় এসেছে এবং এটি বাংলাদেশের মোট রফতানি আয়ের ৮২ শতাংশ। বিশ্বব্যাংকপ্রধান মনে করেন, কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করার ধারা অব্যাহত রাখতে পারলে নারীর বেশি অংশগ্রহণের পাশাপাশি তা বাংলাদেশের জিডিপিতে আরো ১ দশমিক ৮ শতাংশ যোগ করার মতো লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হবে।
বাংলাদেশে নারীর উন্নয়নে যা কিছু করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ নিজস্ব বুদ্ধি ও অর্থায়নেই করা হয়েছে। এটি বাংলাদেশের নিজস্ব অর্জন। অভ্যন্তরীণ এই মূল্যায়নের যোগ্য প্রতিফলন নারী তার কর্মক্ষমতা ও পারদর্শিতার মাধ্যমে প্রমাণও করতে পেরেছে। তবে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ যতই বৃদ্ধি পাক কিংবা তাদের অংশগ্রহণ জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে যতই অবদান রাখুক, বাংলাদেশে নারীর সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়সহ আরো আনুষঙ্গিক পরিস্থিতি সন্তোষজনক নয়। নারীকে এখনো প্রতিকূল পরিবেশ ও পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে প্রতিটি পদক্ষেপ নিতে হয়। পরিবার, কর্মক্ষেত্র কিংবা অন্য যে কোনো ক্ষেত্রে লিঙ্গবৈষম্য এখনো মারাত্মক আকারে উপস্থিত রয়েছে। কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ আরো বৃদ্ধি করতে হলে বিদ্যমান সব ধরনের অসঙ্গতি দূর করতে হবে সর্বাগ্রে। তবেই নারী উৎসাহের সঙ্গে এগিয়ে আসবে এবং দেশের সমৃদ্ধি বিস্তারে তাদের আরো উজ্জ্বল ভূমিকা রাখতে পারবে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সব মহলের বিবেচনায় রাখা খুব জরুরি।