এশিয়ান হাইওয়ের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমার হয়ে থাইল্যান্ড দিয়ে চীনসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে যাতায়াতব্যবস্থা সহজ করতে সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। সে জন্য কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার বালুখালি থেকে মিয়ানমারের ঘুনধুম সীমান্ত পর্যন্ত দুই কিলোমিটার দীর্ঘ একটি সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সড়কটি নির্মাণে ব্যয় হবে ৫৫ কোটি টাকা। এই সংযোগ সড়ক নির্মাণকাজ শেষ হলে ভারত-বাংলাদেশ-মিয়ানমার-থাইল্যান্ডের মধ্যে সরাসরি যাতায়াত করা যাবে বলে আশা করছেন কর্মকর্তারা। ‘বালুখালি থেকে ঘুনধুম পর্যন্ত বাংলাদেশ-মিয়ানমার মৈত্রী সড়ক নির্মাণ’ শিরোনামের একটি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য আজ মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করা হচ্ছে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এ সড়কের নির্মাণকাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে মিয়ানমার অংশে বাউলিবাজার থেকে ২৩ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হবে। তবে এ সড়ক নির্মাণে কে অর্থায়ন করবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। কর্মকর্তারা আশা করছেন, রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের যে অবনতি হয়েছে, তা ধীরে ধীরে কমে আসবে। সড়ক নির্মাণের কাজ শেষ হলে দ্বিপক্ষীয় ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারিত হবে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক সুসম্পর্ক গড়ে উঠবে।
সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ-মিয়ানমার মৈত্রী সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ৫৬ মিটার দীর্ঘ একটি সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া চারটি কালভার্ট নির্মাণ করা হবে। সড়ক নির্মাণের জন্য ১০ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। এ প্রকল্পের আওতায় সিসি ব্লকসহ সাইড ড্রেন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সূত্র মতে, মিয়ানমারের চেয়ে বাংলাদেশ তুলনামূলক পণ্য বেশি আমদানি করে। ২০১২-১৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ চীন থেকে আট কোটি ডলার সমপরিমাণ অর্থের পণ্য আমদানি করেছে। আর মিয়ানমার করেছে দুই কোটি ডলার পণ্য আমদানি।
কর্মকর্তারা বলছেন, এশিয়ান হাইওয়ের অংশ হিসেবে সড়কটি নির্মাণের পরিকল্পনা থাকলেও মূলত মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নেই প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছে। সরকারের নীতিনির্ধারকরা আশা করছেন, বাংলাদেশ-মিয়ানমার মৈত্রী সড়কটি নির্মিত হলে দুই দেশের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগব্যবস্থা স্থাপন হবে। নিরাপত্তাব্যবস্থাও জোরদার করা যাবে। একই সঙ্গে সড়ক উন্নয়নের মাধ্যমে পর্যটনশিল্পের উন্নতি ঘটবে। দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা পাবে। সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, মিয়ানমার থেকে প্রতিবছর বাংলাদেশের কক্সবাজারে অনেক পর্যটক আসে। এ সড়কটি নির্মিত হলে আরো বেশি করে পর্যটক আসবে। এ ছাড়া দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান যে বাণিজ্য, সেটি আরো সম্প্রসারিত হবে।