২০১৫-২০১৮ তিন বছরের জন্য রফতানি নীতি অনুমোদন করেছে অর্থনৈতিক সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে গত বুধবার কমিটি এটির অনুমোদন দিয়েছে। শিগগিরই মন্ত্রিসভায় এটি চূড়ান্ত অনুমোদিত হবে বলে জানা গেছে। রফতানি নীতিতে উল্লেখযোগ্য রফতানি খাতগুলো নিয়ে রয়েছে আলাদা নীতিমালা। ‘হিমায়িত খাদ্য ও মৎস্য খাত’ অংশে উল্লেখ করা হয়েছে মাছ চাষিদের উন্নয়নে একটি মৎস্য ব্যাংক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হবে। এছাড়া চিংড়ি ও মৎস্য বীমা প্রতিষ্ঠা করা হবে বলেও এতে উল্লেখ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ হিমায়িত খাদ্য ও মৎস্য রফতানিকারক সমিতির সভাপতি এস.এম আমজাদ হোসেন এ প্রসঙ্গে মানবকণ্ঠকে বলেন, আমরা মৎস্য চাষিদের উন্নয়নে একটি ব্যাংক প্রতিষ্ঠার আবেদন করেছি। তবে এটি এখনো চূড়ান্ত কিছু নয়।
রফতানি নীতির পঞ্চম অধ্যায়ে পণ্যভিত্তিক সুবিধাদি আলোচনা করা হয়েছে। এতে ৫.২ ধারায় হিমায়িত খাদ্য ও মৎস্য খাত নিয়ে আগামী তিন বছরের জন্য নীতি ও পরিকল্পনা আলোচনা করা হয়েছে। ৫.২.১৩ ধারায় বলা হয়েছে, চিংড়ি ও মৎস্য চাষের উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের জনগণের প্রোটিন চাহিদা পূরণের পাশাপাশি ২০২১ সালের মধ্যে রফতানি আয় ৫০ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করার লক্ষ্যে মৎস্য ব্যাংক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হবে। এছাড়া ৫.২.২০ ধারায় আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা ও উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনার জন্য রফতানিতে ব্যাংক প্রদত্ত চলতি মূলধন ঋণের সুদহার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ নির্ধারণের উদ্যোগ নেয়া হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। চিংড়ি ও মৎস্য চাষিদের জন্য স্বল্প সুদে সহজ কিস্তি সুবিধায় ঋণ প্রদানের কথাও বলা হয়েছে অপর এক ধারায়। এদিকে অপর এক ধারায় বলা হয়েছে, চিংড়ি ও মৎস্য চাষ ঝুঁকিপূর্ণ বিধায় কৃষি পণ্যের অনুরূপ চিংড়ি ও বীমা চালু করা হবে।
জানা গেছে, মৎস্য রফতানিতে মান রক্ষা ও পরীক্ষা করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এ জন্য রফতানি নীতিতে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন টেস্টিং ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হবে। পাশাপাশি হিমায়িত খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য বিনা শুল্কে অপরিহার্য মান নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রপাতি আমদানিকে উৎসাহিত করা এবং মৎস্য অধিদফতর ও বিসিএসআইআর-এর টেস্টিং ল্যাবরেটরিকে উন্নত করার উদ্যোগ নেয়া হবে বলেও অপর এক ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে। নীতিতে বলা হয়েছে, চিংড়ি ও মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে পোনা, খাদ্য, বিদ্যুৎ ও কেমিক্যাল ইত্যাদিতে শুল্ক এবং ভ্যাট প্রত্যাহারের ব্যবস্থা নেয়া হবে। ভাইরাসমুক্ত চিংড়ি ও মৎস্য পোনা বিনা শুল্কে আমদানির ব্যবস্থা নেয়া হবে। উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ ও রফতানির লক্ষ্যে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রদান, হ্যাচিং থেকে মৎস্য আহরণে বিশেষ তদারকি বাড়ানো, বিদেশে বিপণন মিশন প্রেরণ, বিদেশে একক মেলার আয়োজন এবং বিভিন্ন দেশে আয়োজিত আন্তর্জাতিক মেলায় অংশগ্রহণের ব্যবস্থা করার কথা নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া চাষিদের উন্নত প্রশিক্ষণ প্রদান, অবকাঠামো তৈরিতে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও মৎস্য অধিদফতর কর্তৃক বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ, বাগদা চিংড়িকে (ব্ল্যাক টাইগার) ‘জাতীয় ব্র্যান্ড’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা, কাঁকড়া ও কুঁচে চাষের উদ্যোগ গ্রহণ এবং রুগ্ন অথচ কর্মক্ষম প্রক্রিয়াজাতকারী কারখানাগুলোকে পুনর্বাসনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলে নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।