দারিদ্র্য হ্রাসসহ বেশ কিছু সূচকে সাফল্য অর্জন

এমডিজি অগ্রগতি প্রতিবেদন

সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এমডিজি) বেশির ভাগ সূচকে অসামান্য সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে দারিদ্র্য বিমোচন, সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন, লিঙ্গসমতা, নারীর ক্ষমতায়ন, মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নয়ন এবং শিশুমৃত্যু হার কমানোর ক্ষেত্রে বিশ্বে বাংলাদেশ এখন মডেল। ধারাবাহিকভাবে ৬ শতাংশের ওপর জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন, ধারাবাহিকভাবে বড় অঙ্কের রেমিট্যান্স প্রবাহ, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি জোরদারসহ সরকারের নানা পদক্ষেপের কারণে এ সাফল্য অর্জিত হয়েছে। গতকাল বুধবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ‘মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলস (এমডিজি):বাংলাদেশ প্রগ্রেস রিপোর্ট’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, অর্জিত সূচকের পাশাপাশি ক্ষুধা ও দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং সবার জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।

প্রকাশনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জিইডি ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) বাংলাদেশ কার্যালয়। পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, ইউএনডিপির কান্ট্রি ডিরেক্টর পলিন ট্যামেসিস ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান। অনুষ্ঠানে এমডিজি বাস্তবায়নের অগ্রগতি প্রতিবেদন তুলে ধরেন জিইডির সদস্য ড. শামসুল আলম।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সূচকে বাংলাদেশের মাথাপিছু দারিদ্র্য ও দারিদ্র্যের বৈষম্য হার কমানো, অপুষ্টির শিকার শিশুর স্বাস্থ্যঝুঁকি রোধ করা, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় লিঙ্গসমতা রক্ষা করা, পাঁচ বছরের কমবয়সী শিশুদের মৃত্যুহার কমানো, এইচআইভি সংক্রমণ রোধ এবং যক্ষ্মা রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসায় সাফল্য অর্জিত হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, গত ১৫ বছরে দেশে দারিদ্র্যের হার অনেক কমেছে। তবে সর্বশেষ সাড়ে চার বছরে দারিদ্র্য কমেছে ব্যাপক হারে। আগামী ১৫ বছরের মধ্যে দেশের ক্ষুধা ও দারিদ্র্য দূর করা সম্ভব হবে। বর্তমানে এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা শূন্যে নেমে আসবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী বলেন, বাংলাদেশ এখন বিশ্বের কাছে টেকসই উন্নয়নের মডেল। এমডিজিতে যেভাবে সাফল্য পেয়েছে, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনেও একইভাবে সাফল্য পেতে কাজ করতে হবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ২০২৮ সালের মধ্যে দেশ ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত হবে। শতভাগ মানুষ শিক্ষিত এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকবে, এ স্বপ্ন নিয়েই সরকার এগিয়ে যাচ্ছে।
ইউএনডিপির কান্ট্রি ডিরেক্টর প্রধান পলিন ট্যামেসিস বলেন, কয়েক বছরে দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের অর্জন প্রশংসনীয়। সরকারের শিক্ষানীতির সুবাদে সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হয়েছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় এরই মধ্যে লিঙ্গসমতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। উচ্চশিক্ষায় এ লক্ষ্য অর্জনের কাজ চলছে। ২০১৫-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নে একসঙ্গে কাজ করতে জাতিসংঘ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রাথমিক শিক্ষা বিস্তারে বাংলাদেশ বিস্ময়কর সাফল্য পেয়েছে। এ লক্ষ্যের অন্যান্য সূচকের মধ্যে ঝরে পড়া হার কমানো এবং শিক্ষাচক্র সমাপ্তির হার বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও ভালো অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। লিঙ্গসমতা অর্জন এবং নারীর ক্ষমতায়ন ছিল এমডিজির তৃতীয় লক্ষ্যমাত্রা। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা উভয় ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ নারী-পুরুষের সমতা অর্জনে অভীষ্ট লক্ষ্যে সক্ষম হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেক এগিয়েছে। সরকারের উন্নয়ন কৌশল ও নাগরিকদের অংশগ্রহণে এমডিজির লক্ষ্য অর্জনে সন্তোষজনক অগ্রগতি হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশ রোল মডেল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রে প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীর কাছে সেবা গ্রহণের হার গত দুই দশকে প্রায় আট গুণ বেড়েছে। শিশুমৃত্যু হার হ্রাসে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের প্রভাবের সঙ্গে সঙ্গে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি ও ডায়রিয়া নিরাময় কর্মসূচি অবদান রেখেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।