যুগোপযোগী করা হচ্ছে ভোক্তা আইন

অসাধু ব্যবসায়ীরা অতি মুনাফার লোভে প্রতিনিয়ত ঠকাচ্ছেন ভোক্তাদের। তারা অভিযোগ করায় গত সাড়ে পাঁচ বছরে ভোক্তা অধিদফতর প্রায় ১১ কোটি টাকা জরিমানা আদায় করলেও অসাধু ব্যবসায়ীদের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে সরকার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ সংশোধন করে ভোক্তা-ব্যবসাবান্ধব তথা যুগোপযোগী করার উদ্যোগ নিয়েছে। সম্প্রতি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার পরিষদ আইনটি সংশোধনের খসড়া অনুমোদন করেছে। এ ব্যাপারে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক আবুল হোসেন মিয়া মানবকণ্ঠকে বলেন, এ আইনটি সংশোধন হলে ভোক্তা-ব্যবসায়ী উভয়ই লাভবান হবেন। কারণ এতে আগের আইনের ত্রুতি-বিচ্যুতি নিরসনসহ পরিমার্জন, পরিবর্তন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
সূত্র মতে, ভোক্তাদের স্বার্থে প্রায় সাড়ে ছয় বছর আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ভোক্তা অধিদফতর গঠন করা হয়েছে। শুরু থেকেই সীমিত লোকবল দিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে বাজার অভিযান পরিচালনা শুরু হয় ২০১০ সালের ৪ এপ্রিল থেকে। এর পরিধি বেড়ে বর্তমানে সাতটি বিভাগীয় শহর, ৬১ জেলা এমনকি উপজেলার বড় বড় বাজারেও     পরিচালনা করা হচ্ছে। এ কাজের জন্য অধিদফতরের সাতটি বিভাগীয় শহর, ৬১ জেলা অফিস খোলা হয়েছে। ওজনে কম দেয়া, মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর খাদ্যপণ্য উৎপাদন ও বিক্রি, উৎপাদিত ও আমদানিকৃত খাদ্যপণ্য ও ওষুধ সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য উল্লেখ করে বিক্রি না করলে ভোক্তা অধিদফতরের ১৯টি ধারার কোনো না কোনোটির আওতাভুক্ত করে শাস্তির বিধান করা হয়েছে। ৩৭নং ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, কোনো আইন বা বিধি দ্বারা কোনো পণ্য মোড়কাবদ্ধভাবে বিক্রি করার এবং মোড়কের গায়ে সংশ্লিষ্ট পণ্যের ওজন, পরিমাণ, উপাদান ব্যবহারবিধি, সর্বোচ্চ খুচরা বিক্রয় মূল্য, উৎপাদনের তারিখ, প্যাকেটজাতকরণের তারিখ ও মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ স্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ করতে হবে। এর ব্যতিক্রম হলে এক বছর সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবে। অসাধু ব্যবসায়ীদের এসব ধারায় জরিমানাও করা হচ্ছে। তারপরও তাদের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। প্রতিদিনই বাজার অভিযানে তাদের জরিমানা করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে মহাপরিচালক বলেন, সাড়ে ৫ বছরে প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ১১ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আর অভিযোগকারীদের ২৫ শতাংশ হিসেবে চার লাখ টাকারও বেশি প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, একই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে একাধিকবার জরিমানা করা হয়েছে। তাই সবার মধ্যে সচেতনতা দরকার। ভোক্তাদের কথা বিবেচনা করে আইনটি সংশোধনেরও প্রক্রিয়া এগিয়ে যাচ্ছে।
আবুল হোসেন মিয়া বলেন, ভোক্তা আইনটি যুগোপযোগী করতে ফিলিপাইন, মালেশিয়া, হংকং ও ভারতের ভোক্তা অধিকার আইন সরেজমিন ও বাস্তবায়ন পরিদর্শন এবং আইনগুলো দেখা হয়েছে। এ ছাড়া বিদ্যমান আইনের ত্রুটি-বিচ্যুতি সংশোধনের ব্যবস্থা ধাপে ধাপে প্রক্রিয়াধীন হচ্ছে। এতে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। আগে ভোক্তার পক্ষে ভোক্তা অধিদফতর মামলা করত। সংশোধনীতে ভোক্তারা সরাসরি আদালতে মামলা করতে পারবেন। তিনি আরো বলেন, ভোক্তাদের স্বার্থে সব উপজেলা ও ইউনিয়নে আইন ও বিধিমালা বলে ভোক্তা অধিকার কমিটিও গঠন করা হয়েছে। উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটির মাধ্যমে সচেতনতা বাড়বে এবং ভোক্তাদের অধিকার আদায় হবে। এ কমিটি ভোক্তাদের স্বার্থে বাজার তদারকিসহ বিভিন্নভাবে অধিদফতরকে সহযোগিতা করবে, এটাই সবার প্রত্যাশা বলে মহাপরিচালক মনে করেন।