আন্তর্জাতিক অভিবাসন নিয়ে বিশ্ব যখন তোলপাড়, ঠিক সেই সময়ে গ্লোবাল ফোরাম অন মাইগ্রেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (জিএফএমডি) গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্ব পাচ্ছে বাংলাদেশ। আগামী অক্টোবরে এই ফোরামের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এই দায়িত্ব পালনকালে আগামী বছরের শেষদিকে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হবে আন্তর্জাতিক অভিবাসন বিষয়ক আন্তঃরাষ্ট্রীয় শীর্ষ সম্মেলন। এছাড়া দায়িত্ব পালনকালে আন্তর্জাতিক অভিবাসন ও অবৈধ মানবপাচার রোধে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হবে বাংলাদেশকে। এক্ষেত্রে দক্ষতা দেখানোরও সুযোগ পাবে বাংলাদেশ।
বর্তমানে তুরস্ক এই ফোরামের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছে। আগামী ১৪ থেকে ১৬ অক্টোবরে গ্লোবাল ফোরাম অন মাইগ্রেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের অষ্টম সম্মেলনের আয়োজন করতে চলেছে দেশটি। জাতিসংঘ এই সম্মেলনে সহযোগিতা দেবে। এই ফোরামের বেশকিছু এজেন্ডা জাতিসংঘের ২০১৫ সাল পরবর্তী সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলে (এসডিজি) অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে, যা চলতি মাসে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে পাস হওয়ার কথা রয়েছে। জাতিসংঘের প্রায় সব কটি সদস্য দেশ জিএফএমডির অনুসমর্থনকারী। অভিবাসন সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক প্রায় সব সংস্থা এই ফোরামের সঙ্গে কাজ করে থাকে। কিন্তু জনশক্তি রফতানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অভিবাসনের ক্ষেত্রে সামনের সারিতে অবস্থান করছে। তাই এই সম্মেলন থেকে বাংলাদেশ কিভাবে সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে পারে বা ২০২১ সালে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে এগিয়ে নিতে এই ফোরামকে কিভাবে কাজে লাগাতে পারে সেটি গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে, জনশক্তি রফতানিকারক দেশগুলো তাদের অভিবাসী কর্মীদের অধিকার রক্ষা ও তাদের পরিবারের উন্নয়নে কী কী সুবিধা পেতে পারে তা নিয়ে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায় করাই হচ্ছে এই সম্মেলনের লক্ষ্য।
এদিকে আগামী অক্টোবরে তুরস্কে অনুষ্ঠিতব্য জিএফএমডি সম্মেলনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি উপলক্ষে বাংলাদেশে একটি ন্যাশনাল কনসালটেশন হতে যাচ্ছে। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর সিরডাপ মিলনায়তনে এই কনসালটেশন হবে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা ও জাতিসংঘ উন্নয়ন প্রোগ্রাম যৌথভাবে এই কনসালটেশনের আয়োজন করেছে। এতে সহযোগিতা দিচ্ছে সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কো-অপারেশন (এসডিসি)। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, এনজিও প্রতিনিধি ও বিশেষজ্ঞরা এতে অংশ নেবেন। এই কনসালটেশনের মূল প্রতিপাদ্য হবে ‘টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে অভিবাসন’। তাই উন্নয়নের অন্যতম শর্ত হলো অভিবাসন এবং অভিবাসনের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ, এই বিষয়টিই প্রাধান্য দেয়া হবে ন্যাশনাল কনসালটেশনে। এই কনসালটেশনে সব পক্ষের মতামত নিয়ে একটি কৌশলপত্র নির্ধারণ করা হবে, যা তুরস্ক সম্মেলনে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে উপস্থাপন করা হবে।
এ বিষয়ে রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্স ইউনিটের (রামরু) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. তাসনিম সিদ্দিকী মানবকণ্ঠকে জানান, গ্লোবাল জিএফএমডির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পাওয়া বাংলাদেশের জন্য গর্বের বিষয়। এই দায়িত্ব নিয়ে আগামী বছর বাংলাদেশ জিএফএমডির শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করবে। এতে বিশ্বের প্রায় ১৮০টি দেশের ৫ শতাধিক প্রতিনিধি যোগ দেবেন। এখানে অভিবাসনের বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা হবে। সম্মেলনের সাইডলাইনে জনশক্তি আমদানিকারক দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কর্মী পাঠানোর ব্যাপারে সমঝোতা করার সুযোগ থাকবে। কর্মী পাঠানোর বিষয়ে বিভিন্ন প্যাকেজ নিয়েও সেসব দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনা হবে। এছাড়া ফোরামের চেয়ারম্যান হিসেবে কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের গ্রহণযোগ্যতাও বাড়বে।