তথ্য ভবন হবে ‘তথ্য হাব’

তথ্য ভবন নির্মাণের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন শিল্প-সংস্কৃতি ও তথ্য সার্ভিসের কর্মকর্তা কর্মচারীরা। তারা বলেছেন, সত্যিকার অর্থে তথ্য ভবন হয়ে ওঠবে দেশের ‘তথ্য হাব’, যেখান থেকে যোগাযোগের সব মাধ্যম ব্যবহার করে তথ্য পৌঁছানো হবে।

তারা জানান, এ ভবনে সরকারের নিজস্ব ‘বেতারকেন্দ্র’ স্থাপন করা যাবে এবং এটি পরিগণিত হবে সাধারণ মানুষের তথ্য গ্রাহক যন্ত্র হিসেবে। এ ভবন হবে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কর্মীদের মিলনমেলা। এটি হবে গবেষক, পাঠক, চলচ্চিত্রপ্রেমীসহ সংশ্লিষ্ট সব শ্রেণির মানুষের বিচরণভূমি।

তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এ প্রতিবেদককে বলেন, আনন্দের বিষয় হলোÑ সরকারের তথ্য সার্ভিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নির্মিত হতে যাচ্ছে বহু প্রতীক্ষিত ‘তথ্য ভবন’। ঢাকার সার্কিট হাউস রোডে স্বপ্নের ‘তথ্য ভবন’ নির্মিত হতে যাচ্ছে।

মন্ত্রী জানান, তথ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ২০১৩ সালে একনেক সভায় তথ্য ভবন নির্মাণ প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন করা হয়। ২০১৪ সালে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। প্রাথমিকভাবে এর প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ৬০ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। এ প্রকল্পের কাজ জুন ২০১৬-এর মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

খ্যাতিমান অভিনেতা নাট্যকার ও পরিচালক মামুনুর রশীদ বলেন, কয়েক দশক ধরে আমরা সরকারের কাছে এই দাবিটি করে আসছিলাম। শিল্প-সংস্কৃতির মিলনমেলা হবে এক কেন্দ্র থেকে। সেখানে গবেষণা হবে। তরুণ প্রজš§ শিল-সংস্কৃতির চর্চা করবে। তিনি জানান, তথ্য ভবনে চলচ্চিত্রবিষয়ক পাঠাগার ও গবেষণাকেন্দ্র, মিলনায়তন, ফিল্ম প্রজেকশন হল, সম্মেলন কক্ষ, ডিজিটাল তথ্যভাণ্ডার এবং কেন্দ্রীয় নেটওয়ার্ক সার্ভারসহ আধুনিক সব ব্যবস্থা। এ ভবনে আয়োজন করা হবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, ওয়ার্কশপ, সভা ও প্রশিক্ষণ কোর্সের ক্লাস। ‘তথ্য ভবন’ প্রকল্প সম্পন্ন হলে আরও দ্রুততার সঙ্গে কম খরচে সমন্বিতভাবে মানসম্পন্ন কাজ পরিচালনা খুবই সহজ হবে।

জানা গেছে, প্রকল্পের ভবনটি ৩৮.৬৪ কাঠা জমির ওপর নির্মিত হবে। ঢাকার সার্কিট হাউস রোডে বর্তমান চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদফতরের নিজস্ব জমিতে ১৬ তলাবিশিষ্ট তথ্য ভবন নির্মাণের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। এ ভবনের বেজমেন্টসহ এতে যে কটি তলা হবে তাতে জায়গার পরিমাণ ২ লাখ ৩ হাজার বর্গফুট। ইতোমধ্যে প্রকল্পভূমির মাটি পরীক্ষার কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্প এলাকা থেকে অপ্রয়োজনীয় স্থাপনা অপসারণ করা হয়েছে।

তথ্য মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিব জানান, তথ্য ভবনটি নির্মিত হলে এতে তথ্য মন্ত্রণালয়াধীন তিনটি দফতর- চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদফতর, গণযোগাযোগ অধিদফতর এবং বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড তাদের অফিসের জন্য স্থান সংকুলান করতে পারবে। গণযোগাযোগ অধিদফতর বর্তমানে আরেকটি সরকারি অফিসের ফ্লোরে আশ্রিত হিসেবে দফতরের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ফিল্ম সেন্সর বোর্ড ভাড়াভিত্তিতে একটি ভবনের একাংশে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তথ্য ভবনে অফিস স্থানান্তর হলে সরকারের ভাড়া বাবদ বেশ কিছু অর্থ সাশ্রয় হবে। তথ্য ভবনে একই ছাদের নিচে তিনটি দফতর কাজ করার সুবাদে আরও সুষ্ঠুভাবে জনসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। তথ্য ভবনে থাকবে সর্বাধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির যন্ত্রপাতি ও সেবা কার্যক্রম। এটি হবে সরকারি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। সরকারের গণযোগাযোগ অধিদফতর তৃণমূল পর্যায়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। জেলা পর্যায়ে রয়েছে জেলা তথ্য অফিস। এসব অফিস ভাড়া বাড়িতে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সরকার জেলা পর্যায়েও তথ্য ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জেলা তথ্য ভবনগুলোও হবে আধুনিক সুবিধাসংবলিত। ঢাকায় কেন্দ্রীয় তথ্য ভবন থেকে পাঠানো সরকারের উন্নয়নবার্তা জেলা পর্যায়ের তথ্য ভবনে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে ও খুবই অল্প খরচে পাঠানো যাবে। ফলে মাঠপর্যায়ের সাধারণ মানুষের কাছে সরকারের বার্তা যথাসময়ে পৌঁছে যাবে।

ঢাকার তথ্য ভবন থেকে জেলা পর্যায়ে সরকারের মন্ত্রী, সচিব ও অন্য কর্মকর্তারা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণমানুষের জন্য গৃহীত ও বাস্তবায়িত কার্যক্রমের তথ্য সরাসরি পৌঁছাতে পারবেন এবং তাৎক্ষণিকভাবে তাদের প্রতিক্রিয়াও জানতে পারবেন। এতে সরকারের কাজের সাফল্য শতভাগ অর্জনের সম্ভাবনা থাকবে।