দৃশ্যমান পরিবর্তন সাত বছরে

সবার ঘরে বিদ্যুৎ : টার্গেট ২০২১

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের বিগত পৌনে ৭ বছরের বিদ্যুৎ খাতে দৃশ্যমান পরিবর্তন এসেছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বেড়েছে উৎপাদন এবং বিদ্যুৎ সুবিধাভোগী মানুষের সংখ্যা। এক দশক আগের দিনভর লোডশেডিংয়ের দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেয়েছে মানুষ। সেচকালীন সর্বোচ্চ চাহিদার সময়ও বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছে সরকার। দূষণমুক্ত জ্বালানি খাতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সোলার হোম সিস্টেম স্থাপিত হয়েছে বাংলাদেশে। সৌর বিদ্যুতের আওতায় প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ পেয়েছে আধুনিকতার ছোঁয়া। বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতি, সিস্টেমলস ও চুরি বন্ধে এবং গ্রাহক ভোগান্তি কমাতে অফিসগুলোতে এসেছে ই-ফাইলিং সিস্টেম, গ্রাহক পর্যায়ে দেয়া হচ্ছে প্রি-পেইড মিটার। আগামীতে এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নেয়া হয়েছে বিশেষ কর্মপরিকল্পনা।স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে (২০২১ সাল) সবার ঘরে বিদ্যুৎ পেঁৗছে দেয়ার, দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে আর মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার যুগান্তকারী ঘোষণা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঘোষিত সময়ের মধ্যে দেশকে ডিজিটালাইজড এবং মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে বিদ্যুতের উন্নয়ন অপরিহার্য বলেই এ খাতে নেয়া কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিশেষ মনোযোগ দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। গৃহীত কর্মপরিকল্পনার ভিশন ও মিশন হচ্ছে যৌক্তিক মূল্যে এবং ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে সবার জন্য মানসম্মত বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থার সমন্বিত উন্নয়নের মাধ্যমে ২০২১ সালের মধ্যে সবার জন্য নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ নিশ্চিতকরণ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দায়িত্বেই রয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়। শুরু থেকেই বিদ্যুৎ খাতে মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিষয়গুলো রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর নিবিড় পর্যবেক্ষণে। তাই বিগত ৭ বছরে এই খাতে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন।প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা ২০২১ সালের মধ্যে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পেঁৗছে দেয়ার বিষয়ে দশম জাতীয় সংসদের সপ্তম অধিবেশনে তার জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে বলেন, বর্তমান সরকার জনগণের সুবিধার জন্য ঘরে ঘরে বিদ্যুতের আলো পেঁৗছে দেয়ার জন্য ২০১০ সালে প্রণীত পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জানুয়ারি ২০০৯ থেকে আগস্ট ২০১৫ পর্যন্ত ৬ হাজার ১১২ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৭২ নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র বাণিজ্যিকভাবে চালু হয়েছে। ভারত থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির মাধ্যমে তা জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, বিদ্যুৎ সুবিধা বৃদ্ধি পাওয়ায় জনগণের সার্বিক আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। শিল্প কলকারখানার বিস্তার, কর্মসংস্থান ও সেচ সুবিধা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে আগামীতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আরও জোরদার হবে।গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শাসনামলে (২০০১-০৬) দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়েনি; বরং কমেছে। সে সময় সাড়ে ৫ হাজার মেগাওয়াট জাতীয় চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুতের গড় উৎপাদন ছিল তিন হাজার মেগাওয়াট। ২০০৯ সালে সর্বোচ্চ উৎপাদন ছিল তিন হাজার ২৬৮ মেগাওয়াট। সেচের সময় আরও চাহিদা বৃদ্ধির ফলে দেশব্যাপী বিদ্যুৎ পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। দিনভর লোডশেডিংয়ে অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়ে মানুষ। ‘বিদ্যুৎ মাঝে মাঝে আসে’ এমন কথা প্রচলিত ছিল ভুক্তোভোগীদের মুখে। বিদ্যুতের অভাবে উৎপাদন খাতে নেমে আসে স্থবিরতা। গত পৌনে সাত বছরে বিদ্যুৎ খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। চলতি বছর সেচকালীন সর্বোচ্চ চাহিদার সময়ও পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। চাহিদা অনুয়ায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা অর্জন করেছে সরকার। তবে সঞ্চালন ও বিতরণ সমস্যার কারণে কোন কোন সময় বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ঘটনা ঘটছে। তবে তা সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। এ বিষয়ে রাজধানীসহ বিদ্যুৎ সুবিধাপ্রাপ্ত দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দিনভর লোডশেডিংয়ের কবল থেকে মুক্তি পেয়ে জনমনে স্বস্তি ফিরে এসেছে। তবে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ গ্রহণের ক্ষেত্রে হয়রানির অভিযোগ করেছেন অনেকে।বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালে বিগত মহাজোট সরকারের আমলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা গ্রহণের সময় দেশে বিদ্যুৎ কেন্দ্র ছিল ২৭টি, বর্তমানে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংখ্যা ৯৯টি। পৌনে সাত বছরে বেড়েছে ৭২টি। সেময় বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা (ক্যাপটিভসহ) ছিল ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট, বর্তমানে ১৩ হাজার ৮৮৩ মেগাওয়াট (ক্যাপটিভ ২২০০), বেড়েছে ৮ হাজার ৯৪১ মেগাওয়াট। সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারিতে ৩ হাজার ২৬৮ মেগাওয়াট, বর্তমান রেকর্ড ৮ হাজার ১৭৭ মেগাওয়াট (১৩ আগস্ট, ২০১৫)। এই সাত বছরে সঞ্চালন লাইন বেড়েছে ১ হাজার ৬৯৫ সার্কিট কিলোমিটার, গ্রিড সাব-স্টেশন ক্ষমতা বেড়েছে ৮ হাজার ৮শ এমভিএ, বিতরণ লাইন বেড়েছে ৮১ হাজার কিলোমিটার।নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ ২০০৯ সালে বিদ্যুৎ সুবিধাপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠী ছিল ৪৭ শতাংশ, বর্তমানে ৭৪ শতাংশ। বেড়েছে ২৭ শতাংশ। স্থাপিত সোলাার সিস্টেমের সংখ্যা ছিল প্রায় ৩ লাখ। বর্তমানে প্রায় ৩৭ লাখ ১১ হাজার। বেড়েছে ৩৪ লাখ ১০ হাজার। মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ২২০ কিলোওয়াট ঘণ্টা, বর্তমানে ৩৭১ কিলোওয়াট ঘণ্টা। বেড়েছে ১৫১ কিলোওয়াট ঘণ্টা। বিদ্যুৎ গ্রাহক সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৮ লাখ, বর্তমানে ১ কোটি ৭৫ লাখ, বেড়েছে ৬৭ লাখ। সেচ গ্রাহক সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৩৪ হাজার, বর্তমানে ৩ লাখ ৬১ হাজার, বেড়েছে ১ লাখ ২৭ হাজার। ২০০৯ সালে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বরাদ্দ ছিল ২ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা, বর্তমানে ১৬ হাজার ৪৮৫ কোটি টাকা, বেড়েছে ১৩ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা। সামগ্রিক সিস্টেমলস ছিল ১৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ, বর্তমানে ১৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ। কমেছে ৪ দশমিক ৯০ শতাংশ।বিদ্যুৎ বিভাগের নেয়া কর্মপরিকল্পনায় রয়েছে, ২০২১ সালের মধ্যে বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ২৪ হাজার এবং ২০৩০ সালে ৪০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করা। ২০২১ সালের মধ্যে প্রায় ৬ হাজার কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন এবং ১ লাখ কিলোমিটার বিতরণ লাইন ও প্রয়োজনীয় উপকেন্দ্র নির্মাণ ও ক্ষমতাবর্ধন করা, বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রাথমিক জ্বালানির সরবরাহ নিশ্চিত করা, বিদ্যুৎ উৎপাদনে বেসরকারি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা, সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নে ২০২১ সালের মধ্যে প্রায় ২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সংস্থান করা, ২০২১ সালের মধ্যে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের নূ্যনতম ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি হতে উৎপাদন করা, আঞ্চলিক গ্রিডের মাধ্যমে সাড়ে ৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি নিশ্চিত করা, ২০২১ সালের মধ্যে ৬ হাজার মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, ২০২২ সালের মধ্যে প্রায় ২ হাজার মেগাওয়াট নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপন করা, সিস্টেমলস সিঙ্গেল ডিজিটে হ্রাস করা, ২০১৭ সালের মধ্যে দেশব্যাপী প্রি-পেইড মিটার স্থাপন করা, বিদ্যুৎ ও জ্বালনির সাশ্রয়ী ব্যবহার নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে ২০২১ সালের মধ্যে ১৫ শতাংশ জ্বালানি অপচয় হ্রাস করা। গ্রাহক সেবার মান বৃদ্ধিতে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ও ডিজিটাল পদ্ধতির প্রবর্তন করা, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিদ্যুৎ খাতের দক্ষ জনবল সৃষ্টি করা।বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু দশম জাতীয় সংসদের সপ্তম অধিবেশনে বলেন, বর্তমানে দেশের ৭৪ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আছে। ২০২১ সালের মধ্যে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পেঁৗছে দেয়ার লক্ষ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়ে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। গ্যাস, তরল ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পাশাপাশি আমদানিকৃত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রতিমন্ত্রী জানান, বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি খাতে মোট ৬ হাজার ২৭৭ মেগাওয়াট ক্ষমতার ২৬টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে। তিনি বলেন, সরকারি-বেসরকরি খাতে আরও মোট ৭ হাজার ৬০১ মেগাওয়াট ক্ষমতার ২১টি বিদ্যুৎকেন্দ্র দরপত্র প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, যা দরপত্র প্রক্রিয়াকরণ শেষে ধারাবাহিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। এছাড়া, সরকারি খাতে ৪ হাজার ৬৮৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার মোট ৬টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ পরিকল্পনাধীন রয়েছে।দেশের বিদ্যুৎ খাতকে যথেষ্ট স্থিতিশীল দাবি করে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, বিদ্যুৎ খাতে বর্তমান সরকারের সাফল্য বিশ্বের নজর কেড়েছে। তাই ভারত, চীন, মালয়েশিয়াসহ এশিয়া এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করছে। আগামী পাঁচ বছরে এই খাতে ২০ বিলিয়ন ডলার বিদেশি বিনিয়োগ আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রতিমন্ত্রী।মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে গ্যাস ও তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাশাপাশি বর্তমানে সরকারের পরিকল্পনায় বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী বিভিন্ন জেলায় পর্যায়ক্রমে ১২ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। এরমধ্যে বাগেরহাটের রামপালে, কঙ্বাজারের মহেশখালীতে, চট্টগ্রামেও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে। এছাড়া, রূপপুরে রাশিয়ার সহযোগিতায় ২ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ২০২১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে। সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে চট্টগ্রামের দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপে বিদ্যুৎ সরবরাহের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। একনেকে অনুমোদিত এই প্রকল্পের আওতায় বঙ্গোপসাগরের নিচ দিয়ে প্রায় ৮০ কিলোমিটার ক্যাবল স্থাপনের মাধ্যমে সন্দ্বীপকে জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত করা হবে।জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সর্বোচ্চ সম্মান ‘চ্যাম্পিয়ন্স অব দ্য আর্থ’ পুরস্কারের জন্য সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এই পুরস্কার প্রাপ্তির একটি বিশেষ কারণ হলো দূষণমুক্ত নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার। নাবয়নযোগ্য জ্বালানি খাতেও সরকার বহুমুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। বাংলাদেশে গড়ে উঠেছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সোলার হোম সিস্টেম। সরকারের প্রতিষ্ঠান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপম্যান্ট কোম্পানি লি. (ইডকল)-এর উদ্যোগে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার সহায়তায় সারাদেশে বর্তমানে (আগস্ট ২০১৫) প্রায় ৩৭ লাখ ১১ হাজার সোলার হোম সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিশেষ করে চরাঞ্চলে যেখানে সঞ্চালন লাইন টানার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে, ওইসব অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। সৌর বিদ্যুতে চলছে কৃষিকাজে ব্যবহৃত সেচযন্ত্র। দেশের এক কোটি ত্রিশ লাখ মানুষ সৌর বিদ্যুতের আওতায় বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে। ২০১৭ সালের মধ্যে আরও ৬০ লাখ মানুষকে সৌর বিদ্যুৎ সুবিধা দেয়ার লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করেছে ইডকল।দুর্নীতি ও ঝামেলামুক্ত করতে বিদ্যুৎ খাতকে ডিজিটালাইজড করা হচ্ছে। অফিসগুলোতে ই-ফাইলিং সিস্টেম এবং গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুৎ মিটারগুলোকে প্রি-পেইড করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে রাজধানীর আজিমপুরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় গ্রাহক পর্যায়ে প্রি-পেইড মিটার প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে খুলনা, চট্টগ্রাম, বগুড়া এবং সিলেটে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব মিটারই প্রি-পেইড মিটারে প্রতিস্থাপন করা হবে। ২০১৭ সালের মধ্যে সব গ্রাহককেই প্রি-পেইড মিটারের আওতায় আনা হবে। এতে করে গ্রাহক ভোগান্তি, বিদ্যুতের চুরি এবং সিস্টেমলস বন্ধ হবে।বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে পারস্পরিক উন্নয়নের লক্ষ্যে ২০০০ সালে দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সমিতি (সার্ক) এবং ২০০৫ সালে বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলের সাত দেশীয় জোট বিমসটেক আলোচনা শুরু করে। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত উদ্যোগে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়টি স্বল্প সময়ে আলোর মুখ দেখে। ২০১০ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সহযোগিতার জন্য দুই দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি হয়। ২০১৩ সালের অক্টোবরে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি শুরু করে বাংলাদেশ। সে সময় ৫শ’ মেগাওয়াট দিয়ে আমদানি শুরু হলেও আরও ৫শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুতের জন্য ভারতের সঙ্গে আলোচনা চালায় বাংলাদেশ। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশকে আরও বিদ্যুৎ দেয়ার ঘোষণা দেন। ভেড়ামারা এইচভিডিসি স্টেশনে ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে শীঘ্রই আরও ৫০০ মেগাওয়াট এবং আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ত্রিপুরা থেকে একশ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বর্তমানে নেপাল, ভুটান এবং মায়ানমার থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়েও আলোচনা চলছে।প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে ‘ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ পেঁৗছে দিতে কাজ করছে বিদ্যুৎ বিতরণে নিয়োজিত সরকারের পাঁচটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিবি), বাংলাদেশ রুরাল ইলেক্ট্রিফিকেশন বোর্ড (বিআরইবি), ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি), ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) এবং ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো)। সংস্থা এবং কোম্পানি প্রধানরা মনে করেন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে।এ বিষয়ে বিআরইবি’র চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মঈন উদ্দিন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে সবার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পেঁৗছে দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে বিআরইবি। বিআরইবি’র বর্তমান গ্রাহক সংখ্যা ১ কোটি ২২ লাখ। তিনি বলেন, তিনি বলেন, গত এপ্রিল মাসে আমাদের সমিতির অধীনে আমরা সর্বোচ্চ ২ লাখ ৪৬ হাজার নতুন গ্রাহক সংযোগ প্রদান করেছি। বোর্ড গৃহীত পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৮ সালের মধ্যে আরও ৫০ লাখ গ্রাহককে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানের মাধ্যমে ৯০ শতাংশ মানুষকে বিদ্যুতের আওতায় আনা হবে। তিনি বলেন, আরইবি এবং সমিতি একটি পরিবার। আমরা সবাই মিলে সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করলে গ্রামীণ জনপদে ২০২১ সালের আগেই শতভাগ বিদ্যুৎ পেঁৗছানো সম্ভব হবে। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কোন ধরনের শৈথল্য সহ্য করা হবে না।২০২১ সালে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পেঁৗছে দেয়ার লক্ষ্যমাত্র অর্জন সম্ভব কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, পরিকল্পনার যথাযথ বাস্তবায়ন হলে লক্ষ্যমাত্র অর্জিত হবে। এ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ে প্রকল্পের অর্থ জোগান দেয়াসহ সরকারের সার্বিক সহযোগিতার পাশাপাশি প্রকল্প পরিচালকের দক্ষতা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতাও প্রয়োজন।আইডিইবি’র স্টাডি ও রিসার্চ সেলের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী এম এ গোফরান বলেন, বিদ্যুৎ খাতে বর্তমান সরকার ভালোই এগিয়েছে। ‘২১ সালের টার্গেট পূরণের লক্ষ্যে বিদ্যুৎ বিভাগের গৃহীত পরিকল্পনাও বাস্তবায়ন সম্ভব। তবে কয়লা, গ্যাস ও তেলের পাশাপাশি বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রবীণ এই গবেষক বলেন, জার্মানি বর্জ্য দিয়ে বৃহৎ আকারে বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট নির্মাণ করেছে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ৪ হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য হয়। তাই বাংলাদেশেও এটা করা সম্ভব। এ ব্যাপারে সরকারকে বিশেষ উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।