বাঙালি নাদিয়ার বিলেতি হেঁশেল জয়

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনও তার পক্ষে বাজি ধরতে রাজি ছিলেন; শেষ পর্যন্ত হতাশ করেননি নাদিয়া হোসেইন।

বিলেতি রীতির বিয়ের কেক বানিয়ে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই ব্রিটিশ নাগরিকই এবার জিতে নিয়েছেন ‘গ্রেট ব্রিটিশ বেক অফ’ প্রতিযোগিতার শিরোপা।

বুধবার রাতে প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত লড়াই দেখতে বিবিসি ওয়ানে চোখ রেখেছিলেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের প্রায় দেড় কোটি দর্শক। টান টান উত্তেজনার মধ্যে যখন বিজয়ীর নাম ঘোষিত হল, তিন সন্তানের জননী নাদিয়া আনন্দে কেঁদে ফেললেন।

প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বের আয়োজন ছিল একটি তাঁবুর মধ্যে। সেখান থেকে বেরিয়ে এসে নাদিয়া বলেন, “আমি ভেতরে গিয়েছিলাম চার ফুট ১১ ইঞ্চির ‘সবচেয়ে ছোট’ বেকার হিসাবে, আর বের হলাম বিশাল হয়ে।”

যুক্তরাজ্যে রান্না বিষয়ক টেলিভিশন অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে ‘গ্রেট ব্রিটিশ বেক অফ’ দারুণ জনপ্রিয়। সুযোগ পেলে টেলিভিশনের পর্দায় চোখ রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনও।

ষষ্ঠ সিজনের ১২ প্রতিযোগীর মধ্যে ১০ সপ্তাহ ধরে লড়াইয়ের পর শেষ পর্যন্ত টিকে ছিলেন তিনজন। এদের মধ্যে নাদিয়াকেই এগিয়ে রেখেছিলেন ক্যামেরন। তিনি বলেছিলেন, “চাপের মধ্যেও সে দারুণ ধীরস্থির।”

চূড়ান্ত পর্বে ক্লাসিক ব্রিটিশ কেক তৈরির জন্য নাদিয়া বেছে নেন ‘ওয়েডিং কেক’। তিনটি কেক তৈরি করে স্ট্যান্ডগুলো তিনি সাজান বাঙালি নারীর ঐতিহ্যবাহী শাড়ি দিয়ে। নীল আর লাল রংয়ের সেই শাড়ির সজ্জায় ফুটে ওঠে ব্রিটিশ পতাকা।

চূড়ান্ত পর্বের অপর দুই প্রতিযোগী ইয়ান কামিং ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত তমাল রায়কে পেছনে ফেলে বিজয়ীর মুকুট মাথায় তুলতে নাদিয়ার খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি।

সিলেটের বিয়ানীবাজারের মোহাম্মদপুর গ্রামের জমির আলী ও আসমা বেগমের চার মেয়ে ও দুই ছেলের মধ্যে তৃতীয় নাদিয়ার জন্ম ব্রিটেনেই। লন্ডন থেকে চল্লিশ মাইল দূরে লুটন শহরে শৈশব কাটলেও স্বামী আবদাল হোসেইন আর সন্তানদের নিয়ে এখন থাকেন উত্তর ইংল্যান্ডের লিডসে।

লুটনে হাই স্কুলে পড়ার সময়ই রান্নার শিক্ষিকা জাঁ মার্শালের তত্ত্বাবধানে ট্র্যাডিশনাল ব্রিটিশ ক্র্যাম্বল, পাই, পেস্ট্রি, কেক বানানোয় হাত পাকতে শুরু করে নাদিয়ার। গ্রেট ব্রিটিশ বেক অফ’ প্রতিযোগিতায় এসে প্রথম দিকে কিছুটা ‘নার্ভাস’ থাকলেও সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তার আত্মবিশ্বাস বেড়েছে।

প্রতিটি পর্বে তার ‘একাগ্রতা’ আর ফিজিপপ, চিজকেক, পেস্ট্রি নান কিংবা শেষ পর্বে বিয়ের কেক তৈরিতে তার মুন্সীয়ানার প্রশংসা ঝরেছে প্রতিযোগিতার দুই বিচারক মেরি বেরি ও পল হলিউডের কণ্ঠেও।

“আমি পারব না- এমন কথা আমি আর কখনো ভাবনা না,” শিরোপা জয়ের পর এমনই প্রতিক্রিয়া নাদিয়ার।