দেশে চতুর্থ প্রজন্মের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি জ্ঞান সমৃদ্ধ দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে। গাজীপুরের হাইটেক পার্ক এলাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় নামে এটি প্রতিষ্ঠা হবে। অন্যসব বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে আলাদা প্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষায়িত এই উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো থাকছে। সেখানে সুপার নিউমারি অধ্যাপক ও এমিরেটাস অধ্যাপকের পদ রাখা হয়েছে। বিদেশে কর্মরত বা অধ্যয়নরত মেধাবী বাংলাদেশি গবেষকদের খণ্ডকালীন বা ভিজিটিং শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হবে। শিক্ষার্থীদের উৎকর্ষ সাধন ও গবেষকদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে থাকছে বিজনেস ইনকিউবিটর।
ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়ে সবিশেষ পাঠদান এবং তাত্ত্বিক ও প্রয়োগিক বিষয়ের ওপর গবেষণা হবে। এটি হবে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষা ও গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠান। সার্টিফিকেট কোর্স, ডিপ্লোমা ও প্রশিক্ষণ কোর্সে পাঠদানের সুযোগও রাখা হয়েছে। সেখানে শিক্ষার্থীরা উচ্চতর প্রযুক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত রোবট, এরোটিক্স, সাইবার নিরাপত্তা, অ্যাডভান্সড টেকনোলজি, ই-কমার্স, ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়গুলো শিখবে। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের বিষয়গুলো হচ্ছে ডিজিটাল ডেভেলপমেন্ট, ডিজিটাল টেকনোলজি, বায়োটেকনোলজি, ন্যানোটেকনোলজি অ্যাডভান্সড টেকনোলজি, রবোটিক্স আইটি বা আইটিএস, নেভিগেশন/ভ্যাইকাল নেভিগেশন, গ্রীন টেকনোলজি, এরোটিক্স, ই-কমার্স, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং, হার্ডওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং, টেলিকমিউনিকেশন, নেটওর্য়াক অ্যান্ড কমিউনিকেশন ম্যানেজমেন্ট, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনা, সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা, ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা।
এ প্রসঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব জিন্নাত রেহানা জানান, আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং শেষে ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়-২০১৪ আইনটি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। গাজীপুরে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে হবে বলে তিনি জানান।
প্রথমবারের মতো বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের উৎকর্ষ সাধন ও গবেষকদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে বিজনেস ইনকিউবিটর করা হবে। সেখানে শিক্ষার্থীদের আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানের সঙ্গে যেমনি পরিচয় করিয়ে দেয়া হবে, তেমনি গবেষকদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে এটি কাজ করবে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী ছাড়াও গবেষকরা সম্পূর্ণ আবাসন সুবিধা এবং বৃত্তি ও ভাতা পাবেন। যেসব বাংলাদেশি বিদেশের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন তারাও এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা ও গবেষণার সুযোগ পাবেন। বিশেষায়িত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি দেশি-বিদেশি শিক্ষক-গবেষকদের আকৃষ্ট করতে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, শিক্ষক ও গবেষকদের জন্য একটি স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো থাকবে। ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের সর্বনিম্ন পদ হবে পিএইচডি অথবা সমমান ডিগ্রিধারীর সহকারী অধ্যাপক। এই বিশ্ববিদ্যালয় হবে মাল্টিডিসিপ্লিনারি ও গবেষণাভিত্তিক প্রযুক্তিনির্ভর আন্তর্জাতিক মানের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বিশেষায়িত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাকর্ম দেশীয় উৎপাদন বাড়াতে এবং বাংলাদেশের জাতীয় জীবনে বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে অবদান রাখবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) হেলাল উদ্দিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয় পাঠদান এবং তাত্ত্বিক ও প্রয়োগিক বিষয়ের ওপর গবেষণার সুযোগ থাকবে। এটি প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আইটি শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা।
জানা গেছে, তথ্য-প্রযুক্তিবিদ মোস্তাফা জব্বারের প্রস্তাবিত পরিকল্পনা অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ক্লাসরুম, হলরুম, বসার ঘর, খাবার ঘর, ছাত্রাবাস, শিক্ষক কোয়ার্টার, লবিতে থাকবে বড় পর্দার মনিটর। তাতে থাকবে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা। এর পাশাপাশি থাকবে ইন্টারনেট কিয়স্ক। সব ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকের থাকবে বহনযোগ্য ডিজিটাল যন্ত্র। সব পাঠ্য বিষয় হবে ডিজিটাল। সব বিষয়কে ইন্টারঅ্যাকটিভ মাল্টিমিডিয়া সফটওয়্যারে রূপান্তর করে সেটি পাঠদানের পদ্ধতি হিসেবে প্রয়োগ করা হবে। কাগজের বইকে ডিজিটাল সফটওয়্যারে রূপান্তর করে সেই বইসমূহ রেফারেন্স হিসেবে পাঠ্য করা হবে। প্রত্যেকের ইন্টারনেটের গতি হবে কমপক্ষে ১ এমবিপিএস।
পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা হবে অনলাইন। খাবারের ব্যবস্থা থেকে ঘর পরিষ্কার করা পর্যন্ত সব কাজের ব্যবস্থাপনা ও তদারকি হবে তথ্যপ্রযুক্তিতে। সব পাবলিক প্লেসে বিরাজ করবে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা। প্রয়োজনীয় পর্যবেক্ষণ চলবে সব পাবলিক স্থানে। প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার জন্য যতটা সম্ভব ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে। তালার বদলে ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা চোখের মনি মেলানোতেই একসেস থাকবে। ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ে এগুলো অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে কিনা এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এখনো নির্ধারণ করেনি। পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প যাত্রা শুরু হলে বিষয়গুলো সংযোজন ও বিয়োজন হবে বলে এক কর্মকর্তা জানান।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি গাজীপুর সফরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দেন। এরপর ২০১০ সালের ৩১ মার্চ ইউজিসিকে এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় আইনের খসড়া প্রণয়নের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল।