প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জাতিসংঘে যাচ্ছে রিকশাচালকের মেয়ে

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭০তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হচ্ছে জেলার কুলাউড়ার মেয়ে মেধাবী শিক্ষার্থী মনি বেগম।

আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে সাধারণ পরিষদের ৭০তম অধিবেশন শুরু হবে। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সর্বোচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল অংশ নেবে।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭০তম অধিবেশন ও শিশু অধিকার সম্মেলন-২০১৫ এ একমাত্র বাংলাদেশি শিক্ষার্থী হিসেবে সুলতানপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণীর ছাত্রী মনি বেগম যোগদান করতে যাচ্ছে। সে কুলাউড়া উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ঘড়গাঁও গ্রামের মরম মিয়ার মেয়ে।

উল্লেখ্য, মনি বেগম সেভ দ্যা চিলড্রেনের মাধ্যমে সারা বাংলাদেশের মধ্যে একমাত্র শিক্ষার্থী হিসেবে মনোনিত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে নিউইয়র্ক যাচ্ছে।

কে এই মনি?

স্কুলছাত্রী মনির বাবা একসময় রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন কিন্তু বয়স বেড়ে যাওয়ায় এখন আর চালাতে পারেন না। থমকে যায় পরিবার, অভাব অনঠনের কারণে মনির বড় দুই ভাই তাহির (২৩) ও পারুল (২১) লেখাপড়া ছেড়ে হাল ধরেন পরিবারের। দৈনিক ৩শ টাকা মজুরিতে স্থানীয় রবিরবাজারের ফার্নিচার দোকানের রংয়ের কাজ করেন। আর এই ৩শ টাকায় চলে এখন মনিদের ৫ সদস্যদের পরিবার।

মনি ৫ম শ্রেণী পাশ করার পর পরিবারের লোকজন লেখাপড়া না করানোর কথা চিন্তা করলেও মনির দীপ্ত মনোবলের কারণে পারেননি। স্থানীয়দের সহযোগিতায় মনি লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে।

মনি বেগম মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের ঘড়গাঁও গ্রামের মরম মিয়া ও হাওয়া বেগম দম্পত্তির কনিষ্ঠ সন্তান। মনির বড় বোনের ইতিমধ্যে বিয়ে হয়ে গেছে। বর্তমানে মনি সুলতাপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ শ্রেণীতে বাণিজ্য বিভাগে লেখাপড়া করছে।

জাতিসংঘের ৭০তম সাধারণ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়ে মনি বেগম সেভ দ্যা চিলড্রেন পোগ্রামের আওতায় বাংলাদেশের একমাত্র শিক্ষার্থী হিসেবে যোগদানের জন্য চিঠি পায়। সেখানে সে শিশুর অধিকার নিয়ে বক্তব্য দেবে। আর এ খবর চাউর হওয়ার পর থেকে এলাকায় শুরু হয় আনন্দের বন্যা। অনেকে মনিকে একনজর দেখার জন্য ছুটে যাচ্ছেন বাড়িতে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মাসুদ রানা আব্বাছ বাংলামেইলকে জানান, আমরা এ খবর শুনে কতটা আনন্দিত হয়েছি তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। মনির বাবা মরম মিয়া একসময় রিকশা চালাতেন। এখন তিনি সিলেটে একটি বাসায় কেয়ারটেকাদের দায়িত্বে রয়েছেন।

তিনি আরও জানান, মনি পরিবার এতো দরিদ্র জাতিসংঘের অধিবেশনে যাবে সে পোশাকটুকুও কিনে দিতে পারছে না। আমরা এলাকার বিত্তবানদের কাছ থেকে চাঁদা তুলে ১০ হাজার টাকার কাপড় কিনে দিয়েছি।

সুলতানপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবু জাবেদ পাপ্পু মনি বেগমের জাতিসংঘের অধিবেশনে বক্তব্য রাখার তথ্য নিশ্চিত করে বাংলামেইলকে জানান, রোববার তাকে নিয়ে রাতের ট্রেনে ঢাকা যাব। যুক্তরাষ্ট্র সফরের আগে ঢাকায় তিন দিন বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে।

এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে মনি বেগম বাংলামেইলকে বলে, ‘কখনও ভাবিনি রাজধানী ঢাকায় যেতে পারব, সেখানে আমি আপনাদের দোয়ায় আজ প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়ে জাতিসংঘে যাচ্ছি। আমি কখনও কল্পনাও করিনি এমনটি কোনোদিন ঘটতে পারে।’

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ বাংলামেইলকে জানান, আমরা অনেক আনন্দিত, আমাদের মনি এ এলাকার মুখ উজ্জ্বল করেছে। সে অতিদরিদ্র এক দিনমজুরের সন্তান হওয়া সত্ত্বেও প্রমাণ করে দিয়েছে মেধা আর ইচ্ছাশক্তি থাকলে অনেক কিছুই সম্ভব।