‘ব্যাংকের অর্থায়ন সহজলভ্য হলে চরে উন্নয়ন ঘটবে’

চরাঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচির (সিএসআর) আওতায় নিয়ে আসতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আহ্বান জানিয়েছেন গভর্নর ড. আতিউর রহমান। গতকাল শনিবার ‘সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ’ শীর্ষক এক সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান। চর লাইভলিহুড প্রোগ্রাম বা সিএলপি, ম্যাকওয়েল স্ট্যাম্প, অস্ট্রেলিয়ানএইড, ইউকেএইড যৌথ উদ্যোগে ওই সম্মেলনের আয়োজন করে। ঢাকার গুলশানের লেকশোর হোটেলে সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. আতিউর রহমান বলেন, ‘চর লাইভলিহুড প্রোগ্রাম বা সিএলপি একান্তভাবে দুর্গম চরের অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে। চরের জীবন মূল ভূখণ্ডের জীবন থেকে অনেকটাই আলাদা। স্বাস্থ্য, শিক্ষার মতো মৌলিক চাহিদা, জীবন-জীবিকা, অন্যান্য সেবা ও সুযোগ থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন চরের লাখো মানুষ। কঠিন তাদের জীবন-সংগ্রাম। এমন অনেক চর আছে যেখানে বংশানুক্রমে অনেক পরিবার শিক্ষার আলো থেকে একেবারেই বঞ্চিত। মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় চর এলাকার স্বাস্থ্যসেবার অবস্থাও করুণ। চরে কর্মসংস্থান ও আয়ের উৎসও সীমাবদ্ধ।’

তবে সুচিন্তিত কৌশল গ্রহণ করা গেলে চরেও আয় বৃদ্ধির যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন গভর্নর ড. আতিউর রহমান। তিনি আরো বলেন, এসব অঞ্চলে টেকসই দারিদ্র্য নিরসনের জন্য বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং একই সঙ্গে অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কাজ করার সময় কিছু বিশেষ বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি রাখাও জরুরি। এসব বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে সিএলপি চর এলাকায় তাদের কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেড. আতিউর রহমান বলেন, ‘যদি চরে আরো স্বাস্থ্যসেবা, প্রাথমিক শিক্ষা, কারিগরি শিক্ষার প্রসার ঘটানো যায় এবং ব্যাংকের অর্থায়ন সহজলভ্য করা যায় তাহলে সেখানকার মানুষের জীবনমানের আরো উন্নয়ন হবে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে।’

গভর্নর বলেন, ‘চর জীবনের সঙ্গে তিনি আগুন্তুক নন, অতি পরিচিত। চরের স্থিতিশীলতা রক্ষা একটি বিরাট ঝুঁকি।’ বাজারভিত্তিক অর্থনীতিতে প্রাণ, এসিআইয়ের মতো যেসব প্রতিষ্ঠান সিএসআর কার্যক্রমে এগিয়ে আসছে, তাদের তিনি সাধুবাদ জানান।

গভর্নর বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় অর্থে যারা প্রতিষ্ঠিত তাদের অবশ্যই সমাজকে কিছু দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন করা হয়েছে। সে মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে হবে। পশুসম্পদের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ৫ শতাংশ সুদে ২০০ কোটি টাকার পুনরর্থায়ন স্কিম খুলেছে। আমি বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট নির্বাহীদের বলব, এ তহবিলের বেশির ভাগ যেন চরের মানুষেরা পায়। আমি দেখতে চাই, চর হবে বাংলাদেশের সবুজ ক্ষেত্র। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও টেকসই অর্থায়নের মাধ্যমে এই চরের কমিউনিটি গড়ে তুলতে হবে।’