নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রণীত মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে ঢাকার বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে আনুমানিক দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকার প্রকল্প প্রণয়ন করা হয়েছে। চীন সরকারের আর্থিক সহায়তায় এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) ও পাওয়ার গ্রিড কম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)। এ প্রকল্পের আওতায় বিদ্যুতের ৯৪টি সাবস্টেশন বা উপকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। বেশির ভাগ উপকেন্দ্রই থাকবে মাটির নিচে। আর বৈদ্যুতিক তারও টানা হবে মাটির নিচ দিয়ে। এতে রাজধানীকে বৈদ্যুতিক তারের জঞ্জাল থেকে মুক্ত করা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন এ খাতের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
ডিপিডিসি সূত্রে জানা যায়, বিদ্যুৎ বিতরণ খাতের এই নতুন প্রকল্পের খসড়া প্রণয়নের কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। দ্রুত এটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এরপর সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে চুক্তি সই করা হবে চীন সরকারের সঙ্গে। চলতি বছরই এই চুক্তি সই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী বছর প্রস্তুতিকাজ শেষ করে ২০১৭ সালেই প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হবে। ২০২২ সালের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
সূত্র মতে, এই প্রকল্পের আওতায় দুটি ৪০০/২৩০ কেভি, সাতটি ২৩০/১৩২ কেভি, ২৪টি ১৩২/৩৩ কেভি এবং ৬১টি ৩৩/১১ কেভি নতুন বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। এ ক্ষেত্রে ঢাকা শহরে জমির অপ্রতুলতা বিবেচনা করে হাতিরপুলে ধানমণ্ডি পাওয়ার হাউস কমপ্লেক্সের আন্ডারগ্রাউন্ডে (মাটির নিচে) একটি উপকেন্দ্র নির্মাণের পাশাপাশি উপরিভাগে বহুতল অফিস-কাম-বাণিজ্যিক ভবন বা টুইন টাওয়ার নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। নগরীর সৌন্দর্য বাড়ানোর প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ধানমণ্ডি এলাকার সব ওভারহেড কেব্ল আন্ডারগ্রাউন্ডে নেওয়া হবে। এ ছাড়া মগবাজারে হাতিরঝিলের মধ্যে ১৩২/৩৩ কেভি উপকেন্দ্র ও উপকেন্দ্রসংলগ্ন জায়গা ব্যবহার করে মাটির নিচে উপকেন্দ্রসহ বহুতল বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করা হবে।
ডিপিডিসি সূত্রে আরো জানা যায়, তেজগাঁও ১১ কেভি সুইচিং স্টেশন ও অফিসসংলগ্ন জায়গা ব্যবহার করে ১৩২/৩৩ কেভি উপকেন্দ্রসহ বহুতলবিশিষ্ট বাণিজ্যিক ভবন এবং কাকরাইল ৩৩/১১ কেভি উপকেন্দ্র ও উপকেন্দ্রসংলগ্ন জায়গা ব্যবহার করে ১৩২/৩৩ কেভি উপকেন্দ্রসহ বহুতলবিশিষ্ট আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া ধানমণ্ডি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ফার্মগেট এলাকায় তিনটি ১৩২/৩৩/১১ কেভি ভূগর্ভস্থ উপকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। নতুন প্রকল্পের আওতায় ভূগর্ভস্থ লাইনগুলোকে একটি টানেলের মধ্যে আনা হবে। ফলে ভবিষ্যতে লাইনে ত্রুটি দেখা দিলে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি এড়িয়ে দ্রুত সমস্যার সমাধান করা যাবে। টিঅ্যান্ডটি, ইন্টারনেট প্রোভাইডার ও অন্যান্য সংস্থা ব্যবহার করতে পারবে এই টানেল। এটি রাজধানীকে তারের জঞ্জালমুক্ত করার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে ধানমণ্ডি ও হাতিরঝিলের সৌন্দর্য আরো ফুটিয়ে তুলবে। এ ছাড়া প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ ও আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন মানবসম্পদ উন্নয়নের লক্ষ্যে গাজীপুরে একটি পূর্ণাঙ্গ আবাসিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।
সুষ্ঠুভাবে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ বিতরণ নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে এই প্রকল্পের খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে বলে জানান ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. নজরুল হাসান। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ২০২৫ সালে ডিপিডিসির আওতাধীন এলাকায় বিদ্যুতের চাহিদা দাঁড়াবে চার হাজার ২৪৯ মেগাওয়াটে। এই বিপুল পরিমাণ চাহিদা পূরণ করতে বিতরণ ব্যবস্থা আরো দৃঢ়, নির্ভরযোগ্য, শক্তিশালী ও আধুনিকায়ন করা প্রয়োজন। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে সেই লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব। ২০১৭ সালে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে ২০২২ সালে তা শেষ হবে। অর্থাৎ ২০২২ সালের পর ডিপিডিসি এলাকায় কোনো লোডশেডিং থাকবে না। এ ছাড়া প্রকল্পটি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে ডিপিডিসিকে সফল বাণিজ্যিক কম্পানিতে পরিণত করা সম্ভব হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
ডিপিডিসির এমডি বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে শতভাগ জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনতে হবে। বর্তমান সরকারও সেই রকম পরিকল্পনা নিয়েছে। ২০১৫ সালের মধ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজও শুরু হয়েছে এরই মধ্যে। তিনি বলেন, শুধু উৎপাদন বাড়ালে চলবে না। বিদ্যুৎ উৎপাদন, বিতরণ ও সরবরাহ ব্যবস্থায় সমন্বিতভাবে পরিবর্তন আনতে হবে। উৎপাদন ব্যবস্থায় বৈচিত্র্য আনার পাশাপাশি বিতরণব্যবস্থায়ও নানা মাধ্যম ব্যবহার করতে হবে। তিনি আরো বলেন, ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা মোকাবিলায় বিদ্যুৎ বিতরণ সেবা আধুনিক ও সহজতর করতে ডিপিডিসি ব্যাপক কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এ-সংক্রান্ত একাধিক প্রকল্পও হাতে নেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ চীন সরকারের সহায়তায় বিতরণ খাতের সর্ববৃহৎ প্রকল্প গ্রহণের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে।