১৯৯৬ সালে শেয়ার কেলেঙ্কারির মামলায় চিক টেক্সটাইলের শেয়ারের দর কৃত্রিমভাবে বাড়ানোর অভিযোগে ওই কোম্পানির দুই পরিচালককে চার বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে আসামিদের প্রত্যেককে ৩০ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়া জরিমানা পরিশোধ না করলে আসামিদের আরো ছয় মাস কারাদণ্ড দিয়েছেন পুঁজিবাজার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল। আসামিরা হলো- চিক টেক্সটাইলের পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মো. মাকসুদুর রসূল ও ইফতেখার মোহাম্মদ।
বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশনে অবস্থিত পুঁজিবাজার বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক হুমায়ুন কবির (জেলা ও দায়রা জজ) গতকাল সোমবার এ রায় ঘোষণা দেন। এ সময় তিনি এ মামলার পুরো রায় পড়ে শোনান। তবে রায় ঘোষণার সময় আদালতে আসামিরা অনুপস্থিত ছিলেন। এটা ১৯৯৬ সালের শেয়ার কেলেঙ্কারি মামলার প্রথম রায়।
রায়ে উল্লেখ রয়েছে, এ মামলার ঘটনা ও পারিপার্শ্বিক অবস্থার আলোকে বাদীপক্ষের উপস্থিতিতে সাক্ষ্যসমূহ পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন করে দেখা যায় যে, বাদীপক্ষের আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করেছে। কাজেই আসামিরা শাস্তি পাবে। রায়ে আরো বলা হয়, চিক টেক্সটাইলের পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মো. মাকসুদুর রসূল ও ইফতেখার মোহাম্মদ উভয়কে সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ এর ২৪ ধারা অনুযায়ী দোষী সাব্যস্ত করে প্রত্যেককে চার বছর করে কারাদণ্ড ও ৩০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এ ছাড়া এ জরিমানার অর্থ পরিশোধ না করলে তাদের আরো ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। আদায় করা জরিমানার অর্থ সরকার ইচ্ছা করলে ঘটনার সময় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের স্বার্থে ব্যয় করতে পারবে।
অভিযুক্তরা গ্রেপ্তার বা আত্মসমর্পণ করার তারিখ থেকে তাদের শাস্তির মেয়াদ গণনা করা হবে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে রায়ের অনুলিপি চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), পুলিশ কমিশনার, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর পাঠান হলো। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মাসুদ রানা খান বলেন, চিক টেক্সটাইলের মামলা সংক্রান্ত যাবতীয় নথিপত্র ও যুক্তিতর্ক আদালতের কাছে উপস্থাপন করেছি। এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সব কিছু প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। যার পরিপ্রেক্ষিতে বিজ্ঞ আদালত সার্বিক দিক বিবেচনা করে এ রায় ঘোষণা দেন।
এর আগে গত ২৭ আগস্ট এ মামলার রায় ৩১ আগস্ট ধার্যের ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। জানা গেছে, চিক টেক্সটাইলের শেয়ার কেলেঙ্কারি মামলার আসামিরা হলো- কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মো. মাকসুদুর রসূল ও পরিচালক ইফতেখার মোহাম্মদ। এ ছাড়া মামলায় চিক টেক্সটাইল কোম্পানিকেও আসামি করা হয়। বিশেষ আদালতে মামলা শুরু হলেও আসামিদের কেউই আদালতে হাজির ছিলেন না, কিংবা তাদের পক্ষে কোনো আইনজীবীও আদালতে ছিলেন না। ১৯৯৬ সালে চিক টেক্সটাইলের শেয়ারের দর কৃত্রিমভাবে বাড়ানোর অভিযোগে আসামি দুজনের বিরুদ্ধে মামলা করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। পরবর্তী সময়ে তারা উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেন। কিন্তু বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচার কাজ শুরু হওয়ার পর আদালতে হাজিরা না দেয়ায় গত ২৮ জুন গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিলেন আদালত।
এর আগে চিক টেক্সটাইলের মামলায় ৬ জুলাই বাদী হিসেবে প্রথম সাক্ষী দেন বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান মনির উদ্দিন আহমেদ। ২৫ আগস্ট মঙ্গলবার শেয়ারবাজার বিষয়ক বিশেষ ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. রুহুল খালেক ও সিনিয়র এক্সিকিউটিভ দেলোয়ার হোসেন।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৬ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে আসামিরা চিক টেক্সটাইলের শেয়ারের দর বাড়ানোর লক্ষ্যে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড করেছেন। ওই সময় বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণার মাধ্যমে ভালো মুনাফা করার জন্য ইঞ্জিনিয়ার মো. মাকসুদুর রসূল ৮ লাখ ২৮ হাজার ৪৬৪টি ও পরিচালক ইফতেখার মোহাম্মদ ৮ লাখ ৩৫ হাজার শেয়ার অপারেটর করেন, যার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৭ সালের ২৭ মার্চ পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ ১৯৬৯-এর ২১ ধারা অনুযায়ী একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। পরে ১৯৯৭ সালের ২ এপ্রিল বিএসইসির ওই সময়ের নির্বাহী পরিচালক এম এ রশীদ খান বাদী হয়ে তদন্তের সব প্রমাণাদিসহ আসামিদের বিরুদ্ধে ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে মামলা করেন। পরবর্তী সময়ে ১৯৯৯ সালে মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলাটি স্থানান্তর করা হয়। পুঁজিবাজার বিশেষ ট্রাইব্যুনালে মামলাটির নতুন নম্বর দেয়া হয় ১/২০১৫।