চট্টগ্রামকে গুরুত্ব না দিলে বাংলাদেশের মধ্য আয়ের দেশ হওয়ার যে পরিকল্পনা তা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। ২০২১ সালে গার্মেন্টশিল্পে ৫০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির যে পরিকল্পনা সেটি বাস্তবায়নে চট্টগ্রামে বিনিয়োগ করতে হবে। গভীর সমুদ্রবন্দর, পায়রা বন্দর যত কিছুই করুক, মধ্যবর্তী সময়ে রপ্তানি চাপ মেটাতে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে আরো কার্যকর, গতিশীল ও সম্প্রসারণ করতে হবে। গার্মেন্টশিল্পে চট্টগ্রামে যেসব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে তা দূর করে সত্যিকারের বাণিজ্যিক রাজধানীর সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হবে।
গতকাল শনিবার চট্টগ্রাম ক্লাবে অনুষ্ঠিত এক গোলটেবিল বৈঠকে এ অভিমত ব্যক্ত করেন ব্যবসায়ী ও দেশের বিশিষ্টজনেরা। বিজিএমইএ ও সিআরআই যৌথভাবে ‘রিয়ালাইজিং ৫০ বিলিয়ন ডলার টার্গেট ফর আরএমজি সেক্টর : দ্য চিটাগং মিশন’ শীর্ষক বৈঠকের আয়োজন করে।
এতে ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি নাসির উদ্দিন আহমেদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন ও সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম তামিম, সাবেক বিদ্যুৎসচিব ড. ফাউজুল কবির খান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘ভিয়েতনামকে যেভাবে বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের জন্য হুমকি হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে, আসলে তারা এখনো সেভাবে হুমকি হয়ে উঠতে পারেনি। বাংলাদেশে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ যেভাবে গড়ে উঠছে, ভিয়েতনামে সেটা এখনো গড়ে ওঠেনি। এ ক্ষেত্রে বরং আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোকে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখা উচিত।’
যোগাযোগব্যবস্থাকে প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে প্রধান অতিথি সাইফুজ্জামান চৌধুরী আরো বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে একটি টোলভিত্তিক ছয় লেনের এক্সপ্রেস হাইওয়ে করা হবে। এটাতে সরকারের কোনো পয়সা খরচ হবে না। বরং বিওও (বিল্ট অন অপারেশন) পদ্ধতিতে অনেক বিদেশি কম্পানি নিজেরাই আগ্রহী হবে। এটা হয়ে গেলে স্বাভাবিকভাবেই শহর আরো সম্প্রসারণ হবে।’
সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা কমবেশি সবাই পোশাকপল্লীর কথা বলেছে। সরকার অবশ্যই এ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েই বিবেচনা করছে। চট্টগ্রামের কোথায় খালি জায়গা আছে তার একটা তালিকা আমাদের হাতে দিলে সে অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নেব।’
প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে নতুন মার্কেট খোঁজার চেয়ে বর্তমান মার্কেট ধরে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ নতুন মার্কেট এখনই তৈরি নয়। তাই জিএসপি ও বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি ধরে রাখতে হবে।’
সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘আমরা গভীর সমুদ্রবন্দর নিয়ে এত বেশি কথা বলছি যে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের গুরুত্ব ভুলে যাচ্ছি। গভীর সমুদ্রবন্দর ২০-৩০ বছর পরের হিসাব, কিন্তু মধ্যবর্তী সময়ে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের বরাবরের মতোই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এ জন্য চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা, দক্ষতা এবং সম্প্রসারণ সময়ের দাবি।’
প্রশ্নোত্তর পর্বে বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহসভাপতি আবু তৈয়ব বলেন, ‘এ মুহূর্তে চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে জমি। চট্টগ্রাম শহর এবং এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় ইন্ডাস্ট্রি করার মতো যে জায়গা আছে তা বড় বড় গ্রুপের দখলে। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে জমি কিনে তারা সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রেখেছে। অথচ সেখানে নিজেরা কোনো বিনিয়োগ করছে না। সওদাগরি মনোভাবের কারণে জায়গা কিনে বেশি দামে বিক্রির জন্য ফেলে রেখেছে। এভাবে তারা ঋণখেলাপি হয়েছে। তাদের ঋণখেলাপির কারণে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের ঋণ দিতে চায় না ব্যাংকগুলো।’ তিনি এই গ্রপগুলোকে একসঙ্গে ডেকে কিভাবে এই জমিগুলো শিল্পায়নের কাজে লাগানো যায় সে ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
চট্টগ্রামের গ্যাস সমস্যার আশু কোনো সমাধান নেই উল্লেখ করে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম তামিম বলেন, ‘শিল্পে গ্যাস দেওয়া অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক। আবাসিক ও সিএনজি স্টেশনে গ্যাস দেওয়া বন্ধ করতে হবে। বিষয়টি চ্যালেঞ্জিং হলেও ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে এটা করতে হবে।’