নিউইয়র্কে একসঙ্গে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত গাইলেন কয়েক হাজার মানুষ

নিউইয়র্কে একসঙ্গে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত গাইলেন কয়েক হাজার মানুষ। এজন্য বৃষ্টিস্নাত রোববার বিকেলে প্রবাসী বাংলাদেশীরা জড়ো হন ব্রঙ্কসের বাংলাবাজার খ্যাত স্টারলিং এভিনিউ সংলগ্ন পার্ডি স্ট্রিটে। এ সময় তাদের মাথায় বাধা ছিলো লাল সবুজ ব্যাজ আর হাতে ছিলো বাংলাদেশের পতাকা। পরনে ছিলো বিশেষ পোশাক। বাবা-মায়ের সঙ্গে এ প্রজম্মের বিপুল সংখ্যক ছেলে মেয়েরাও এতে অংশ নেয়। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের দুই সঙ্গীত কিংবদন্তী রথীন্দ্রনাথ রায় ও শহীদ হাসানের নেতৃত্বে প্রবাস ও বাংলাদেশের দেড় শতাধিক সঙ্গীত শিল্পী এতে কন্ঠ মেলান। উত্তর আমেরিকায় স্যাটেলাইট টিভি সংযোগ বিপননকারী প্রতিষ্ঠান টোটাল ক্যাবল উদ্যেগে বাংলাদেশী আমেরিকান কমুনিটি কাউন্সিল জাতীয় সঙ্গীত গাইবো নতুন প্রজম্মকে নিয়ে এই ¯েøাগান সামনে রেখে এই আয়োজন করে। আমেরিকা নিউইয়র্কে হাজারো কন্ঠে সোনার বাংলা গাইবার ধারাবাহিক আয়োজনের এটি ছিলো প্রথম আয়োজন। এটি ধারাবাহিক ভাবে নিউইয়র্কের বাংলাদেশী অধ্যুষিত জ্যাকসন হাইটস, জ্যামাইকা এবং ব্রæকলিনে অনুষ্ঠিত হবে। এই আয়োজনকে কেন্দ্র করে বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী দুপুর থেকেই সেখানে জড়ো হতে থাকেন। বিকেল ৪টা নাগাদ পুরো পার্ডি স্ট্রিট লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। প্রায় সাত হাজারের মতো প্রবাসী বাংলাদেশী একসঙ্গে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন বলে আয়োজকরা জানান। আয়োজনকে কেন্দ্র করে সকালে সেখানে বিশাল হাইড্রোলিক মঞ্চ স্থাপন করা হয়। দুপুর হতে না হতেই উৎসুক মানুষ জড়ো হতে থাকেন। ক্রমে ভিড় বাড়তে থাকে। মেলা প্রাঙ্গনের স্টলগুলো নানা পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসে। মূলমঞ্চে প্রবাসের শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন শুরু করেন। বেলা সাড়ে চারটায় আমন্ত্রিত অতিথি ও স্পন্সর প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের নিয়ে আয়োজকরা মঞ্চে আসেন। বাংলাদেশের জাতীয়চেতনাকে সমুন্নত রাখতে এ ধরনের আয়োজন সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে জানিয়ে বক্তব্য রাখেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জাতি সংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. একে আব্দুল মোমেন, নিউইয়র্ক স্টেট এসেম্বলীম্যান লুইস সেপুলভিদা, অনুষ্ঠানের গ্রান্ড স্পন্সর রিয়েলস্টেট ইনভেস্টর আনোয়ার হোসেন, আইনজীবি পেরি ডি সিলভা, মামুনস টিউটোরিয়ালের প্রিন্সিপ্যাল শেখ আল মামুন, হাজারো কন্ঠে সোনার বাংলা আয়োজনের মূল উগ্যেক্তা টোটাল কেবলের সিইও আহমেদুল বারো ভুইয়া পুলক এবং আয়োজক সংগঠন বাংলাদেশী আমেরিকান কুমনিটি কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট আইনজীবি এন মজুমদার। এ সময় বাংলাদেশী আমেরিকান কমুনিটি কাউন্সিলের সাধারন সম্পাদক নজরুল হক, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগ নেতা আবদুর রহিম বাদশা,কমুনিটির পরিচিত মুখ ও রিয়েলেটর ব্যবসায়ী জাকির খান,আয়োজক কমিটিরআহŸাযক আব্দুল গাফফার চৌধুরী, খসরু, মনজুর চৌধুরী জগলুল, কো- অর্ডিনেটর সাখাওয়াত আলী,রেজাউল ইসলাম সেলিম, এন ইসলাম মামুন, সদস্য সিরাজুল ইসলাম খান, বোরহান উদ্দিন, শাহ আলম, ওমেন সোসাইটির প্রেসিডেন্ট ফরিদা ইয়াসমিন, নর্থ ব্রঙ্কসের কমুনিটি নেতা আব্দুর রহিম. জামাল হোসাইন, আব্দুর রকিব, মহিবুর রহমান, সিরাজ উদ্দিন সোহাগ প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আশরাফুল হাসান বুলবুল ও টোটাল ক্যাবলের কনসালটেন্ট হাসানুজ্জামান সাকী। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ড. আব্দুল মোমেন বলেন, সারা পৃথিবীতে আজ মারামারি হানাহানি চলছে। কিন্তু আমরা তা চাইনা। আমরা পৃথিবীতে শান্তি চাই। আসলে মানুষের মধ্যে হিংসা বিদ্বেষ বেড়েছে। একজন অন্যজনকে সহ্য করতে পারেন না। এগুলোই আমাদের শান্তি দিতে চায়না। এজন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জাতি সংঘে কালচারাল পিস নামে একটা প্রস্তাব তুলেছিলাম। বিশ্বেও ১৯৩টি দেশে তাতে সমর্থন দিয়েছে। তাই আমরা বিশ্বের সকল মানুষের প্রতি আহŸান জানাই আপনারা সুন্দও পৃথিবী সৃষ্টিতে এগিয়ে আসুন। ড. মোমেন হাজারো কন্ঠে সোনার বাংলা আয়োজনের ভুয়সী প্রসংশা কওে বলেন এ ধরনের আয়োজন এ প্রজম্মের ছেলে মেয়েদের মধ্যে বাংলাদেশের প্রতি গভীর মমতা সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। নিউইয়র্ক স্টেট এসেম্বলীম্যান রাইস সেপুলভিদা প্রবাসী বাংলাদেশী মানুষের প্রতি তার গভীর ভালোবাসা জানান এবং এই আয়োজনের প্রশংসা করেন। ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাংলায় তিনি সকলকে শুভেচ্ছা জানান। বাংলাদেশী কমুনিটির পাশে সবসময় ছিলেন এবং ভবিষ্যতে থাকবেন বলে আশ্বাস দেন। মূল উগ্যোক্তা টোটাল ক্যাবলের সিইও আহমেদুল বারো ভূইয়া পুলক বলেন, ইয়েসে ইউ মেক ইট। আমরা পেরেছি। সকল ষড়যন্ত্র আর চক্রান্তের জাল ভেদ কওে আমরা আমাদের জাতীয় সঙ্গীতকে এ প্রজম্মেও ছেলে মেয়েদেও কন্ঠে তুলে দিতে পেরেছি। এটাই আমাদের স্বার্থকতা। এ অন্যরকম এক ভালোলাগার মুহুর্ত। এটা এখন ইতিহাস। আমরা এখন বলতে পারি আমরা প্রবাসেও আমাদেও জাতি স্বত্তার চেতনাকে সপলবাবে চড়িয়ে ছড়িয়ে দিতে শুরু করেছি। আয়োজক সংগঠক বাংলাদেশী আমেরিকার কমুনিটি কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট এন মজুমদার বলেন, যে লক্ষ্য নিয়ে আমরা এ মহত উদ্যোগ নিয়ে ছিলাম তা এখন আর কথার কথা নয়, সত্যি। এই সত্যিকে সঙ্গে নিয়ে হাজারো কন্ঠে সোনার বাংলা লক্ষ্য কন্ঠ, কোটি কন্ঠে ছড়িয়ে যাবে গোটা বিশ্বে। বাংলাদেশীদেও মনে, মননে। অস্থিতে, অস্থিমজ্জায়। আমরা এই আয়োজনকে স্বার্থক করতে যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন তাদের ধন্যবাদ জানাই। মামুন টিউটোরিয়ালের প্রিন্সিপ্যাল শেখ আল মামুন বলেন, হাজারো কন্ঠে সোনার বাংলা এ ধরনেরএকটি মহতি আয়োজনে সঙ্গে থাকতে পেরে আমরা সত্যিই খুব খুশি। এরপরই শুরু হয়ে হাজারো কন্ঠে সোনার বাংলা গাওয়ার প্রস্তুতি। প্রথিতযশা কন্ঠশিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায় ও শহীদ হাসান প্রবাস এবং বাংলাদেশের দেড় শতাধিক শিল্পী ও আমন্ত্রিত অতিথিদের নিয়ে মঞ্চে আসেন। প্রথমেই ‘ওরা আমার মায়ের ভাষা কাইড়া নিতে চায়’ আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রæয়ারী আমিকি ভুলিতে পারি গান দুটি সমবেত কন্ঠে গাওয়া হয়। এরপর হাজারো কন্ঠ এক হয়ে গাইতে শুরু করেন আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি। উপস্থিত হাজারো বাংলাদেশী এবং তাদের সন্তানরা বাংলাদেশের পতাকা নেড়ে জাতীয় সঙ্গীতের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন। পরে বাংলাদেশের এ প্রজম্মের জনপ্রিয় শিল্পী তানভীর তারেক, ইলিয়াস। রবি চৌধুরী এবং পড়শি গান গেয়ে শ্রোতাদের মুগ্ধ করেন। তাদের সঙ্গে যন্ত্রশিল্পী ছিলেন কি বোর্ডে পাথর্, জোহান লিড গিটার, শান্ত বেইজ গিটার, তবলা তপন মোদক। সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে সাউন্ড মিক্সিং এ ছিলেন শিল্পী তানভীর শাহিন।