এগিয়ে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ

* হত্যাকান্ডের পটভূমি * যারা প্রাণ দিলেন * আন্তর্জাতিক নিন্দা * পঁচাত্তর পরবর্তী অবস্থা * বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার * রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী

আজ ১৫ আগস্ট (শনিবার) জাতীয় শোক দিবস। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪০তম শাহাদাতবার্ষিকী। বাংলাদেশ আর বঙ্গবন্ধু এক-অবিচ্ছেদ্য। বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মত্যাগের কারণেই আজকের এই স্বাধীন বাংলাদেশ। আজ বঙ্গবন্ধু নেই। ৪০ বছর আগে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতক-দালাল চক্র একদল বিপথগামী সেনা সদস্যের সহায়তায় রাতের অন্ধকারে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারকে নির্মম, নৃশংসভাবে হত্যা করে। বাংলার স্বপ্নদ্রষ্টার ভবিষ্যৎ স্বপ্ন, দেশ গড়ার স্বপ্নকে স্থবির করে দেয়।অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির পুরোধা পুরুষ ছিলেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৫৫ সালের ২১ অক্টোবর আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে তিনি মুসলিম শব্দ বাদ দিয়ে অসাম্প্রদায়িক ‘আওয়ামী লীগ’ নামকরণ করেন। বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফার প্রণেতা এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রবজ্ঞা পুরুষ বঙ্গবন্ধু ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সফল রূপকার। তার ৭ মার্চের ভাষণই ছিল গেরিলা যুদ্ধের কৌশল। একটি দেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র ৫০ দিনের মাথায় সে দেশ থেকে বিদেশি সৈন্য প্রত্যাহার ছিল একটি বিস্ময়কর ঘটনা। বঙ্গবন্ধুর প্রজ্ঞায় এবং দৃঢ় নেতৃত্বের কারণেই ১৯৭২ এর ১২ মার্চ ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহার শুরুহয়। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার মাত্র এক বছরের মধ্যে জাতিকে একটি আধুনিক, গণতান্ত্রিক সংবিধান উপহার দেন। ১৯৭২ এর ১৬ ডিসেম্বর সংবিধান কার্যকর হয়। বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বিশ্বব্যাপী নিপীড়িত মানুষের পরম বন্ধু। নিজ দেশের জনগণকে নিয়ে অবতীর্ণ হয়েছিলেন শোষিতের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায়। জাতিসংঘ বিশ্বশান্তি পরিষদ ১৯৭৩ সালে তাকে শান্তির জন্য জুলিও কুরি উপাধিতে ভূষিত করে। দ্রুততম সময়ে বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগে বাংলাদেশ ১৪২টি দেশের স্বীকৃতি লাভ করে। জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন, জাতিসংঘ, কমনওয়েলথ এবং ওআইসির সদস্য লাভ করে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু প্রথম বাঙালি যিনি একটি দেশের সরকারপ্রধান হিসেবে জাতিসংঘে বাংলা ভাষায় ভাষণ দেন। দেশের স্বার্থ অক্ষুণ্ন রেখে বঙ্গবন্ধু বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থনৈতিক সহায়তা অর্জনে সক্ষম হন।স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি ভালোভাবেই উপলদ্ধি করতে পেরেছিল, বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে এই দেশ দ্রুত স্বনির্ভরতা অর্জন করে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। এই দেশকে আবারও পাকিস্তানের তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করার স্বপ্ন তাদের কোনদিনই পূরণ হবে না। তাই স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতকচক্র বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরিকল্পনা করে। দেশ স্বাধীনের মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেই কালোরাতে বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করে।’এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ আঙুল উঁচিয়ে এই কালজয়ী সেস্নাগান দিয়ে একদিন যিনি বাঙালি জাতিকে জাগিয়ে তুলেছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে। যার ডাকে ৯ মাস যুদ্ধ করে ৩০ লাখ শহীদের বিনিময়ে বাঙালি অর্জন করেছিল স্বাধীনতা। সেই স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর অঙ্গুলি চিরদিনের জন্য নিস্তেজ করে দেয় পাক হায়েনাদের প্রেতাত্মা তথা একদল বিপথগামী সৈনিক। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় জন্ম নেয়া এক শিশু তরুণ বয়স থেকেই বাঙালি জাতির স্বাধীকার আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। শিক্ষা জীবন ও রাজনীতি চলে পাশাপাশি। বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের আন্দোলন সংগ্রামে জড়িয়ে ৪৭, ৫২, ৬৯, ৭০ সহ বিভিন্ন সময়ে মৃত্যুর দ্বার হতে বারবার ফিরে এসেছিলেন তিন। ‘৭১-এ পাকিস্তানি হায়েনারা যা করতে পারে নাই, সেই কাজটিই অত্যন্ত ঠা-া মাথায় ও পূর্বপরিকল্পিতভাবে সম্পাদন করে পাপিষ্ঠ ঘাতকরা। তবে তাদের অপপ্রায়শ সফল হয়নি। মানুষ মরণশীল। সবারই একদিন মৃত্যু ঘটে। তবে কোনো কোনো মানুষের শুধু দেহাবসানই ঘটে, মৃত্যু হয় না। তেমনি আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চির অমর হয়ে আছেন বাঙালির হৃদয়ে। না ফেরার দেশ থেকে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত এই নেতা আর ফিরে না এলেও; বছর ঘুরে আসে রক্তঝরা ১৫ আগস্ট। জাতি শ্রদ্ধাবনত চিত্তে স্মরণ করে তাদের স্বপ্নদ্রষ্টা, মুক্তির নায়ক বঙ্গবন্ধুকে। বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব এবং তার শাহাদাতবার্ষিকী আজ সার্বজনীনভাবে স্বীকৃত। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণে কাজ করে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে। নাম লিখিয়েছে মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায়। এগিয়ে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ।আন্তর্জাতিক অঙ্গনবঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের পরদিনই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিন্দার ঝড় ওঠে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর নোবেল জয়ী পশ্চিম জার্মানির নেতা উইলি ব্রানডিট বলেন, মুজিবকে হত্যার পর বাঙালিদের আর বিশ্বাস করা যায় না। যে বাঙালি শেখ মুজিবকে হত্যা করতে পারে তারা যেকোন জঘন্য কাজ করতে পারে। ভারত বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক ও বিশিষ্ট সাহিত্যিক নীরদ সি চৌধুরী বাঙালিদের ‘বিশ্বাসঘাতক’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেছেন, বাঙালি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা শেখ মুজিবকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি বিশ্বের মানুষের কাছে নিজেদের আত্মঘাতী চরিত্রই তুলে ধরেছে। দ্য টাইমস অব লন্ডন এর ১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট সংখ্যায় উল্লেখ করা হয়, সবকিছু সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুকে সব সময় স্মরণ করা হবে। কারণ তাকে ছাড়া বাংলাদেশের বাস্তব কোন অস্তিত্ব নেই। একই দিন লন্ডন থেকে প্রকাশিত ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের লাখ লাখ লোক শেখ মুজিবের জঘন্য হত্যাকা-কে অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে বিবেচনা করবে।ঘাতকদের হাতে আরও যারা প্রাণ দিলেনঘাতকদের মূল টার্গেট ছিল যে তারা বঙ্গবন্ধুসহ তার পুরো পরিবার ও তার নিকট আত্মীয় কাউকেই পৃথিবীতে জীবিত রাখবে না। সেই অনুযায়ী তারা সেদিন ওই ঘাতকরা ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে হত্যার এক জঘন্য উল্লাসে মেতে উঠেছিল। হত্যা করেছিল বিভিন্ন ঘরে ও একাধিক বাড়ি হতে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবার এবং নিকট আত্মীয়সহ মোট ২৬ জনকে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালোরাতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে নিহত হন বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা, পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশুপুত্র শেখ রাসেল, শেখ কামালের স্ত্রী সুলতানা কামাল, জামালের স্ত্রী রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ নাসের, এসবি অফিসার সিদ্দিকুর রহমান, কর্নেল জামিল, সেনা সদস্য সৈয়দ মাহবুবুল হক। প্রায় একই সময়ে ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে যুবলীগ নেতা শেখ ফজলুল হক মণি এবং বঙ্গবন্ধুর ভগি্নপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বাসায় পৃথক হামলা চালায়। ঘাতকদের হাতে নিহত হন শেখ ফজলুল হক মণি, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মণি, আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার কন্যা বেবী, পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, নাতি সুকান্ত বাবু, আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বড় ভাইয়ের ছেলে সজীব সেরনিয়াবাত এবং এক আত্মীয় বেন্টু খান। সেদিন বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা বর্তমান আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহেনা।পঁচাত্তর পরবর্তী অবস্থাজাতির জনককে হত্যার পর দীর্ঘদিন বাংলাদেশের রাজনৈতিক আকাশ ছিল তিমিরাচ্ছন্ন। দেশ পরিচালনার নেতৃত্ব গ্রহণ করে অনির্বাচিত সরকার। তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ইন্ধনে আশ্রয়-প্রশ্রয় পায় বঙ্গবন্ধুর খুনিরা। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় তাদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেয়া হয়। এমনকি বঙ্গবন্ধু যাদের নাগরিকত্ব বাতিল করেছিলেন তাদেরও নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিয়ে বাংলাদেশে রাজনীতি করার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ‘৭২-এর সংবিধান সংশোধন করে চার-মূলনীতি পরিবর্তন ও ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক কর্মকা- চালাতে সহায়তা করে। পৃথিবীর ইতিহাসে যতগুলো হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটেছে তার মধ্যে ১৫ আগস্টে জাতির জনকের সপরিবারে হত্যাই সব ভয়াবহতা ছাড়িয়ে গেছে। সেদিন দুগ্ধপোষ্য শিশু, অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী, প্রতিবন্ধী কেউই রেহাই পায়নি। হত্যাকা-ে খুনিদের শাস্তি নিশ্চিত না করে বরং দীর্ঘ সময় ধরে তাদের আড়াল করার অপচেষ্টা হয়েছে। এমনকি খুনিরা পুরস্কৃতও হয়েছে নানাভাবে।বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট খন্দকার মোশতাক আহমেদ বিচারের হাত থেকে খুনিদের রক্ষা করতে কুখ্যাত ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার ঘটনাটি তৎকালীন উপ-সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান জানতেন। ঘাতকরা যেন নিরাপদে হত্যাকা- ঘটাতে পারেন সে জন্য তিনি নীরবতা পালন করেন। পরবর্তীতে জিয়াউর রহমান ১৯৭৯ সালে ইনডেমনিটিকে আইন হিসেবে অনুমোদন করেন। ইতিহাসের সব চেয়ে কলঙ্কময় এই ঘটনায় খুনিরা অত্যন্ত প্রতাপ নিয়ে দাপিয়ে বেড়িয়েছে এবং বাংলাদেশে রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। দীর্ঘদিন জাতিকে বয়ে বেড়াতে হয়েছে এ খুনের কলঙ্ক।একটি রাষ্ট্রের স্থপতিকে সপরিবারে খুনের ঘটনার পর অপরাধীদের দাম্ভিকতা প্রদর্শন পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। বিদেশে থাকাকালীন সময়ে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। দীর্ঘ সময় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে তাদের পরিবারের সব সদস্য হারানোর মর্মান্তিক বেদনা বয়ে বেড়াতে হয়েছে। শুধু তাই নয়, জাতির কাছে পিতা, মাতা ও স্বজন হারানোর বিচার চেয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষের কেউ তাদের মর্মবেদনায় কর্ণপাত করেনি।বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের বিচার :সময়ের পালাবদলে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এ হত্যাকা-ের বিচারের পথ উন্মুক্ত করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সুদীর্ঘ একুশ বছর পর ক্ষমতায় আসে। ১৯৯৬ সালের ১৪ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার তিন প্রধান আসামি বরখাস্ত লে. কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী তাহের উদ্দিন ঠাকুরকে গ্রেফতার করা হয়। একই বছরের ২ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুর একান্ত সহকারী (পিএ) এএফএম মোহিতুল ইসলাম ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সংঘটিত নারকীয় হত্যাকা-ের ঘটনায় থানায় একটি এফআইআর করেন। ১৯৯৬ সালের ১৪ নভেম্বর খুনিদের বিচারের হাতে ন্যস্ত করতে পার্লামেন্টে ইনডেমনিটি আইন বাতিল করা হয়। ১৯৯৭ সালের ১৫ জানুয়ারি সিআইডি এই মামলায় ২০ জনকে অভিযুক্ত করে মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে চার্জশিট দাখিল করে এবং একই বছরের ১২ মার্চ ছয় আসামির উপস্থিতিতে আদালতে বিচার শুরু হয়। ১৯৯৭ সালের ১৯ জুন পর্যন্ত বিচারক বিব্রত হওয়াসহ স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের নানা বাধার কারণে আটবার বিচার কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। এভাবে দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর মামলার রায়ে বিচারক কাজী গোলাম রসুল ১৫ জন সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে মৃত্যুদ- প্রদান করেন।অন্যদিকে ২০০০ সালের ১৪ ডিসেম্বর হাইকোর্ট বেঞ্চ ২৪ দিনের শুনানি শেষে বিভক্ত রায় প্রদান করে। বিচারক এম রুহুল আমিন অভিযুক্ত ১৫ আসামির মধ্যে ১০ জনের মৃত্যুদ-াদেশ বহাল রাখেন। কিন্তু অন্য বিচারক এবিএম খায়রুল হক অভিযুক্ত ১৫ জনকেই সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- প্রদান করেন। ২০০১ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি বিভক্ত রায় প্রদানের ফলে মামলাটি ডেথ রেফারেন্সে ও আপিল শুনানি দ্বিতীয় বেঞ্চের তৃতীয় বিচারকের কাছে স্থানান্তরের প্রয়োজন দেখা দেয়ায় এর শুনানি উচ্চ আদালতের আরেকটি বেঞ্চে শুরু হয়। একই বছরের ৩০ এপ্রিল তৃতীয় বিচারক মোহাম্মদ ফজলুল করিম ২৫ দিন শুনানির পর অভিযুক্ত ১২ জনের মৃত্যুদ-াদেশ নিশ্চিত করেন।পরবর্তীতে ২০০১ সালের অক্টোবরের সংসদ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসলে বিচার কাজ বন্ধ থাকে। দীর্ঘ ছয় বছর পর ২০০৭ সালের ২৩ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষের মুখ্য আইনজীবী আনিসুল হক সুুপ্রিম কোর্টে সংক্ষিপ্ত বিবৃতি প্রদান করেন এবং ২৩ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের তিন সদস্যের একটি বেঞ্চ ২৭ দিনের শুনানি শেষে ৫ আসামিকে নিয়মিত আপিল করার অনুমতিদানের লিভ টু আপিল মঞ্জুর করেন। ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসে। ২০০৯ সালের ১২ নভেম্বর ২৯ দিনের শুনানির পর চূড়ান্ত আপিল শুনানি শেষ হয় এবং আদালত ১৯ নভেম্বর রায়ের তারিখ নির্ধারণ করেন। ওইদিন (১৯ নভেম্বর) বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চে হাইকোর্টের দেয়া রায় বহাল রেখে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত ৫ আসামির দায়ের করা আপিল আবেদন খারিজ করা হয়। ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি আপিল রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের রিভিউ খারিজ হয়ে গেলে ২৮ জানুয়ারি ৫ আসামির ফাঁসির রায় কার্যকর করে জাতিকে দায়মুক্ত করা হয়। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে তৃতীয় বারের মতো রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসেন। তবে এখনও নানা জটিলতায় বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী বিদেশে পলাতক খুনিদের ফিরিয়ে আনা যায়নি। ১৫ আগস্টের প্রেতাত্মা ও তাদের দোসররা আজও সক্রিয় রয়েছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে ৭৫ সালের ১৫ আগস্টের নায়কদের উত্তরসুরিরা জাতির জনকের কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করে। এভাবে কয়েকবার তাকে হত্যার চেষ্টা চালানো হয়েছে। আন্দোলনের নামে বক্তব্য দিতে গিয়ে আর একটি ১৫ আগস্টেরও হুমকি দেয় স্বাধীনতাবিরোধী চক্র। ওই পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসির রায় কার্যকর এবং যুদ্ধাপরাধীদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার অঙ্গীকার নিয়ে বাঙালি জাতি আজ শোক দিবস পালন করবে। এরসঙ্গে এই শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে ওই অশুভ শক্তিকে প্রতিহত করার শপথ নিতে হবে এখনই।রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী :দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ, এর অঙ্গ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি পালন করবে। এছাড়া যথাযথ মর্যাদায় এবং ভাবগম্ভীর পরিবেশে শোক দিবস উদযাপনের লক্ষ্যে জাতীয়ভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।