গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন জেলার পাঁচবিবি উপজেলার আয়মা জামালপুরের কৃষক মামুনুর রশীদ। এবারই তিনি প্রথম ৪০ শতাংশ জমিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ করেন।মামুন গত জুলাই মাসের ১ তারিখে চারা রোপণ করেন এবং ৫০ দিনের পরিচর্যায় টমেটো ধরা শুরু হয়। আগামী নভেম্বর মাস পর্যন্ত এ জমি থেকে টমেটো পাওয়া যাবে। বর্তমানে প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০ কেজি পাকা টমেটো বাজারে বিক্রি করছেন তিনি।মামুনুর রশীদ জানান, এ পর্যন্ত ১৮/২০ মণ টমেটো বিক্রি হয়েছে। বারি হাইব্রিড টমেটো-৪ জাতের এই টমেটো চাষে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা প্রদান করছেন স্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা জাকস ফাউন্ডেশন। পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষে ৫০ হাজার টাকা অনুদান প্রদান করেছে। এর সঙ্গে নিজস্ব কিছু পুঁজি খাটিয়ে অসময়ে এ টমেটো চাষ করে আর্থিকভাবে সফল হয়েছেন।তিনি জানান, বর্তমানে বাজারে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে এই টমেটো। শীলা ও ঝড়-বৃষ্টি থেকে রক্ষার জন্য পুরো জমি মোটা পলিথিন (১০ গ্রাম) দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে। কোন প্রকার কীটনাশকের ব্যবহার করা হয়নি এই টমেটো চাষে। ওই এলাকার সবজি চাষী হিসাবে ইতোমধ্যে সুনাম অর্জন করেছেন তিনি। মৌসুম ভেদে পটল, ফুলকপি, বাধাকপি, লতিরাজ কচুসহ হলুদ-আদাও চাষ করে থাকেন তিনি ।কৃষক মামুনুর রশীদ আরো জানান, নিজস্ব কিছু জমির পশাপাশি বর্গা নেয়া সাড়ে ৪ বিঘা জমিতে শুধুই নানা জাতের সবজি চাষ করেন তিনি। তার টমেটো চাষের সফলতা দেখে আপন বড় ভাই আবুল কাশেম ২৫ শতাংশ জমিতে এবং প্রতিবেশী আমিনুর ইসলাম ১৬ শতাংশ জমিতে টমেটো চাষ করে সফল হয়েছেন।জাকস ফাউন্ডেশনের সহকারী পরিচালক (কৃষি) ওবাইদুল ইসলাম জানান, রোপা আমন লাগানোর পর এই সময় গ্রামের মানুষের হাতে তেমন টাকা-পয়সা থাকে না। ফলে আর্থিক দৈন্যতার মধ্যে চলতে হয় গ্রামের কৃষকদের। গ্রীষ্মকালীন টমেটোর চাষ পুষ্টির চাহিদা মিটানোর পাশাপাশি কৃষকদের আর্থিক দৈন্যতা থেকেও রক্ষা করতে পারে। বলে জানান তিনি।চাষের উপযোগী পরিবেশ ও মাটি: কার্তিক মাসের মাঝামাঝি থেকে মাঘ মাসের ১ম সপ্তাহ (নভেম্বর থেকে মধ্য জানুয়ারি) পর্যন্ত চারা রোপণ করা যায়। গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষের জন্য জ্যৈষ্ঠ থেকে শ্রাবণ মাস পর্যন্ত বীজ বপন করা যায়। ২০-২৬ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা টমেটো চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। পর্যাপ্ত আলো বাতাস পাওয়া যায় এমন দোআঁশ মাটি টমেটো চাষের জন্য ভালো।কৃষকদের মতে গুণগত মানসম্পন্ন ভাল ফলন পেতে হলে টমেটো চাষের জমিতে যতটুকু সম্ভব জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে। মাটি পরীক্ষা করে মাটির ধরণ অনুযায়ী সার প্রয়োগ করতে হবে। তবে জৈব সার ব্যবহার করলে মাটির গুণাগুণ ও পরিবেশ উভয়ই ভালো থাকবে। বাড়িতে গবাদি পশু থাকলে সেখান থেকে গোবর সংগ্রহ করা যাবে। নিজের গবাদি পশু না থাকলে পাড়া-প্রতিবেশী যারা গবাদি পশু পালন করে তাদের কাছ থেকে গোবর সংগ্রহ করা যেতে পারে। এছাড়া ভালো ফলন পেতে হলে জমিতে আবর্জনা পচা সার ব্যবহার করা যেতে পারে। বাড়ির আশে-পাশে গর্ত করে সেখানে আবর্জনা, ঝরা পাতা ইত্যাদি স্তূপ করে রেখে আবর্জনা পচা সার তৈরি করা সম্ভব।স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত জৈব কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে পোকা দমন না হলে স্থানীয় কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তা অথবা উপজেলা কৃষি অফিসে পরামর্শের জন্য যোগাযোগ করা যেতে পারে।