দেশের সত্তর শতাংশ তরুণ উদ্যোক্তা কর দিতে আগ্রহী

আগে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ধারণা ছিল, যে যত বেশি কর ফাঁকি দেবে সে তত স্মার্ট। এখন ধারণা উল্টো। স্মার্ট তরুণ প্রজন্ম মনে করে, কে কত বেশি কর দিতে পারে। দেশের ৭০ শতাংশ তরুণ উদ্যোক্তা কর দিতে চায়। শনিবার রাতে রাজধানীর অফিসার্স ক্লাবে আয়কর মেলায় সোস্যাল মিডিয়া রাজস্ব সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এ কথা জানান। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রোগ্রামের সহায়তায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আয়োজিত প্রথমবারের মতো এ সংলাপে পলক বলেন, তরুণ প্রজন্মকে কর দেয়ায় উদ্বুদ্ধ করতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ও পরিবেশ সৃষ্টি এনবিআরকে নিশ্চিত করতে হবে। এনবিআরসহ দেশের ওয়েবসাইটগুলোতে একমুখী তথ্য থাকায় ৬০ শতাংশ মানুষ এসব সাইটে একবারের বেশি ভিজিট করতে চায় না। সব ওয়েবসাইটকে ডায়নামিক করা হবে, যাতে যেসব তরুণ প্রজন্ম সোস্যাল মিডিয়ায় থাকে তারা ওয়েবসাইটে চ্যাটিং করতে পারে। পলক বলেন, এনবিআরের একটি হেল্পলাইন চালু করতে হবে। এছাড়া এনবিআরের জন্য একটি মোবাইল অ্যাপস করা হবে, যেখানে রিটার্ন দাখিলসহ সব ধরনের সেবা থাকবে। যার মাধ্যমে কর ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আসবে। ১৬ কোটি মানুষের দেশে ১২ লাখ মানুষ কর দেন। এ হার বাড়াতে হলে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার ও সোস্যাল মিডিয়ার ব্যবহার বাড়াতে হবে বলে জানান পলক। প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকারি ও মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটগুলোতে ৬০ শতাংশ ভিজিটর একবার প্রবেশ করলে, দ্বিতীয়বার প্রবেশ করে না। এর কারণ হচ্ছে, আমাদের সাইটগুলো আপডেট নয় ও পর্যাপ্ত তথ্য থাকে না। তাই এগুলোকে আরও গতিশীল করার চেষ্টা করছি। জুনায়েদ আহমেদ পলক বলেন, এনবিআর সম্পর্কে মানুষের অযৌক্তিক ভয় রয়েছে। তরুণ প্রজন্মসহ কর প্রদানে সমর্থ এমন সব ব্যক্তির মধ্য থেকে এই ভয় দূর করতে হবে। এনবিআরকে ডিজিটালাইজড করার মাধ্যমে এটা সম্ভব। তিনি বলেন, আগে কর না দেয়ার প্রবণতা বেশি ছিল। এখন এ মনোভাব পাল্টে গেছে। কর দেয়াকেই তরুণ সমাজ স্মার্ট মনে করে। কেননা এখন কর দিতে পারলে নিজের স¤পদের সঠিক হিসাব করা যায়। তাই তরুণ প্রজন্মকে বিষয়টি আরও ভালোভাবে বোঝাতে হবে। কর আদান-প্রদান অনলাইনে করা গেলে দুর্নীতি দূর করা সম্ভব বলেও তিনি মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানে তথ্যপ্রযুক্তিবিদ মোস্তফা জব্বার বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে ৯৫ শতাংশ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। অথচ ইন্টারনেটের গতি খুবই কম। তার ওপর ইন্টারনেটের ওপর এনবিআর ভ্যাট আদায় করছেন যা ডিজিটালাইজেশনের অন্যতম প্রধান অন্তরায়। তিনি বলেন, ইন্টারনেটের দাম সহনীয় পর্যায়ে আনার পাশাপাশি এর ওপর ভ্যাট প্রত্যাহার করতে হবে। ইন্টারনেটের ওপর ভ্যাট প্রত্যাহার করলে রাজস্ব আদায়ে খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না। আয়কর মেলায় বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায় প্রসঙ্গে মোস্তফা জব্বার বলেন, মেলায় বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায় হয়। কেন হয়? এটা খুঁজে বের করা দরকার। কারণ একটাই, করদাতাদের মেলায় হয়রানি হতে হয় না বা কোন ঘুষ দিতে হয় না। আর এ থেকে পরিত্রাণের একটাই পথ, তা হলো কর আদায় প্রক্রিয়াকে ডিজিটাল করা। এর পাশাপাশি তিনি সচিবালয়ের প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও দফতরের কাজকর্ম ডিজিটালাইজেশন ও সোশ্যাল মিডিয়ার আওতায় জবাবদিহিতার মুখোমুখি করার দাবি জানান। এ সময় ইউটিইউবে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে কর বিষয়ে প্রশ্নের উত্তর দেন সংলাপে আগত অতিথিরা। সোস্যাল মিডিয়া রাজস্ব সংলাপে রাজস্ব বোর্ড চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান সভাপতিত্ব করেন। সংলাপে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, বেসিস সভাপতি শামীম আহসান, এনবিআর সদস্য পারভেজ ইকবাল, আইসিটি সচিব শ্যাম সুন্দর শিকদার, অ্যামটব সাধারণ স¤পাদক নুরুল কবির প্রমুখ কথা বলেন।