রপ্তানি আয়ে চমক

আগস্টে বেড়েছে ২৮ শতাংশ

অর্থবছরের প্রথম মাসে হোঁচট খেলেও দ্বিতীয় মাসে চমক দেখিয়েছে রপ্তানি খাত। চলতি অর্থবছরের আগস্ট মাসে নিম্নমুখী ধারা কাটিয়ে উঠে রপ্তানি আয় বেড়েছে ২৮ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রা থেকে এ আয় বাড়ার হার ৮ শতাংশেরও বেশি। এক মাসে এত বেশি হারে রপ্তানি বৃদ্ধির রেকর্ড নিকট অতীতে নেই। তবে এত বেশি আয়ের পরও লক্ষ্যমাত্রা থেকে আয় পিছিয়ে থাকার ধারা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। লক্ষ্যমাত্রা থেকে প্রায় ৫ শতাংশ পিছিয়ে আছে প্রকৃত আয়।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, সমাপ্ত আগস্টে রপ্তানি আয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৭৫ কোটি ৮৪ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরের আগস্টে যা ছিল ২১৫ কোটি ৯৫ লাখ ডলার। এ আয় এ সময়ের লক্ষ্যমাত্রা ২৫৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার থেকে ২১ কোটি ৪৪ লাখ ডলার বেশি। গত জুলাই-আগস্ট এ দুই মাসে রপ্তানি আয় বেড়েছে আগের একই সময়ের তুলনায় ৪.৭১ শতাংশ। মোট আয় হয়েছে ৫৩৮ কোটি ৪৩ লাখ ডলার। এ আয় এ সময়ের লক্ষ্যমাত্রা থেকে ২৭ কোটি ৩০ লাখ ডলার বেশি। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ পরিমাণ ছিল ৫১৪ কোটি ২২ লাখ ডলার।

ইপিবির তথ্য মতে, দেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাকের রপ্তানিতে গত দুই মাসে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬.১৫ শতাংশ। আয় হয়েছে ৪৪৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এ আয় পোশাক খাতের এ সময়ের লক্ষ্যমাত্রা ৪৬২ কোটি ২০ লাখ ডলার থেকে এক কোটি ৫০ লাখ ডলার কম। গেল অর্থবছরের এ সময়ে আয়ের পরিমাণ ছিল ৪২৩ কোটি ১৭ লাখ ডলার। অর্থাৎ আয় বেড়েছে দুই কোটি ৫৩ লাখ ডলার। এর মধ্যে নিটের আয় বেড়েছে ২.৩৭ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রা থেকে শূন্য দশমিক ৮২ শতাংশ বেড়ে আয় হয়েছে ২২৫ কোটি ৮৬ লাখ ডলার। অন্যদিকে ওভেনের আয় ৯.৯৩ শতাংশ বাড়লেও লক্ষ্যমাত্রা থেকে ৬.৫৩ শতাংশ কমে আয় হয়েছে ২২২ কোটি ৬৪ লাখ ডলার।

পোশাক খাতের আয় বাড়ার ফলে গড় রপ্তানি বেড়েছে। তবে ছোট-বড় অনেক পণ্যের রপ্তানি আয় গত দুই মাসে কমেছে। এর মধ্যে চিংড়ির রপ্তানি আয় কমেছে ৪০.৬৫ শতাংশ। হিমায়িত খাদ্যের কমেছে ৪০ শতাংশ। মৎস্য এবং চিংড়ি খাতের অন্যান্য পণ্যের কমেছে ৬৪.২৯ শতাংশ। প্লাস্টিকের কমেছে ১৫ শতাংশ। রেশম পণ্য থেকে আয় হয়নি। পাটের বস্তা এবং সুতায় কমেছে ৬ এবং ৪ শতাংশ। এ ছাড়া বড় পণ্যের মধ্যে সিরামিকের আয় কমেছে ৮ শতাংশ। অন্যদিকে আয় বাড়ার তালিকায় উল্লেখযোগ্য পণ্য হচ্ছে রাবার, বিভিন্ন ধরনের ফল. কাঁচা পাট, জাহাজ, ফার্নিচার ইত্যাদি।

জানতে চাইলে বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, টানা তিন বছর ধরে দেশের রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি কমছে। গেল অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা থেকে রপ্তানি কম হয়েছে ৬ শতাংশ। প্রায় ১২ শতাংশের প্রবৃদ্ধি ৩.৩৯ শতাংশে নেমে এসেছে। তাই রপ্তানি আয়ের এই ইকিবাচক ধারায় ফিরে আসা খুবই আশার কথা। এর ফলে বোঝা যায় বিদেশি ক্রেতাদের আস্থা ফিরেছে। তবে একে ধরে রাখতে হবে।

আতিকুল ইসলাম আরো বলেন, ‘আমাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ উৎপাদন ব্যয় কমাতে হবে। শ্রমিকের দক্ষতা বাড়াতে হবে।’ এ ছাড়া গ্যাস-বিদুতের দামও কমিয়ে আনতে হবে বলে তিনি মনে করেন। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাও রপ্তানি আয় বাড়ার অন্যতম কারণ বলে তিনি মন্তব্য করেন।

প্রসঙ্গত, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রপ্তানি আয় হয়েছিল তিন হাজার ১২০ কোটি ৯০ লাখ ডলার (৩১.২০ বিলিয়ন ডলার)। চলতি অর্থবছরে রপ্তানি আয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ৩৫০ কোটি ডলার (৩৩.৫০ বিলিয়ন ডলার)।