মালয়েশিয়া প্রতি মাসে স্বল্প প্রশিক্ষিত ৫০ হাজার বাংলাদেশি কর্মী চায়

মালয়েশিয়া যেতে কেউ টাকা দেবেন না : প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী

বিজনেস টু বিজনেস (বি টু বি) বা বেসরকারিভাবে বাংলাদেশ থেকে বিপুলসংখ্যক কর্মী নেবে মালয়েশিয়া। স্বল্প প্রশিক্ষণে প্রতিমাসে ৫০ হাজার কর্মী পাঠাতে বাংলাদেশ সক্ষম কিনা তা জানতে চেয়েছে ঢাকা সফররত মালয়েশিয়ার কারিগরি প্রতিনিধি দল। জবাবে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সরকারি ডাটাবেজে ১৪ লাখ কর্মীর তালিকা রয়েছে। এ ছাড়া দেশের ৭১টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। এসব কেন্দ্র থেকে ১৫ দিনে ৩০ হাজার কর্মী প্রশিক্ষণ দিয়ে মালয়েশিয়ায় পাঠানো সম্ভব। জনশক্তি রফতানি ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এদিকে মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য কারো সঙ্গে কোনো ধরনের লেনদেন না করার পরামর্শ দিয়েছেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি। তিনি বলেছেন, কোনো কিছুই এখনো ঠিক হয়নি। কাজেই কেউ যেন কাউকে কোনো টাকা না দেন। গতকাল মঙ্গলবার মালয়েশিয়া থেকে সেদেশের সরকারি প্রতিনিধিদলের সাথে বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন । মালয়েশিয়ায় নতুন করে লোক নেয়ার ব্যাপারে প্রভাবশালী মহল সক্রিয় এবং তারা আবার নানা দেনদরবার করছেন এমন অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, নোবডি ক্যান বাই মি। তিনি বলেন, আমি চাই না বাংলাদেশের লোকজন ওখানে গিয়ে পড়ে থাকবে। সে কারণে যথাযথ প্রশিক্ষণ দিয়ে লোক পাঠানো হবে।

অপরদিকে গত সোমবার দুপুরে রাজধানীর ইস্কাটনে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে জনশক্তি রফতানি ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) কনফারেন্স রুমে ঢাকায় সফররত মালয়েশিয়ার কারিগরি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বিএমইটির কারিগরি প্রতিনিধি দলের দীর্ঘ আড়াই ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে বিএমইটির মহাপরিচালক বেগম শামসুন নাহার ও মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশনের মহাপরিচালক (ডিজি) মুস্তফা বিন ইব্রাহিমের নেতৃত্বে ৪ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেয়।

সদ্য বিদায়ী প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল গত জুন মাসের শুরুতে মালয়েশিয়া সফরে যায়। ঐ সফরে মালয়েশিয়ার তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (বর্তমান উপ-প্রধানমন্ত্রী) আহমেদ জাহিদ হামিদীর সঙ্গে বৈঠক হয়। এরপর প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে গণমাধ্যমকে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়, সরকারিভাবে (জি টু জি) মালয়েশিয়ায় কর্মী নেয়ার পাশাপাশি দেশটি বেসরকারিভাবে (বিজনেস টু বিজনেস/বি টু বি) বছরে ৫ লাখ কর্মী নেবে। আগামী তিন বছরে তারা বাংলাদেশ থেকে ১৫ লাখ কর্মী নিতে (সমঝোতা) স্মারক সই করবে। এর আগে মালয়েশিয়ার কারিগরি একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করবে। এরই অংশ হিসেবে মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশনের মহাপরিচালক (ডিজি) মুস্তফা বিন ইব্রাহিমের নেতৃত্বে ৪ সদস্যের প্রতিনিধি দল রোববার দুপুরে ঢাকা সফরে এসেছেন। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব খন্দকার ইফতেখার হায়দার এই তথ্য জানিয়েছেন।

সফররত মালয়েশিয়ার কারিগরি প্রতিনিধি দল রোববার সকাল সোয়া ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে দীর্ঘ বৈঠক করে। বৈঠকে উভয় দেশের প্রতিনিধি দলের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে বিপুলসংখ্যক কর্মী পাঠানোর কারিগরি নানা প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়। বিএমইটির সঙ্গে বৈঠক শেষে সফররত মালয়েশিয়ার প্রতিনিধি দলটি রাজধানীর দারুস সালামে অবস্থিত ‘বাংলাদেশ কোরিয়া কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ পরিদর্শনে যান।

প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটির অধ্যক্ষ প্রকৌশলী ড. সাখাওয়াত আলী বলেন, মালয়েশিয়ার প্রতিনিধি দল আমাদের প্রশিক্ষণের ধরন ও পাঠদান পদ্ধতি সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করেছে। দেশের ৭১টি প্রশিক্ষণ সেন্টারে মালয়েশিয়ান ভাষা শিক্ষার প্রশিক্ষক আছেন কিনা তা জানতে চায়। আমাদের মালয়েশিয়া ভাষা শিক্ষার কারিকুলাম তারা নিয়েছেন। রড বাইন্ডিং, টাইলস ফিটিংস, রাজমিস্ত্রি ও ইট বিছানোসহ নির্মাণ খাতে প্রশিক্ষণ দেয়া হয় কিনা তাও জানতে চেয়েছেন।

সাখাওয়াত আলী বলেন, তাদের প্রশ্নের জবাবে বলেছি, নির্মাণ খাতে প্রশিক্ষণের সক্ষমতা বাংলাদেশের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোর আছে। সামগ্রিকভাবে তারা আমাদের (প্রশিক্ষণ কেন্দ্র) কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

বিএমইটির মহাপরিচালক (ডিজি) বেগম শামসুন নাহার বলেন, প্রতিনিধি দল বলেছে যে, তারা যদি এক সাথে ৫০ হাজার লোক চায় তাহলে আমরা এ পরিমাণ লোক প্রশিক্ষণ দিয়ে পাঠাতে পারব কিনা। আমি বলেছি, আমাদের ৭১টি ট্রেনিং সেন্টার আছে। প্রতিটি সেন্টার থেকে আড়াইশ জন করে ১০ দিনের ট্রেনিং দিলে ১৫ হাজার দিতে পারব। প্রয়োজনে বিকেলে আরেকটা শিফট করব। তাতে আরও ১৫ হাজার হবে। সবমিলিয়ে ১৫ দিনেই ৩০ হাজার কর্মী দিতে পারব। তারা যদি বছরে ৫ লাখও নেয় তাহলে ডিমান্ড পূরণ করতে পারব। আমাদের সবকিছু দেখে এবং শুনে তারা হ্যাপি। বায়োমেট্রিক, ফিঙ্গার প্রিন্ট, ছবি জি টু জির মাধ্যমে আমরা যে দেই তাতেই তারা সন্তুষ্ট।

তিনি বলেন, জি টু জিতে মালয়েশিয়ায় লোক পাঠাতে ৩২ হাজার টাকা লাগছে। বি টু বি- তে সর্বোচ্চ ৬৫ হাজার টাকার উপরে যাতে না লাগে সেটা নিশ্চিত করা হবে। এই অতিরিক্ত টাকা ওরা (রিক্রুটিং এজেন্সি) যাতে এদিক-ওদিক (বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া) খরচ করতে পারে, কিন্তু এর বেশি না।

এজেন্সিগুলো যদি এর বেশি নেয় তাহলে কী হবে জানতে চাইলে বিএমইটির ডিজি বলেন, পুরো প্রক্রিয়াটা আমরা উভয় দেশের পক্ষ থেকে মনিটরিং করব।