যমুনা ব্রহ্মপুত্রের তীর রক্ষায় ৪৮শ কোটি টাকা দেবে বিশ্বব্যাংক

যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর তীর রক্ষায় বিশ্বব্যাংক চার হাজার ৮শ’ কোটি টাকা সহায়তা দেবে। এ কার্যক্রম বাস্তবায়নের মাধ্যমে ৫০ হাজার মানুষকে বন্যার ভয়াবহতা ও নদী ভাঙন থেকে রক্ষা করা হবে। এ প্রকল্পে মোট ব্যয় হচ্ছে পাঁচ হাজার ২শ’ কোটি টাকা। প্রকল্প প্রস্তাবটি সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এ নিয়ে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভা করেছে কমিশন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন হবে ৪শ’ কোটি টাকা। বাকি টাকা বিশ্বব্যাংক (আইডিএ) সহজশর্তের ঋণ দেবে। রিভার ম্যানেজমেন্ট ইম্পুভমেন্ট’ শীর্ষক নামের এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে পাউবো।
পাউবো সূত্র জানায়, প্রকল্পের কাজ তিন ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে। প্রথম ধাপে- ব্রহ্মপুত্র নদীর ডান তীরে ও যমুনা সেতু হতে ১৭ কিলোমিটার দূরে ৫০ কিলোমিটারব্যাপী নদী রক্ষা বাঁধের উন্নয়ন (সিরাজগঞ্জের সিমলা হতে বগুড়ার হাসনাপাড়া পর্যন্ত) করা হবে। উন্নয়ন কার্যক্রমের মধ্যে যমুনা নদীর ডান ৫০ কিলোমিটার সার্ভিস রোড পুনর্নির্মাণ, যমুনা নদীর ডান তীরে নদী শাসনের লক্ষ্যে সার্ভিস রোডসহ ৩৬ দশমিক ৫৬ কিলোমিটার প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ এবং ক্ষতিগ্রস্ত জনগণকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ১৫টি রি-সেটেলমেন্ট ভিলেজ (গুচ্ছগ্রাম) প্রতিষ্ঠা করা হবে।
দ্বিতীয় ধাপে- যমুনা ব্রিজ হতে সিরাজগঞ্জের সিমলা পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটার ও বগুড়ার হাসনাপাড়া থেকে তিস্তা আউটফল পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার বাঁধ পুনর্নির্মাণ করা হবে। তৃতীয় ধাপে- বাঁধের ভেতরের অংশ বরাবর ১৩৭ কিলোমিটার চার লেন বিশিষ্ট রাস্তা নির্মাণ করা হবে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় কম্পোনেন্ট (অঙ্গ) হিসেবে পরামর্শক সেবায় ৭৬৫ কোটি টাকা, ভূমি অধিগ্রহণে ৪৪১ কোটি টাকা, বাঁধ নির্মাণে এক হাজার ৫৪১ কোটি টাকা, নদীর তীর সংরক্ষণে এক হাজার ৯৫৮ কোটি টাকা, গুচ্ছগ্রাম নির্মাণে ১৪৩ কোটি টাকা এবং ৩২টি যানবাহন ক্রয় ও মেরামত বাবদ ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ব ব্যাংকে আইডিএ ঋণের বিপরীতে বার্ষিক শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ প্রদান করতে হয়। এ ঋণের অর্থ ছয় বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৩৮ বছরে পরিশোধের সুযোগ থাকছে। বর্তমানে বিশ্বব্যাংকের ঋণের ওপর কোনো কমিটমেন্ট চার্জ নেই। শিগগিরই প্রকল্পের বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন প্রক্রিয়াও শুরু হবে।
এ প্রসঙ্গে ইআরডির বিশ্বব্যাংক উইংয়ের প্রধান অতিরিক্ত সচিব কাজী শফিকুল আযম যুগান্তরকে বলেন, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে যে প্রকল্পগুলো পাইপলাইনে রয়েছে এটি তার মধ্যে অন্যতম। আগামী ১২ আগস্ট বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে এ সংক্রান্ত নেগুসিয়েশন সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে।
জানা গেছে, পিইসি সভায় এই প্রকল্পের ব্যয় ও কম্পোনেন্ট নিয়ে বেশ কয়েকটি পরামর্শ দেয়া হয়। এর মধ্যে প্রকল্পের আওতায় প্রতি কিলোমিটার নদী তীর সংরক্ষণ বাবদ বরাদ্দ অত্যাধিক বেশি বলে মনে করে কমিশন। এছাড়া পরামর্শ সেবা বাবদ বরাদ্দে অর্থ হ্রাস করে বৈদেশিক সহায়তা থেকে ব্যয় করা ও প্রকল্পের আওতায় বাঁধ নির্মাণ, পুনর্নির্মাণ ও পুনর্বাসন সেল বিষয়টি পাউবোর পক্ষ থেকে স্পষ্টকরণের কথা বলা হয়েছে।