গ্যাসের অভাবে ভারী শিল্পের প্রসার ঘটেনি রাজশাহীতে। তবে ২০১২ সাল থেকে কারখানায় গ্যাস সংযোগ উন্মুক্ত হওয়ায় ছোট ও মাঝারি আকারে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতে শুরু করে। এর মধ্যে গত ৮ মার্চ থেকে নগরীর বিসিক শিল্প-কারখানায় নিটল-নিলয় গ্রুপের উদ্যোগে দেশের প্রথম হিউম্যান হলার তৈরি যাত্রা শুরু হয়। এবার রাজশাহী বিসিক শিল্পনগরীতে প্রথমবারের মতো উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহৎ গার্মেন্ট কারখানা প্রতিষ্ঠা করছে এনা গ্রুপ। শতভাগ রপ্তানিমুখী এ সোয়েটার কারখানাটি আগামী বছরের শুরু থেকেই উৎপাদনে যাবে। এতে অন্তত দুই হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
গত রবিবার কারখানা এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সপুরা সিল্ক শোরুমের পাশে নগরীর বিসিক শিল্প এলাকায় এই সোয়েটার কারখানাটি প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে। এরই মধ্যে কারখানাটির ছয়তলা ভবন নির্মাণকাজও শুরু হয়েছে। কারখানাটি তৈরির জন্য জাপানের সিমা সেইকি কম্পানি থেকে এরই মধ্যে ক্যাকার্ড ও কেনিটিং মেশিন আমদানিরও চুক্তি করেছে এনা গ্রুপ।
এনা গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মোসলেহ উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এই শিল্প-কারখানাটি হবে রাজশাহী তথা উত্তরাঞ্চলের সর্বপ্রথম বৃহৎ গার্মেন্ট কারখানা। এখান থেকে প্রতি মাসে এক লাখ ২০ হাজার সোয়েটার উৎপাদন করা সম্ভব হবে, যা পর্যায়ক্রমে ১০ লাখ পর্যন্ত বাড়ানো যাবে। এই কারখানাটিতে সব মিলিয়ে প্রায় দুই হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে।’
মোসলেহ উদ্দিন আরো বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে গার্মেন্টটিতে জনবল নিয়োগের প্রস্তুতি নিয়েছি। আশা করছি খুব দ্রুত ভবন নির্মাণকাজ শেষে আমরা উৎপাদনে যেতে পারব। আর এটি চালু হওয়ার পর থেকে উত্তরাঞ্চলের জন্য এই কারখানাটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে।’
এদিকে বিসিক সূত্র মতে, বিসিক শিল্পনগরীতে আরো শিল্প-কারখানা গড়ে তোলার লক্ষ্যে এরই মধ্যে কাজ শুরু করা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে ৫০ একর জমির ওপর রাজশাহী বিসিক শিল্পনগরী সম্প্রসারণের প্রস্তাবসংবলিত ডিপিপি ইতিমধ্যে একনেকে অনুমোদন পেয়েছে। সে মোতাবেক ১৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজশাহী বিসিক শিল্পনগরী সম্প্রসারণের প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ৩০৮টি নতুন শিল্প প্লট তৈরি হবে, যার মাধ্যমে পাঁচ হাজার নতুন লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। জানতে চাইলে রাজশাহী রেশম শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি লিয়াকত আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রাজশাহীতে নানা প্রতিকূলতার কারণে এত দিন ভারী শিল্প গড়ে ওঠেনি। তবে এনা গ্রুপই প্রথম গার্মেন্ট কারখানার মতো ভারী শিল্প-কারখানা গড়ে তুলছে, যা রাজশাহী অঞ্চলে প্রথম। এটি চালু হওয়ার পর এ অঞ্চলের শিল্প খাতে নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে।’
ব্যবসায়ীরা জানায়, ২০০৮ সালের রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে মহানগরীতে গার্মেন্ট কারখানা প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করেন মেয়রপ্রার্থীরা। এরপর থেকেই মূলত রাজশাহীতে গার্মেন্ট প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার ধ্যান-ধারণা শুরু হয়। তবে সেটি বাস্তবে রূপ লাভ করেনি নানা প্রতিকূলতার কারণে। এর মধ্যে অন্যতম সমস্যা হলো গার্মেন্টশিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য যে গ্যাস প্রয়োজন, সেটিই রাজশাহীতে ছিল না। ২০১৩ সালের ৭ জুন রাজশাহী নগরীতে গ্যাসের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। তারও কিছুদিন আগ থেকে শিল্প-কারখানায় গ্যাসের সংযোগ দিতে শুরু করে পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কম্পানি।
সূত্র মতে, তিন বছর আগে রাজশাহীতে শিল্প-কারখানায় গ্যাস-সংযোগ দেওয়া শুরু হয়। এরই মধ্যে সাতটি কারখানায় সংযোগ দেওয়া হয়েছে। আরো সাতটি প্রতিষ্ঠান সংযোগ পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কম্পানি লিমিটেড (পিজিসিএল) সূত্র জানায়, ২০১২ সালের ২৫ জানুয়ারি থেকে রাজশাহীতে শিল্প-কারখানায় গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়।