গার্মেন্টে আগামী পাঁচ বছর শীর্ষে থাকবে বাংলাদেশ

রাজনৈতিক অস্থিরতা, মজুরি বৃদ্ধি এবং কর্মপরিবেশ নিয়ে শঙ্কা থাকলেও পোশাক রপ্তানিতে এখনো সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ। এমনকি আগামী পাঁচ বছর পোশাকের সরবরাহকারী দেশ হিসেবে ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায় এক নম্বরে থাকবে দেশটি। তবে এ সময় বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারে আফ্রিকার দেশগুলো। সম্প্রতি এমন একটি জরিপ প্রতিবেদন তুলে ধরে বৈশ্বিক ব্যবস্থাপনা কনসালটিং প্রতিষ্ঠান ম্যাককিনসে অ্যান্ড কম্পানি। এতে বলা হয়, আগামী পাঁচ বছর ক্রেতারা বাংলাদেশের কাছ থেকে পোশাক ক্রয় বাড়াবে। এ সময়ে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ৭-৯ শতাংশ করে প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে প্রতিবছর। বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী থাকবে ভারত ও ভিয়েতনাম। জরিপটি পরিচালিত হয় এ বছরের জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারিতে। এতে বিশ্বের শীর্ষ ৪০টি পোশাক ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের ৪০ জন প্রধান পারচেজিং অফিসারের (সিপিও) মতামত নেওয়া হয়েছে।

‘সোর্সিং ইন অ্যা ভোলাটাইল ওয়ার্ল্ড : দি ইস্ট আফ্রিকা অপরচুনিটি’ শীর্ষক এ প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক সিপিওরা আগামী পাঁচ বছরের জন্য পোশাকের শীর্ষ সরবরাহকারী দেশ হিসেবে পছন্দের তালিকায় বাংলাদেশকে রেখেছেন। এ ক্ষেত্রে ৪৮ শতাংশ উত্তরদাতা বাংলাদেশ শীর্ষ তিনে থাকবে বলে মতামত দিয়েছেন। ৬২ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন, তাঁরা আগামী পাঁচ বছর বাংলাদেশ থেকে ক্রয় বাড়ানোর চিন্তা করছেন।

জরিপে শীর্ষদশ পোশাক সরবরাহকারী দেশ হিসেবে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ভিয়েতনাম। ৩৩ শতাংশ উত্তরদাতা এ দেশটির পক্ষে মত দিয়েছেন। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে ভারত, মিয়ানমার এবং তুরস্ক। ৩০ শতাংশ উত্তরদাতা এ তিনটি দেশের পক্ষে মতামত দিয়েছেন। ২৩ শতাংশ উত্তরদাতা মত দিয়েছেন চীনের পক্ষে, ১৩ শতাংশ এগিয়ে রেখেছেন ইথিওপিয়াকে, ১০ শতাংশ ইন্দোনেশিয়ার পক্ষে এবং পাঁচ শতাংশ সিপিও মিসর, শ্রীলঙ্কা এবং তিউনিশিয়াকে শীর্ষ সরবরাহকারী দেশ হিসেবে স্থান দিয়েছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, অবশ্যই উল্লেখ করা দরকার যে শীর্ষে থাকা এ তিন দেশের সম্মিলিত রপ্তানি ডলারের হিসাবে চীনের রপ্তানির মাত্র শতকরা তিন ভাগের এক ভাগ। নিশ্চিতভাবে পোশাক রপ্তানিতে এখনো জায়ান্ট দেশ চীন। বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির আটগুণ বেশি এখনো চীন থেকে যায়। তবে সম্প্রতি অনেক পোশাক ক্রেতা কম্পানি চীন থেকে ফিরে যাচ্ছে। এর ফলে ভবিষ্যতে চীনের পোশাক রপ্তানি প্রতিযোগিতায় পেছাতে পারে। সিপিওদের প্রায় শতকরা তিন ভাগই বলেছেন, আগামী পাঁচ বছর চীন থেকে পোশাক সরবরাহ কমবে। তবে চীনের বর্তমান রপ্তানি পরিসংখ্যান দেখে তা মনে হয় না। জরিপে বলা হয়েছে, চীনের অনেক পোশাক কম্পানি এখন কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম এবং মিয়ানমার ও অন্যান্য সম্ভাবনাময় দেশে পোশাক কারখানা প্রতিষ্ঠার দিকে ঝুঁকছে।

ম্যাককিনসে জানায়, বেশ কিছু আফ্রিকান দেশ পোশাকের বিশ্ববাজারে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠছে। গত কয়েক বছর ধরে চীনের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশে রানা প্লাজার মতো ভয়াবহ কয়েকটি দুর্ঘটনা পোশাকের আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের বিকল্প উৎস খুঁজতে বাধ্য করে। তাদের সেই বিকল্প বাজার হয়ে উঠছে কলম্বিয়া ও ইথিওপিয়াসহ আফ্রিকার দেশগুলো। সম্প্রতি ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আফ্রিকার বেশির ভাগ দেশই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পাদিত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির সুবিধা পাচ্ছে। এতে অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে খুচরা কম্পানিগুলোরও। রয়েছে পর্যাপ্ত শ্রমিক ও কাঁচামালও। যেখানে এশিয়ার ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়ার মতো অনেক দেশকে তুলার জন্য অন্য দেশের ওপর নির্ভর করতে হয়। অথচ আফ্রিকা নিজেদের প্রয়োজনীয় তুলা নিজেরাই জোগান দিতে পারে। এতে উৎপাদন সময়ও কমে আসে। বর্তমানে ওয়ালমার্ট, জেসি পেনি এবং লেভিসসহ আরো কিছু কম্পানি সাবসাহারা আফ্রিকা থেকে পোশাক সংগ্রহ করছে। বৈশ্বিক কম্পানিগুলোর এ প্রবণতা প্রমাণ করছে পোশাকের উৎস হিসেবে তারা এখন আফ্রিকাতেই বিকল্প খুঁজছে। ইথিওপিয়ায় বিশ্বব্যাংকের সাবেক কান্ট্রি ডিরেক্টর গুয়াংগ জেড চেন বলেন, ‘বিশ্ব অর্থনীতিতে উৎপাদনকেন্দ্র প্রতিনিয়তই পরিবর্তিত হচ্ছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি পোশাকের মতো উৎপাদন বাজার এখন এশিয়া থেকে সরে যাচ্ছে।’