রফতানি বাণিজ্য সম্প্রসারণে বৈদেশিক মিশন গতি পাচ্ছে

বাংলাদেশের রফতানি বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য বৈদেশিক মিশনগুলোকে বাণিজ্য কার্যক্রম গতিশীল করার ২০টি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ৮টি বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছে। সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত নীতিনির্ধারণী কমিটির সভায় এসব সুপারিশ নেয়া হয়। এর আগে রমজান বা ঈদের সময় প্রয়োজনীয় দ্রব্যাবির মূল্য সরবরাহ নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়। যেখানে বলা হয়েছে সরবরাহ যথাযথ রাখার জন্য নিত্য ব্যবহারের পণ্যাদি উৎপাদন কি পরিমাণ হবে ও বর্তমান বাজারে কি পরিমাণ সরবরাহ রয়েছে তার একটা খতিয়ান তুলে ধরা। একই সঙ্গে কি পরিমাণ পণ্য রফতানি করা যেতে পারে এ ব্যাপারে দ্রব্যমূল্য পূর্বাভাস সেল গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভায় উল্লেখ করা হয়, বর্তমানে সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তি খাত যারা বছরে ৬০০ থেকে ৮০০ কোটি টাকার বেশি পণ্য রফতানি করে থাকে। এদের প্রত্যেকেরই নিজস্ব ল্যাব রয়েছে। সম্প্রতি বিএবি থেকে ৩৫টি প্রতিষ্ঠানকে অ্যাক্রেডিটেশন সনদ দেয়া হয়েছে বলে জানানো হয়।
জানা গেছে, পাট রফতানির বাজার সম্প্রসারণে যেসব দেশ চাল, কফি, কোকো রফতানি করে থাকে সেসব দেশে পাট রফতানির সম্ভাবনা যাচাই করার জন্য ইপিবি’র ভাইস চেয়ারম্যান মতামত তুলে ধরেন। একই সঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে টাস্কফোর্স গঠন করা যেতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে ভারত, রাশিয়া, চীন, ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে সভায় বাণিজ্য সচিব বলেন, রফতানিকারকদের সহযোগী একটি প্রতিনিধি দল ইরান ও তুরস্ক ভ্রমণ করতে পারে। পাট রফতানির বিষয়ে বিজিএমসির প্রেসিডেন্ট জানান, ইরানের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার কারণে বর্তমানে ইরানে পাট রফতানি কম হচ্ছে। পাশাপাশি আফ্রিকার দেশগুলোতে বাংলাদেশের বৈদেশিক মিশন না থাকায় ভিসা সংক্রান্ত সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তবে বাণিজ্য সচিব জানান, ব্যবসার কাজে বাংলাদেশে আগত নাইজেরিয়া, ঘানা ইত্যাদি দেশের নাগরিকদের অন এরাইভাল ভিসা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পরামর্শ দেন। প্রয়োজনে এ ব্যাপারে নীতিমালা পরিবর্তন করা যেতে পারে। জানা গেছে, সভায় শাকসবজি ও ফলমূল রফতানি অব্যাহত রাখার জন্য গঠিত পথনকশা তৈরি অগ্রগতির বিষয়ে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। একই সঙ্গে এ বিষয়ে উক্ত উচ্চপর্যায় কমিটির আলোচনা সভা আয়োজনের নির্দেনা দেয়া হয়।
এ দিকে সভায় ২০টি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে চীন, ভারত, রাশিয়া, ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা ও জাপানের মিশনে টাস্কফোর্স গঠন করা যেতে পারে। এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। পাটের রফতানি বাজার সম্প্রসারণের জন্য বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একটি প্রতিনিধি দল ইরান ও তুরস্ক সফর করবে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় চিংড়ি খাতে রফতানির অসুবিধাগুলো চিহ্নিত করে তা কিভাবে দূর করা যায়, এ ব্যাপারে একটি সুপারিশমালা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠাবে। বিগত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার কারণে বেশ কয়েকটি দেশে কমার্শিয়াল কাউন্সিলরকে চিঠি দেয়া হবে। এমনকি কোনো কোনো মিশনের প্রতিবেদন না পাওয়ার কারণে তাদেরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হবে।
জানা গেছে, সভায় ৮টি বিষয়ে সুপারিশ করা হয়। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য দেশের বিভিন্ন এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনে বিনিয়োগকারীদের জন্য সুবিধাসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে প্রচারের জন্য বিদেশের মিশনগুলোকে প্রতিবেদন পাঠানো হবে। চীন, জাপান ও ভারতের বিনিয়োগকারীদের জন্য আলাদা এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন ঘোষণা করা হলেও, বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে কি ধরনের সুবিধা পাবে তার একটি প্রচারের ব্যবস্থা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে করা হবে। রাশিয়ার বাজারে রুবলের দরপতনে সে দেশে বাংলাদেশের রফতানির ওপর কি প্রভাব পড়বে তার একটি প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা হবে। চীন ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির প্রেক্ষাপটে দেশের তৈরি পোশাকের ওপর কোনো ধরনের প্রভাব পড়বে কিনা সে বিষয়ে একটি প্রতিবেদন পাঠানোর সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়াও যুক্তরাজ্যের ওয়ালমার্টে বাংলাদেশ থেকে আম আমদানি করার বিষয়টি প্রচারের জন্য ইপিভি থেকে কমার্শিয়াল কাউন্সিলরদের চিঠি দেয়া হবে।