পদ্মা সেতুর ট্রায়াল পাইলিং শুরু

পদ্মা সেতুর কনস্ট্রাকশন ট্রায়াল পাইল স্থাপনের কাজ গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে। দেশি-বিদেশি প্রকৌশলীরা সকাল সাড়ে ৮টা থেকেই কাজ শুরু করে দেয়। এই ট্রায়াল পাইলটি স্থাপনে ৩ হাজার টন ওজন ক্ষমতার জার্মানির হ্যামার বসানো হয়েছে। আজ শনিবার থেকে এটি ড্রাইভ করে ১২০ মিটার দীর্ঘ ও ৩ মিটার ব্যাসের বিশাল হ্যামারটি পুরোদমে কাজ শুরু করবে। মাওয়া সাইডের নদীর ৭ নম্বর পিলারে এটি বসছে। এর আগে টেস্ট পাইল স্থাপন কাজ শুরু হলেও কনস্ট্রাকশন ট্রায়াল পাইল স্থাপন এই প্রথম। পদ্মা সেতুতে মোট ২টি কনস্ট্রাকশন ট্রায়াল পাইল স্থাপন হবে। আর টেস্ট পাইল স্থাপন হবে মোট ১০টি। এরই মধ্যে ৩টি টেস্ট পাইল স্থাপন হয়ে গেছে।

পাইল স্থাপনের কাজ পরিদর্শন শেষে পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান আব্দুল কাদের বলেন, এটি স্থাপনের সময় লাগবে ১৫ দিন। এই কনস্ট্রাকশন ট্রায়াল পাইল স্থাপনের মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতুর কাজ স্থাপন শুরুর মাধ্যমে আরেক ধাপ এগিয়ে গেলো। ইতিমধ্যেই মূল সেতুর ১৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সবমিলিয়ে পদ্মা সেতুর কাজ সম্পন্ন হয়েছে প্রায় ২০ শতাংশ।

প্রকল্প এলাকায় এখন চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। বৃষ্টি-বর্ষার মধ্যেও উত্তাল পদ্মায় সেতুর কাজ চলছে পুরো দমে। কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে নদী ভাঙ্গন দেখা দিলেও তা প্রতিরোধ করা হয়েছে। এখন সব কিছুই পদ্মা সেতুর অনুকূলে। নদী শাসন, দু’পারের এ্যাপ্রোচ সব কাজই চলছে এখন পুরোদমে। তবে সরেজমিন ঘুরে দেখা দেখা যায়, নদী শাসনের ড্রেজিং করা বিপুল পরিমাণ বালু ফেলার স্থান নির্ধারণ নিয়ে রয়েছে কিছুটা সমস্যা। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে হংকং ও সিঙ্গাপুরের ন্যায় যে শহর গড়ে তোলা বা পদ্মার চরে অলিম্পিক ভিলেজসহ নানা উন্নয়ন পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের, সেখানে এই বালু ব্যবহার করলে বিপুল অর্থের সাশ্রয় ছাড়াও ড্রেজিংয়ের এই বালু রাখার সঙ্কটের সমাধান হতে পারে। এ ব্যাপারে শীর্ষ পর্যায়ের তরিত্ সিদ্ধান্ত প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

৪২টি পিলারের উপর ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ দেশের সর্ববৃহত্ পদ্মা সেতুটি নির্মিত হচ্ছে। ১৫০ মিটার পর পর বসবে এই পিলার। এছাড়া দেড় কিলোমিটার করে উভয়পারে ৩ কিলোমিটার সংযোগ সেতুর জন্য আরও ২৪টি পিলার হবে। মূল সেতুর ৪০টি পিলারে ৬টি করে ২৪০ এবং দুই পারের ১২টিতে ২টি করে ২৪টি অর্থাত্ সর্বমোট ২৬৪টি পাইল বসাতে হবে। মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল হাসান বাদল জানান, পদ্মা সেতুর কাজ নির্ধারিত সময় অনুযায়ী এগিয়ে চলেছে। স্থানীয় প্রশাসন এই কর্মযজ্ঞ সচল রাখতে সব রকমের সহায়তা দিচ্ছে।

দ্বিতল পদ্মা বহুমুখী সেতুর উপরের তলায় থাকবে ৪ লেনের মহাসড়ক। নিচে রেল লাইন। ট্রেনের গতিসীমা হবে ১৬০ কিলোমিটার। থাকবে গ্যাস ও বিদ্যুত্ সংযোগ। দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে গ্যাস সরবরাহের জন্য থাকবে হাই প্রেসার গ্যাস পাইপ লাইন। পদ্মা সেতু নির্মাণের পর মংলা সমুদ্র বন্দরের ব্যবহার বাড়বে। পিছিয়ে থাকা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শিল্পায়ন ও বিনিয়োগ বাড়বে। বাড়বে জীবনযাত্রার মান ও মাথাপিছু আয়। নানা প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে নিজেদের অর্থে সেই সেতুর দ্রুত গতির বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া দেখে তাই আনন্দে উদ্বেল এই অঞ্চলের মানুষ।