স্কুলগামী বা কলেজগামী অথবা বাড়িফেরৎ কোন ছাত্রীকে কেউ উত্ত্যক্ত করলে তাকে এবার প্রতিরোধ করতে পারবে আক্রান্ত ছাত্রী। ইভটিজারকে ঠেকাতে এক পায়ের জুতো দিয়ে অন্য জুতোর ছোট্ট সুইচটা অন করতে হবে। এরপর কৌশলে যে কোনোভাবে প্রযুক্তি লাগানো জুতোটার সঙ্গে উত্ত্যক্তকারীর শরীরে স্পর্শ করতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে প্রচণ্ড শক খেয়ে কুপোকাত হবে ‘ইভ টিজার’। বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণীর কৃতি ছাত্রী সাদিকা জাহান তার দল নিয়ে এবার এমন অভিনব উদ্ভাবন সৃষ্টি করলো।।বলতেই হয়, ব্রাভো, গার্লস! ব্রাভো!
জুতাটা কাজ করছে কি না,তা নিশ্চিত হতে ক্লাসের ছেলে বন্ধুদের ‘ইভ টিজার’ সাজিয়ে এই প্রযুক্তি যাচাই করে ক্ষুদে বিজ্ঞানীরা। বখাটেদের ঠেকাতে ক্লাসের মেয়ে বন্ধুদের এমন অভিনব আবিষ্কারের যথার্থতা যাচাইয়ে সহায়তা করতে এগিয়ে এসে ছেলে বন্ধুরা সত্যিকার শক খেয়ে কুপোকাত! বললেন এই কিশোরী বিজ্ঞানী দলের প্রধান সাদিকা জাহান । আশা করা যায়, স্কুল-কলেজে যাওয়া-আসার পথে ছাত্রীদের উত্ত্যক্তকারী ও বখাটেদের শায়েস্তা করতে তাৎক্ষণিক ভাবে পুলিশ-র্যাবকে পাওয়া না গেলেও বখাটেদের শায়েস্তা করবে আক্রান্ত ছাত্রীর পায়ে পরা ‘ইভ টিজিং-প্রতিরোধী জুতো’ ।
কিশোর কিশোরীদের উত্ত্যক্তকারীদের ঘায়েল করতে প্রস্তুত এ জুতোর মধ্যে বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী সাদিকা জাহান, সিনথিয়া সরকার, তানিয়া আখতার, রাজিয়া রিমি ও নুসরাত। আজ শনিবার প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক বিজ্ঞান মেলায় ছাত্রীরা এই জুতো প্রদর্শন করে।
সাদিকা জানান, উত্ত্যক্তকারীর দেহে কোনভাবে জুতোর স্পর্শ লাগালেই বৈদ্যুতিক শক খেয়ে ঘায়েল হবে উত্ত্যক্তকারী। ক্ষুদে বিজ্ঞানী দলের প্রধান সাদিকা জাহান জানান,একটি সাধারণ জুতোয় ছোট একটা ট্রান্সফরমারের সঙ্গে তামার দু’টি তার দিয়ে ব্যাটারির সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে। এরপর একটি সুইচের মাধ্যমে নেগেটিভ ও পজিটিভ তার এক করে বৈদ্যুতিক শক দিতে সক্ষম এমন প্রযুক্তি তৈরি করা হয়েছে। তবে স্কুল-কলেজে পরার জন্যে নির্দিষ্ট জুতোতেই কেবল এই প্রযুক্তি লাগানো যাবে।
এই আবিষ্কার প্রসঙ্গে সাদিকা সাংবাদিকদের আরো জানায়, “স্কুল-কলেজের ছাত্রীদের টিজিংয়ের ঘটনা বরাবরই শুনে আসছি।তাৎক্ষণিকভাবে ইভ টিজারদের কী করে প্রতিরোধ করা যায়, আমরা ভাবছিলাম। সেই ভাবনা থেকেই ইভটিজারদের ঠেকাতে আমাদের মাথায় এই উদ্ভাবনের চিন্তা আসে। এরপর এই ভাবনা নিয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলি। তাঁরাও উৎসাহ দেন। কয়েক মাস প্রচেষ্টার পর উদ্ভাবনটি সত্যিই আলোর মুখ দেখলো।’
বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের বার্ষিক বিজ্ঞান মেলায় ইভ টিজিং-প্রতিরোধী জুতা ছাড়াও বিজ্ঞান, পরিবেশ, স্বাস্থ্য, উন্নয়ন ও যোগাযোগ-বিষয়ক ৬৬টি উদ্ভাবনী তুলে ধরে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা। সকাল সাড়ে নয়টায় কলেজ চত্বরে আয়োজিত বিজ্ঞান মেলায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন করেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও ১১১ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মিজানূর রহমান শামীম। পরে তিনি বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখে শিক্ষার্থীদের ভূয়সী প্রশংসা করেন। এ সময় প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ কর্নেল মো. মাহবুবুর রহমান সঙ্গে ছিলেন।