২০০৯ সালের পর থেকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে এগিয়ে চলেছে। জামায়াতে ইসলামী ও অন্যান্য মৌলবাদী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পাশাপাশি তিনি অর্থনীতির প্রতি নজর দেয়া ও একে শক্তিশালী করতে সমর্থ হয়েছেন। বিশেষ করে অর্থনীতিকে বাধাগ্রস্ত করতে বিরোধীদলের অব্যাহত সহিংসতা ও ধর্মঘটের মধ্যেও এক্ষেত্রে তাত্পর্যপূর্ণ অগ্রগতি প্রণিধানযোগ্য। কেননা অর্থনীতিকে বাধাগ্রস্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ব্যর্থ করাই ছিল বিএনপি-জামায়াতের মূল লক্ষ্য।
বিশ্বব্যাপী আর্থিক মন্দা সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতি গত কয়েক বছর ধরে বেশ শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। বিশ্ব ব্যাংকের বিশ্ব উন্নয়ন সূচকের ডাটাবেজ ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল(আইএমএফ)-এর আউটলুক অনুযায়ী, গত দু’বছরে বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান ৫৮ থেকে ৪৪-এ উন্নীত হয়ে ১৪ ধাপ এগিয়েছে। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ’র রিপোর্ট মতে, ১৪৯ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন ডলার জিডিপি নিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থান ছিল ৫৮তম। কিন্তু ২০১৫ সালে এই জিডিপি বেড়ে ২০৫ দশমিক ৩ বিলিয়ন হওয়ায় বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান বর্তমানে ৪৪তম। তাইতো বলা যায় সম্পদের যথার্থ সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটি ব্যাপক অবকাঠামোগত পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। গত জুনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফরকালেও নানা বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও গত কয়েক বছরে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধির প্রশংসা করা হয়। এমনকি বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান দিন দিন শক্তিশালী হচ্ছে। গত ৬ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে জিডিপির ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্থনীতিকে আরো সমৃদ্ধ করছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতির এই অগ্রযাত্রা দেশটিকে উদার, ধর্মনিরপেক্ষ ও মধ্য-আয়ের দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে আরো উজ্জ্বল করেছে। এরফলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এখন বাংলাদেশে তাদের পুঁজি বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে। এমনকি বিদেশি ঋণ ও সহায়তার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের অর্থনীতি একটি ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে। প্রকৃত অর্থে বাংলাদেশের অর্থনীতি ২০১৫ সালে ভিয়েতনাম, তাজাকিস্তান, পর্তূগাল, কাতার, নিউজিল্যাণ্ড ও পেরুর অর্থনীতিকেও ছাড়িয়ে গেছে। ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে বাংলাদেশি জিডিপির ২৯ শতাংশ অবদান ছিল শিল্পখাতের এবং এই অবস্থার দিন দিন আরো উন্নতি হচ্ছে। গত ১০ বছরের পরিসংখ্যানে এটি পরিষ্কার হয়েছে যে, বাংলাদেশের অর্থনীতি একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি কৃষি থেকে শিল্পে রূপান্তর হচ্ছে। সরকারও ইতোমধ্যেই বেশকিছু শিল্প-বান্ধব নীতি প্রচলন করেছে। ফলে অতিসম্প্রতি বৈশ্বিক মন্দা সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতি এগিয়ে যায়। এর সাথে ২০১৫ সালে সামাজিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে শেখ হাসিনার অবদান স্বরূপ জাতিসংঘের পরিবেশ পদক লাভ এবং চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ পুরস্কার লাভ যোগ হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশই হচ্ছে প্রথম দেশ যারা ২০০৯ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলারের জলবায়ু পরিবর্তনে ট্রাস্ট ফাণ্ড গঠন করেছে। এর বাইরে সরকার জলবায়ু পরিবর্তন পরিস্থিতি মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক দাতাদের ২৫ শতাংশ অনুদানের পাশাপাশি বার্ষিক বাজেটের ৬-৭ শতাংশ বা ১ বিলিয়ন ডলার তহবিল সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে।
বিভিন্ন দেশের উন্নয়নের ইতিহাস থেকে জানা যায়, যেসব দেশ সমুদ্র ও এর সম্পদ ব্যবহার করতে পেরেছে তারা অন্য দেশের তুলনায় দ্রুত সমৃদ্ধি লাভ করেছে। তাই বাংলাদেশের উন্নয়নে এই ধরনের কোন সুযোগের বিকল্প নেই। বর্তমানে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের পুরোটাই সমুদ্র হয়ে। এর মাধ্যমে রফতানি আয় ৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। অন্যদিকে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য মিলিয়ে মোট আন্তর্জাতিক বাণিজ্য দাঁড়িয়েছে ৬৫ বিলিয়ন ডলার। ফলে ৬ শতাংশের বেশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি এক সম্ভাবনা ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলা যায়। বর্তমানে দেশের ৯০ শতাংশ বাণিজ্য হচ্ছে সমুদ্র পথে। এর বাইরে বঙ্গোপসাগরের মাছ ও অন্যান্য সম্পদ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। সামুদ্রিক মাছ রফতানি করেও বাংলাদেশ ভাল আয় করছে। তাইতো ব্লু ইকোনোমির ধারণায় এই ধরনের সম্পদ আহরণ ও তা সদ্ব্যবহারের এ্খনই শ্রেষ্ঠ সময়।
বাংলাদেশে এই প্রথম কক্সবাজারের রামুতে গবেষণার জন্য মেরিন সাইন্টিফিক কমিউনিটি গড়ার লক্ষ্যে ওসান গ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ঊনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত চট্টগ্রামে জাহাজ নির্মাণ শিল্প বিকাশের কথা সবারই জানা। পরবর্তীতে পেছনে পড়ে গেলেও গত ১০ বছরে আন্তর্জাতিক মানের জাহাজ নির্মাণ শিল্পে প্রভূত উন্নতি সাধন হয়েছে। এমনকি খুলনা শিপইয়ার্ডে প্রথমবারের মত বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জন্য টহল বোট নির্মাণ করা হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বর্তমানে জাহাজ নির্মাণ শিল্পে জড়িত। বাংলাদেশ বর্তমানে তার দেশে তৈরি জাহাজ বিদেশে রফতানি করছে। এছাড়া জাহাজভাঙ্গা শিল্পও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। অন্যদিকে সমুদ্রপথে বাণিজ্য সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দরগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এছাড়া শেখ হাসিনা সরকার শক্তিশালী পর্যটন শিল্প প্রতিষ্ঠায় কক্সবাজার, সেন্ট মার্টিন এবং কুয়াকাটায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
উচ্চমাত্রার রেমিটেন্স ও রফতানি বৃদ্ধির ফলে আশা করা হচ্ছে আগামী ২০১৬ সাল নাগাদ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৪ শতাংশ হবে। ভোক্তা ও বিনিয়োগকারীরা আশা করছেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীলতার মাধ্যমে এই প্রবৃদ্ধি আরো বাড়বে। এছাড়া আগামী বছরের মধ্যে চলমান উন্নয়ন প্রকল্প সমাপ্ত বিশেষ করে নতুন বিদ্যুত্ প্রকল্প উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে অবকাঠামো পরিস্থিতির আরো উন্নতি ঘটবে।