৬ জুলাই ২০১৫ তারিখে মন্ত্রিসভা বৈঠকে ‘জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নীতিমালা-২০১৫’ অনুমোদিত হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন পূরণের জন্য প্রযুক্তির প্রয়োগ ও প্রসারে পালনীয় নির্দেশিকা হিসেবে ২০০৯ সালে প্রথম ওই নীতিমালাটি প্রণীত হয়েছিল। গত ছয় বছরে দেশে আর্থসামাজিক অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অভূতপূর্ব সম্প্রসারণ ও নব নব উদ্ভাবনীর কারণে নীতিমালাটি হালনাগাদ করার প্রয়োজন হয়েছে। এজন্য এ প্রক্রিয়ায় আগের ৩০৬টি করণীয় বিষয়ের স্থলে এখন ২৩৫টি করণীয় বিষয় চিহ্নিত করা হয়েছে সময়ের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে।
আগেই এ নীতিমালাটি প্রণয়নকালে যৌক্তিক ভিত্তি হিসেবে বাংলাদেশের সংবিধানের ১৯ অনুচ্ছেদে বর্ণিত সামাজিক ও অর্থনৈতিক অসাম্য বিলোপ করা এবং সম্পদের সুষম বণ্টনের নীতিকে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধানের ১৯ অনুচ্ছেদের ভাষ্য হলো-
‘১. সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করিতে রাষ্ট্র সচেষ্ট হইবে।
২. মানুষে মানুষে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অসাম্য বিলোপ করিবার জন্য, নাগরিকদের মধ্যে সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করিবার জন্য এবং প্রজাতন্ত্রের সর্বত্র অর্থনৈতিক উন্নয়নের সমান স্তর অর্জনের উদ্দেশ্যে সুষম সুযোগ-সুবিধাদান নিশ্চিত করিবার জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে।’
কাজেই নীতিমালার ভাষ্যমতে, সংবিধানের এ মূল্যবোধ সঞ্চারে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। তাই সমাজে কোনোরূপ Digital Divide যেন না থাকে সে কথা মনে রেখেই রাষ্ট্রের সব পরিকল্পনাবিদ, নির্বাহী এবং একইসঙ্গে বেসরকারি খাত ও সুশীল সমাজের সবাই ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে জনসেবা প্রদানের জন্য এ নীতিমালাটি অনুসরণীয় নির্দেশিকা হিসেবে ব্যবহার করবেন।
বর্তমান প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক প্রসারের কারণে তা ব্যবহারের ক্ষেত্রেও মানুষের আগ্রহ ও উৎসাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষত মোবাইল প্রযুক্তি এক্ষেত্রে অন্যতম ভূমিকা রেখেছে। এখন বাংলাদেশে মোবাইল ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটি ৭৪ লাখ এবং ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৪ কোটি ৮৩ লাখ। (৩০ জুন বিটিআরসি’র তথ্যানুযায়ী)। দেশের ৫ হাজার ২৭৫টি ইউনিয়ন, ওয়ার্ড ও পৌরসভায় ডিজিটাল সেন্টার স্থাপনের মধ্য দিয়ে প্রযুক্তির সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া সম্ভব হয়েছে। এছাড়া ডাক বিভাগের সাড়ে ৮ হাজার ডাকঘর পর্যায়ক্রমে ডিজিটাল সেন্টারে রূপান্তরিত করা হচ্ছে। অধিকন্তু সরকারি দফতরের ২৫ হাজার ওয়েব পোর্টাল তৈরি, বিভিন্ন ধরনের সরকারি সেবার মোবাইল অ্যাপস উন্নয়ন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ও কম্পিউটার ল্যাব স্থাপনসহ অন্যান্য ক্ষেত্রেও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। দেশের সচিবালয় থেকে শুরু করে জেলা ও উপজেলা পর্যন্ত ফাইবার অপটিক্যাল ক্যাবল লাইন স্থাপনের কাজ প্রায় সম্পন্ন। এছাড়া এগিয়ে চলেছে হাইটেক পার্ক স্থাপনের কাজও।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছর ২০২১ সাল। এ সময়ের মধ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিকে উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে ব্যবহার করে বিভিন্ন ক্ষেত্রের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার দৃঢ়প্রত্যয়ী। বিশেষ করে দ্রব্যমূল্য হ্রাস, দারিদ্র্যবিমোচন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, সামাজিক সমতা আনয়ন এবং শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও জলবায়ু পরিবর্তনসহ অন্যান্য ক্ষেত্রের উন্নয়নে অন্তরায় দূর করার জন্য তথ্যপ্রযুক্তির ভূমিকা অপরিসীম। এজন্য সরকার নানামুখী কর্মসূচিও বাস্তবায়ন করছে।
গত ছয় বছরের অগ্রগতির জন্য বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। বাংলাদেশ পেয়েছে South South Award, South South Co-operation Visionary Award, WITSA Ges WSIS Award. বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তিতে উন্নতির নির্ণায়ক আন্তর্জাতিক এসব স্বীকৃতি। সুতরাং ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অভিযাত্রায় এরকম নজরকাড়া উন্নতির প্রেক্ষিতকে সামনে রেখে আরও একধাপ এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যাশায় ২০০৯ সালের নীতিমালা হালনাগাদ করে ২০১৫ সালে নতুন নীতিমালা প্রণীত হয়েছে।
কী আছে নীতিমালায়
এ নীতিমালায় রয়েছে একটি রূপকল্প, ১০টি উদ্দেশ্য, ৫৪টি কৌশলগত বিষয়বস্তু এবং ২৩৫টি করণীয় বিষয় ও কর্মপরিকল্পনা। রূপকল্প ও উদ্দেশ্যকে জাতীয় লক্ষ্যের (Goal) সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে কৌশলগত বিষয়বস্তু নির্ধারণ করা হয়েছে। কর্মপরিকল্পনাগুলোকে আবার স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি করে যথাক্রমে ২০১৬, ২০১৮ ও ২০২১ সাল পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। নীতিমালার রূপকল্প ও উদ্দেশ্যগুলো সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা হবে।
নীতিমালায় রূপকল্প
নীতিমালায় রূপকল্পের বর্ণনা আছে এভাবে- ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সম্প্রসারণ এবং বহুমুখী ব্যবহারের মাধ্যমে একটি স্বচ্ছ, দায়বদ্ধ ও জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করা; দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন নিশ্চিত করা; সামাজিক ন্যায়পরায়ণতা বৃদ্ধি করা; সরকারি/বেসরকারি খাতের অংশদারিত্বে সুলভে জনসেবা প্রদান নিশ্চিত করা এবং ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের সারিতে উন্নীতকরণের জাতীয় লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করা।’
সুতরাং জাতীয় লক্ষ্যের (Goal) দুইটি অংশ। একটি ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের সারিতে নিয়ে যাওয়া। তাই এ দুইটি লক্ষ্য মাথায় রেখেই দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন পরিকল্পনা করতে হবে।
উদ্দেশ্য ও কৌশলগত বিষয়
এখন নীতিমালায় উল্লিখিত ১০টি উদ্দেশ্য নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক। উদ্দেশ্যগুলোর সংক্ষিপ্ত রূপ হলো-
১. সামাজিক ন্যায়পরায়ণতা বা সমতা (লিঙ্গ সমতা, সম-সুযোগ এবং সম-অংশগ্রহণে তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োগ ও ব্যবহার)।
২. নীতির প্রতি আস্থা ও দায়বদ্ধতা (জনসেবা প্রদানে স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ)।
৩. সর্বজনীন প্রবেশাধিকার (সবার জন্য টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তি ও ইন্টারনেটে অভিগম্যতা নিশ্চিতকরণ)।
৪. শিক্ষা ও গবেষণা (শিক্ষার সর্বস্তরে এবং অফিস আদালতে কম্পিউটার সাক্ষরতা নিশ্চিত করা; গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে সৃজনশীলতা উৎসাহিত করা)।
৫. কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি (স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে বিশ্বমানের আইসিটি পেশাজীবী তৈরি)।
৬. রফতানি উন্নয়ন (আমদানি নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনা, আইটি শিল্প খাতের উন্নয়ন করা, বিশ্ববাজারে চাহিদা বৃদ্ধি করা)।
৭. আইসিটিসহায়ক বিষয়গুলো (আইটিসি সম্প্রসারণে আইনি কাঠামো এবং বিদ্যুৎসহ অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়ন)।
৮. স্বাস্থ্যসেবা (মানসম্পন্ন এবং সুলভ স্বাস্থ্যসেবার জন্য আইটি উদ্ভাবনীর প্রয়োগ)।
৯. পরিবেশ, জলবায়ু ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা (জলবায়ু পরিবর্তনে সৃষ্ট ঝুঁকি হ্রাসকল্পে আইসিটি খাতে পরিবেশবান্ধব সবুজ প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও দুর্যোগ মোকাবিলা করা) এবং
১০. উৎপাদনশীলতা (কৃষি এবং ক্ষুদ্র, মাঝারি ও ছোট আকারের শিল্প খাতসহ অর্থনীতির সব খাতে আইসিটি ব্যবহারের মাধ্যমে উচ্চতর উৎপাদনশীলতা অর্জন করা)।
সুতরাং এ উদ্দেশ্যগুলো সন্নিবেশিত করার ক্ষেত্রে নাগরিকদের মৌলিক চাহিদাপূরণ এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক সামগ্রিক উন্নয়নের প্রতি লক্ষ্য রেখেই তা প্রণীত হয়েছে। এটার কারণ, নীতিমালার যৌক্তিকতা অংশে বাংলাদেশের সংবিধানের ১৯ অনুচ্ছেদের মূল্যবোধ সঞ্চালনের দায়িত্ববোধ হতেই এ চমৎকার প্রক্ষেপ করা হয়েছে।
এসব উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য নীতিমালায় যেসব কৌশলগত বিষয়বস্তু নির্ধারণ করা হয়েছে, সেগুলো অত্যন্ত সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ বলে প্রতীয়মান হয়। কৌশলগত বিষয়বস্তুর মধ্যে রয়েছে সামাজিক সমতার আওতায় পাঁচটি বিষয়; নীতির প্রতি আস্থা ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে ছয়টি বিষয়; তথ্য জগতে সর্বজনীন প্রবেশাধিকারের সুযোগ সৃষ্টির জন্য চারটি বিষয়; শিক্ষা ও গবেষণা সংক্রান্ত আটটি বিষয়; কর্মসংস্থানের উন্নয়ন ও উৎসাহদানের জন্য চারটি বিষয়; রফতানি উন্নয়নের জন্য ৫টি বিষয়; আইসিটিসহায়ক সংক্রান্ত আটটি; স্বাস্থ্যসেবার সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য চারটি; পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য পাঁচটি এবং উৎপাদনশীলতার জন্য পাঁচটি বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে। এভাবে সর্বমোট ৫৪টি কৌশলগত বিষয় এ নীতিমালায় অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে চিহ্নিত ও নির্ধারিত আছে। এসব কৌশলগত বিষয় নির্ধারণের ক্ষেত্রেও লক্ষ্য রাখা হয়েছে দেশের বাস্তবপ্রেক্ষিতের ওপর। কারণ আইসিটির কোন বিষয়টি কোথায় কতটুকু এ মুহূর্তে প্রয়োগযোগ্য সেকথাও বিবেচনায় নেয়া হয়েছে।
এসব কৌশলগত বিষয়ের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং ডিজিটাল ডিভাইস দূর করে নিম্নবিত্ত শ্রেণীর মানুষ, অনগ্রসর জনগোষ্ঠী, নারী এবং প্রতিবন্ধীদের মূলধারার সুযোগ-সুবিধা প্রদানের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় সরকারের কার্যক্রম ও নীতি নির্ধারণে জনগণের অংশগ্রহণের সুযোগও রাখা হয়েছে। এছাড়া অনলাইন সেবা প্রদান; সাংস্কৃতিক বিষয়বস্তু উন্নয়ন ও সংরক্ষণ; ক্ষতিকর ডিজিটাল বিষয়বস্তু থেকে শিশুকে রক্ষা, সিটিজেন চার্টার এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য নীতিমালায় বিশেষ দৃষ্টি দিয়ে তা সন্নিবেশিত করা হয়েছে। উল্লেখ্য যে, বাংলা ব্যবহার নিশ্চিত করা; ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে সেবা প্রদান; দেশব্যাপী ইন্টারনেট ব্যাকবোন সম্প্রারণ; আইপিভিত্তিক টেলিযোগাযোগ সম্প্রসারণ করে সবার জন্য সাশ্রয়ী করা; গণিত, বিজ্ঞান এবং ইংরেজি শিক্ষার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। অধিকন্তু মেধাভিত্তিক সমাজ তৈরি করার দিকে অনুকূল বিধান রাখা হয়েছে। যেমন- আইসিটি শিক্ষা ও গবেষণার জন্য অর্থায়ন; দেশীয় পণ্যের জন্য শক্তিশালী বিপণন ও ব্র্যান্ডিং করা; মেধাস্বত্ব সংরক্ষণ এবং টেলিমেডিসিন ও আধুনিক প্রযুুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন করার বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া ইআরপি অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে বৃহৎশিল্পের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা ইত্যাদি বিষয় কৌশলগত বিষয়ের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত আছে।
অতএব উদ্দেশ্য এবং কৌশলগত বিষয়গুলোর মধ্যে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, এক চমৎকার সম্পর্ক ও সমম্বয় বিদ্যমান। তাই অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য কর্মপরিকল্পনাও সেরকম সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া আবশ্যক। নীতিমালাটিতে লক্ষ্য করলে সেই সমন্বয়ের চমৎকার সন্নিবেশ পাওয়া যাবে।
কর্মপরিকল্পনার বিন্যাস
নীতিমালার সাফল্য কিংবা ব্যর্থতার পরিমাপক হচ্ছে কর্মপরিকল্পনা। এজন্য বাস্তবায়ন তদারকি ফলপ্রসূ করতে প্রতিটি করণীয় বিষয় বাস্তবায়নের আগে পরিমাপক নির্ধারণ করা দরকার। কিছু পরিকল্পনাকে ‘এক-তারকা’ দ্বারা চিহ্নিত করে একই উদ্দেশ্য পূরণকল্পে বর্ণিত অন্যান্যগুলোর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। আবার অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ বোঝাতে ‘দুই তারকা’ দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে। উদ্দেশ্য ও কৌশলগত বিষয়গুলোকে পরিচালনা করবে কর্মপরিকল্পনাগুলো। মূল উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে কর্মপরিকল্পনাগুলোকে প্রথমে সারণিতে সাজানো হয়েছে এবং পরে সেগুলোকে কৌশলগত বিষয়বস্তু অনুযায়ী ভাগ করা হয়েছে। সারণিতে উদ্দেশ্য ও কর্মপরিকল্পনাগুলোর ক্রমিক ধারাবাহিকভাবে দেয়া হয়েছে। সর্বডানে কর্ম পরিকল্পনা স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি হিসেবে বাস্তবায়নকাল দেখানো হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি সংক্রান্ত নিয়মিত কর্মকা- পরিচালনা ও ই-গভর্নেন্সের জন্য প্রতিটি মন্ত্রণালয়, দফতর ও সংস্থার আর্থিক বরাদ্দ প্রদানের দরকার হবে। অর্থ বিভাগ বার্ষিক বাজেটে তার প্রতিফলন রাখবে মর্মে নীতিমালায় উল্লেখ্য রয়েছে। সুতরাং প্রতিটি মন্ত্রণালয়/বিভাগ, দফতর ?এবং কর্তৃপক্ষ সেভাবে স্ব-স্ব দায়িত্ব পালনের জন্য আর্থিক সামর্থ্য অর্জন করবে।
কর্মপরিকল্পনা সারণি
নীতিমালার উদ্দেশ্য, কৌশলগত বিষয় এবং করণীয় বিষয়গুলোকে সন্নিবেশিত করে সার্বিক কর্মপরিকল্পনা সারণি প্রস্তুত করা হয়েছে। উদ্দেশ্যগুলোকে পর্যায়ক্রমিক ভিত্তি ধরে প্রতিটি কৌশলগত বিষয়ের জন্য আলাদা আলাদা করণীয় বিষয় নির্ধারণ করে সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে সুনির্দিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ কিংবা সংস্থাকে। এ সারণিটি তাই একটি ইউনিক সারণি। এমন একটি চমৎকার কর্মপরিকল্পনা সারণি প্রস্তুতকারীদের অবশ্যই ধন্যবাদ দিতে হয়। নমুনা হিসেবে নিম্নে একটি উদ্দেশ্য ও একটি কৌশলগত বিষয় এবং অন্যান্য উপাদানসহ সারণির অংশবিশেষ দেখানো হলো :
উদ্দেশ্য-১ : সামাজিক ন্যায়পরায়ণতা/সাম্যতা
ক্রমিক নং করণীয় বিষয় প্রাথমিক বাস্তবায়নকারী প্রত্যাশিত ফল স্বল্পমেয়াদি মধ্যমেয়াদি দীর্ঘমেয়াদি
কৌশলগত বিষয়বস্তু ১.১ অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং ডিজিটাল ডিভাইড দূর করে (ক) নিম্নআয়ের সম্প্রদায়, (খ) অনগ্রসর জনগোষ্ঠী, (গ) নারী এবং (ঘ) প্রতিবন্ধী ও বিশেষ সহায়তা প্রয়োজন এমন ব্যক্তিদের মাঝে সেতুবন্ধ রচনা করে অনগ্রসর গোষ্ঠীভুক্তদের মূলধারার সামাজিক সুযোগ-সুবিধা প্রদান।
*১২ মানবসম্পদ উন্নয়নে শিক্ষা ও উন্নয়নমূলক অনুষ্ঠান বিদ্যমান টিভি চ্যানেলে সম্প্রচার প্রধানমন্ত্রীর কর্যালয়, তথ্য মন্ত্রণালয় মানবসম্পদ উন্নয়নে সহায়ক হবে বাংলাদেশ টেলিভিশন সরকারি ও বেসরকারি সব চ্যানেল সামগ্রিকভাবে এ নীতিমালা একটি অসাধারণ ও অনন্য দলিল, যা বিশ্বের অনেক দেশেই বিরল বলে প্রতীয়মান হয়। নীতিমালার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হচ্ছে, এতে গ্রামে বসবাসকারী ৭০ শতাংশ মানুষ সমাজের পিছিয়ে পড়া বিশেষ করে প্রতিবন্ধী, নারী ও শিশুর উন্নয়নকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্রের উন্নয়ন দর্শনের মূলে থাকে সর্বস্তরের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন। ঠিক তারই প্রতিফলন ঘটেছে এ নীতিমালায়। এমন একটি Comprehensive নীতিমালায় বর্ণিত প্রতিটি উদ্দেশ্য পূরণকল্পে কৌশলগত বিষয়ের সঙ্গে সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা নিজ নিজ কর্তৃপক্ষ সময়াবদ্ধ পরিকল্পনা অনুযায়ী বাস্তবায়ন করলে রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নের অগ্রযাত্রায় ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ করে স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়া অবশ্যই সম্ভব হবে।