অর্থনীতি বদলাবে সাগর তলের সম্পদ

পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনায় আহরণের তাগিদ

সাগরতলে লুকিয়ে থাকা সম্পদ ব্যবহার করতে পারলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে। এ জন্য প্রয়োজন দূরদর্শিতা, মেধা ও প্রজ্ঞা। সাগরকেন্দ্রিক এই নীল অর্থনৈতিক (ব্লু ইকোনমি) সম্ভাবনাকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশের পরিচয় নদীমাতৃক দেশ থেকে সাগরমাতৃক দেশে পরিণত হবে। চট্টগ্রামে গতকাল শনিবার দুপুরে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশ (আইবিএফবি) চট্টগ্রাম চ্যাপ্টার আয়োজিত ‘ব্লু ইকোনমি-বাংলাদেশ’ শীর্ষক এ সেমিনারে বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

আইবিএফবি চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের চেয়ারম্যান মো. সাখাওয়াত হোসেনের সঞ্চালনায় নগরের হল-২৪ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) খুরশীদ আলম। সেমিনারে খুরশীদ আলম বলেন, সমুদ্রে ও সমুদ্রের তলদেশে নিহিত সম্পদ অন্বেষণ-আহরণ সরঞ্জাম ও পরিবহন ব্যবস্থায় আমাদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কিন্তু প্রযুক্তিগত জ্ঞান, কারিগরি দক্ষতা ও বিশেষজ্ঞ দল আছে। যারা খুব কম সময়ে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

খুরশীদ আলম আরো বলেন, পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সমুদ্র ও সামুদ্রিক সম্পদ অন্বেষণ ও আহরণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, সমুদ্র তীর এবং তীর থেকে দূরবর্তী উভয় ক্ষেত্রে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা।

একটি পক্ষ বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা জয়ের বিষয়ে অপপ্রচার করছে উল্লেখ করে খুরশীদ আলম বলেন, ‘তাদের বোঝা উচিত এই জয় কারো একার নয়, এই জয় পুরো জাতির। আগে আমাদের প্রায় ৪০ হাজার বর্গকিলোমিটার সমুদ্রসীমা ছিল। আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে আমরা আরো ৭৮ হাজার বর্গকিলোমিটার সমুদ্রসীমা পেয়েছি। সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে সাগরকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারলে দেশের অবস্থান অনেক উঁচুতে চলে যাবে।’

‘ব্লু ইকোনমি’ সাম্প্রতিক ধারণা উল্লেখ করে খুরশীদ আলম বলেন, ‘সমুদ্র উপকূলীয় জাতি হিসেবে এ ক্ষেত্রে আমাদের কাঙ্ক্ষিত অর্জন অনেক। পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সামুদ্রিক সম্পদ অন্বেষণ ও আহরণ এই অর্থনীতির মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত।’

ব্লু ইকোনমি সমৃদ্ধির নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে উল্লেখ করে খুরশীদ আলম বলেন, ‘সাগরকেন্দ্রিক পণ্য পরিবহন, বন্দর, মৎস্য সম্পদ, পর্যটন, খনিজ সম্পদসহ বিভিন্ন খাতে আমাদের সমৃদ্ধ হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বঙ্গোপসাগরকে অর্থনৈতিক উন্নতি ও সমৃদ্ধির কেন্দ্রস্থলে পরিণত করা সম্ভব।’

ব্লু ইকোনমির অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান সমুদ্র বিশেষজ্ঞ রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) খুরশীদ আলম। তিনি বেসরকারি উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘সরকার কী করবে সেদিকে তাকিয়ে না থেকে নিজ উদ্যোগে শিল্প গড়ে তুলুন। যাঁরা আগে ব্লু ইকোনমির সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারবেন তাঁরাই এগিয়ে থাকবেন।’

সেমিনারে জানানো হয়, প্রতিবেশী দেশ ভারত ও থাইল্যান্ড গত বছর সাগর থেকে ৮০ লাখ মেট্রিক টন মৎস্য আহরণ করেছে। আর বাংলাদেশ আহরণ করেছে মাত্র ৭৩ হাজার মেট্রিক টন মাছ। আমাদের দেশে উচ্চ প্রযুক্তির ফিশিং ট্রলার না থাকায় গভীর সাগরে মাছ শিকারে বাংলাদেশি জাহাজ যেতে পারে না।

বর্তমানে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা প্রায় ৬৬৪ কিলোমিটার লম্বা। কিন্তু এর মধ্যে আমরা মাছ শিকারের জন্য ব্যবহার করছি মাত্র ৬০ কিলোমিটার এলাকা। সাগরের বিশেষ অর্থনৈতিক এলাকা এবং কন্টিনেন্টাল সেলফ এলাকায় মাছ শিকার কিংবা অর্থনৈতিক ব্যবহারের সক্ষমতা এখনো তৈরি হয়নি।

বাংলাদেশকে অপার সম্ভাবনার দেশ উল্লেখ করে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, ব্লু ইকোনমি ব্যবহার করে দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব। এখন সাহস, মেধা ও প্রজ্ঞাকে কাজে লাগিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া দরকার। সেমিনারে অন্যদের মধ্যে আইবিএফবির সভাপতি হাফিজুর রহমান, আইবিএফবির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী বক্তব্য দেন। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন লঙ্কাবাংলা চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন। সেমিনারের শেষ পর্বে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) খুরশীদ আলম।