অটিস্টিক, বুদ্ধি ও বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধীরা কেউ কেউ আজ নিজের অধ্যবসায়, চেষ্টা আর পরিশ্রমের ফলে পড়াশোনা করছেন, কেউ ভাল ছবি আঁকছেন, কেউ উপার্জন করে সংসার চলাচ্ছেন। কেউ আবার বিশেষ অলেম্পিকে অংশ নিয়ে দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনছেন। কিন্তু সমাজ আজও তাদের মূলধারায় সম্পৃক্ত করতে পারেনি। পারেনি তাদের প্রতি বৈষম্যের দৃষ্টি পরিবর্তন করতে। তাই স্কুলে, রাস্তায়, কর্মক্ষেত্রে তাদের নানা রকম হয়রানির শিকার হতে হয়। অথচ একটু সহযোগিতা করলে তারা আরও সহজভাবে উের যেতে পারেন সকল বাধা, দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারেন।
তাদের মূলধারায় যুক্ত করতে সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণের উপর জোর দেন সংশ্লিষ্ট বিষয় বিজ্ঞজন। প্রতিবন্ধীদের সমাজে সংসারে বোঝা না করে স্বাভাবিক জীবনে অন্তর্ভুক্ত করতে বেশ কিছু কাজ হলেও অনেক কাজ বাকি আছে। আর সরকার ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা যৌথভাবে এ কাজকে এগিয়ে নিয়ে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে পারবে বলে মত দেন তারা। গতকাল দি ডেইলি স্টার ভবনে অনুষ্ঠিত ‘অটিস্টিক, বুদ্ধি ও বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তির শিক্ষা মানবাধিকার, লিঙ্গ-বৈষম্য, সুশাসন ও উন্নয়ন’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এ মতপ্রকাশ করেন তারা।
সোসাইটি ফর এডুকেশন অফ দি ডিসএবল্ড (সীড), বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশন, স্টেপস টুওয়ার্ডস ডেভেলপমেন্ট এবং ডিসএবিলিটি রাইটস ফান্ড যৌথভাবে এ আলোচনার আয়োজন করে। স্টেপস টুওয়ার্ডস ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক রঞ্জন কর্মকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয় প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, বিশেষ অতিথি ছিলেন সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব তারিক-উল ইসলাম।
সীডের নির্বাহী পরিচালক দিলারা সাত্তার মিথুর সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন টেক্স বুক বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক হান্নানা বেগম, বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি ডা. নাফিজ আহমেদ, জাতীয় তৃণমূল প্রতিবন্ধী সংস্থার মোঃ আবুল হাই মন্ডল, প্রতিবন্ধী নারী উন্নয়ন সংস্থার শিরিন আক্তার, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) এর নাজ চৌধুরী, একশনএইড-এর নূরুল নবী, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী শিলামনি, পায়েল, সাজিদ প্রমুখ।
আলোচনার শুরুতে প্রতিবন্ধী শিশুদের পড়াশোনা, পরিবার ও কর্মক্ষেত্রে, বৈষম্য নিয়ে এটি প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়।
মেহের আফরোজ চুমকি প্রতিবন্ধীদের প্রতি বর্তমান সরকারের কার্যক্রম তুলে ধরে বলেন, প্রতিবন্ধীদের ভাগ্য উন্নয়নে এই সরকারই প্রতিবন্ধী সুরক্ষা আইন করে। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করে বলেন জাতিসংঘ তার কার্যক্রমকে প্রশংসা করেছে। প্রতিবন্ধীরা সমাজের সকল ক্ষেত্রে অংশ গ্রহণ করতে পারবে। তবে রাতারাতি তা হবে না। তিনি মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় হতে প্রতিবন্ধীবান্ধব টয়লেটের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা গ্রহণ করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী প্রতিবন্ধী শিশুদের খেলার জন্য সংসদ ভবনের নিকট মাঠ বরাদ্দের কথা জানান।
তারিক-উল ইসলাম সরকারি জরিপে দেশে ১৮ লাখ প্রতিবন্ধীর কথা উল্লেখ করে বলেন, যারা বাদ পড়েছেন তাদেরও সংযুক্ত করে তাদের উন্নয়নে কাজ করা হবে। সকল মন্ত্রণালয়ের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তাদের মূল ধারায় যুক্ত করা হবে। বক্তারা পাঠ্যসূচিতে প্রতিবন্ধীদের বিষয় অন্তর্ভুক্তকরণ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য দূরিকরণে আইনের কঠোর বাস্তবায়নের উপর জোর দেন।