পানি শোধনাগার নির্মাণে ৪৫০০ কোটি টাকার প্রকল্প

রাজধানীবাসীর বিশুদ্ধ পানির চাহিদা মেটাতে নতুন প্রকল্প নিয়েছে সরকার। সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে সায়েদাবাদে নতুন পানি শোধনাগার নির্মাণ করবে ঢাকা ওয়াসা। আজ মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ-সংক্রান্ত একটি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে পরিকল্পনা কমিশনের এনইসিতে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
জানা গেছে, এ প্রকল্পের আওতায় দৈনিক ৪৫ কোটি লিটার ক্ষমতাসম্পন্ন একটি শোধনাগার নির্মাণ করা হবে। সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার প্রকল্প প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের পাশেই এটি নির্মাণ করা হবে। মেঘনা নদী থেকে পানি আনার পর তা শোধনাগারে সরবরাহ করা হবে। সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার (ফেজ-৩) প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৫৯৭ কোটি টাকা। এ ব্যয়ের মধ্যে প্রকল্প সাহায্য থেকে নেওয়া হবে ৩ হাজার ৫৩ কোটি টাকা। সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে যোগান দেওয়া হবে ১ হাজার ৫১৪ কোটি টাকা। ঢাকা ওয়াসা ৩০ কোটি টাকা ব্যয় করবে।
ঢাকা ওয়াসার এক কর্মকর্তা সমকালকে জানান, শীতলক্ষ্যা নদীর পানি গ্রীষ্মকালে ভয়াবহভাবে দূষিত হয়ে যাওয়ার কারণে এই পানি ভবিষ্যতে শোধনাগারে ‘র ওয়াটার’ হিসেবে ব্যবহারের উপযুক্ততা হারাতে পারে। এ অবস্থার প্রেক্ষাপটে বিস্তারিত সম্ভাব্য সমীক্ষার আলোকে মেঘনা নদীতে প্রথম এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে স্থাপিত ট্রিটমেন্ট প্লান্ট ২টির জন্য প্রয়োজনীয় ‘র ওয়াটার’ সংগ্রহ করার জন্য তৃতীয় পর্যায়ের আওতায় সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হবে। দৈনিক ৪৫ কোটি লিটার ক্ষমতাসম্পন্ন ভূ-উপরস্থিত পানি শোধনাগার নির্মাণের মাধ্যমে ভূ-গর্ভস্থ পানির নির্ভরতা কমানো হবে। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ঢাকা মহানগরীর বর্তমান দেড় কোটি মানুষের দৈনিক ২২০ কোটি লিটার পানির চাহিদার বিপরীতে ২০০ কোটি লিটার সরবরাহ করা হচ্ছে। মহানগরীর জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে প্রতিনিয়তই যে হারে পানির চাহিদা বাড়ছে তাতে ২০৩৫ সালে পানির চাহিদা হবে প্রায় দৈনিক ৫২৬ কোটি লিটার। পানি সরবরাহের ক্ষেত্রে ঢাকা ওয়াসা মূলত ভূ-গর্ভস্থ পানির পানির ওপর নির্ভরশীল। ভূ-গর্ভস্থ থেকে পানি উত্তোলনের ফলে প্রতি বছর পানির স্তর ২ থেকে ৩ মিটার নিচে নেমে যাচ্ছে। যা শুধু পরিবেশের জন্যই হুমকি নয় বরং ভবিষ্যতে খাবার পানি সরবরাহের জন্যও হুমকিস্বরূপ। এসব দিক বিবেচনায় এনে ঢাকা ওয়াসা ভূ-উপরস্থিত পানি ব্যবহারের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।
একনেকে অনুমোদন পেলে ঢাকা ওয়াসা ২০২০ সালের জুন নাগাদ প্রকল্পের কাজ শেষ করার পরিকল্পনা করেছে। নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলার হরিয়া অঞ্চলে মেঘনা নদীর ভূ-উপরস্থিত পানি তুলনামূলক কম দূষিত। এ জন্য মেঘনা নদীর ওই স্থান থেকে অপরিশোধিত পানি নেওয়া হবে। এ প্রকল্পের আওতায় প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণ করা রয়েছে। ফ্রান্স সরকারের সহযোগিতায় পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছে।
আজ একনেক বৈঠকে আরও পাঁচটি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে_ টাঙ্গাইলে বিসিক শিল্প পার্ক নির্মাণ, ইক্ষু ইনস্টিটিউটের সমন্বিত গবেষণা কার্যক্রম জোরদার, বগুড়ার যমুনা নদীর ডানতীর সংরক্ষণ, কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প সংশোধন এবং মেঘনা ও গোমতী সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ প্রকল্প।